অ্যাপ শিল্প গড়ে তুলতে চাই পরিচর্যা

অ্যাপ নিয়ে অায়োজিত আড্ডায় অংশ নেওয়া তরুণেরা l ছবি: খালেদ সরকার
অ্যাপ নিয়ে অায়োজিত আড্ডায় অংশ নেওয়া তরুণেরা l ছবি: খালেদ সরকার
এথিকস অ্যাডভান্সড টেকনোলজি লিমিটেড (ইএটিএল) এবং প্রথম আলো আয়োজন করছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার প্রতিযোগিতা। এবারের আয়োজন চতুর্থবারের মতো। গত বছর শুরু হওয়া ‘ইএটিএল-প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা ২০১৬’ এখন শেষ পর্যায়ে। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে হবে চূড়ান্ত অনুষ্ঠান। কোন অ্যাপ, কোন দল বিজয়ী হচ্ছে তা জানা যাবে এই অনুষ্ঠানে। চূড়ান্ত পর্বে রয়েছে ১৫টি অ্যাপ। শীর্ষ ১৫-তে থাকা দলগুলোর প্রতিনিধি এবং গত বছরের দুই বিজয়ীকে নিয়ে ১৩ মে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছিল এক আড্ডার। প্রজন্ম ডটকমের সঙ্গে এই আড্ডার কথামালায় উঠে এসেছে অ্যাপ নিয়ে তরুণ প্রজন্মের কথা, প্রতিযোগিতার নানা দিক ইত্যাদি

প্রজন্ম ডটকম: মোবাইল ফোনের অ্যাপ তৈরির এই প্রতিযোগিতায় নিয়মিত আয়োজনগুলোর বাইরে আর কী কী করা উচিত? গত বছরের বিজয়ীদের কেউ বলুন।

মোহসি মাসনাদ: প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পরও আয়োজক কর্তৃপক্ষ বিজয়ী দলগুলোকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারে। তাঁদের অ্যাপের কর্মপরিকল্পনা থেকে শুরু করে অ্যাপের হালনাগাদ কিংবা ব্যবসা কেমন হবে, তা ঠিক করে দিলে দলগুলো উপকৃত হবে।

প্রজন্ম ডটকম: রাজেশ পালিত প্রতিবছরই প্রতিযোগিতার বিচার প্রক্রিয়ার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আপনি বলুন, এবারের প্রতিযোগিতায় জমা পড়া ও তৈরি হওয়া অ্যাপগুলোর মান কেমন?

রাজেশ পালিত: এবারের অ্যাপগুলো অন্যান্যবারের তুলনায় অনেক গোছানো। আগে ধারণা ভালো কিন্তু অ্যাপ তৈরিতে দুর্বলতা দেখা যেত। এবার অনেক দল ভালো ধারণা যেমন জমা দিয়েছে, তেমনি কিছু কিছু দলের অ্যাপ উন্নয়নও বেশ ভালো ছিল। কোনো অ্যাপ প্লে স্টোরে ছাড়ার আগে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত, যা আমাদের দেশে তুলনামূলক কম হয়। এর ফলে অ্যাপে কোনো ধরনের ত্রুটি থাকলে তা ধরা পড়ে। অন্যথায় প্রকাশের পর অ্যাপ ব্যবহারে ব্যবহারকারীদের কোনো সমস্যা হলে নেতিবাচক ধারণা জন্মে।

প্রজন্ম ডটকম: গত বছর প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল রিকশা রেসিং। এটা এখন কোন অবস্থায় রয়েছে?

অনিরুদ্ধ পৃথুল: এই প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত জমা পড়া সমস্ত অ্যাপের মধ্যে রিকশা রেসিং গেমটি বেশিবার নামানো হয়েছে। রেটিংও ভালো ৪.২। আমরা এর মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রজন্ম ডটকম: প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কি কোনো উপকার হয়েছে?

বনি ইউসুফ: গ্রুমিং পর্বে আমাদের আরও পরিণত করতে চেষ্টা করেছে ইএটিএল। এই ধাপে উৎসাহব্যঞ্জক আলোচনা ছিল, যা কাজে দেবে। তবে প্রতিযোগিতায় শুধুই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টমকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

রাশিদ আল শাফি: মূলত আমরা এখন শেখার পর্যায়ে আছি। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় শিখতে শিখতে একসময় নিজেরা পরিণত হব এবং জেদ তৈরি হবে। তখন আমরা সফল হব।

জান্নাতুল ফেরদৌস: শিখতে পেরেছি এই প্রতিযোগিতায়।

প্রজন্ম ডটকম: এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নতুন কী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন?

মো. জসিম উদ্দিন: কোনো কাজের পেছনে যে দীর্ঘদিন লেগে থাকা দরকার তা বুঝেছি। প্রতিযোগিতার প্রতিটি পর্বেই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। আমাদের ধারণা, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এই অ্যাপের পেছনে যেভাবে লেগে আছি, তাতে সফল কিছু করা সম্ভব।

প্রজন্ম ডটকম: একটা সফল অ্যাপের জন্য কী কী করতে হবে?

বিপ্লব চন্দ্র নাগ: প্রথমত অ্যাপের ধারণাটা খুব জরুরি। এরপর একটি অ্যাপ নির্মাণের যত ধাপ আছে, তা পরিপূর্ণভাবে করতে হবে। কোনো একটি ধাপেও হেলাফেলা করা যাবে না। মোদ্দা কথা, সফল অ্যাপের জন্য দলীয় প্রচেষ্টা খুব জরুরি। একক প্রচেষ্টায় সফল হওয়া সম্ভব নয়। কারণ যিনি ধারণা দিয়েছেন, তিনি একা একা তো অ্যাপ বানাতে পারবেন না। কেউ প্রোগ্রামিংয়ে ভালো, কেউ গ্রাফিকসে, কেউ আবার বিপণনে। প্রতিটি বিষয়ের দক্ষ লোক নিয়ে দল গঠন করা উচিত। তাই দলীয় প্রচেষ্টাটা এখানে মুখ্য।

রাইয়াদ রাদ: দলীয় প্রচেষ্টাতেই সফল অ্যাপ বানানো সম্ভব।

মোহসি মাসনাদ: সফল অ্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে ভালো ধারণা যেমন প্রয়োজন, অ্যাপের গ্রাফিকসও তেমন ভালো হতে হবে।

প্রজন্ম ডটকম: কোন ধরনের অ্যাপ বেশি সফলতা পাবে?

নসরুল করিম সরকার: একটি অ্যাপ যখন প্লে স্টোরে ছাড়া হয়, তখন এটি বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করে। তাই অ্যাপটির বৈশিষ্ট্যও বৈশ্বিক পর্যায়ের হতে হবে।

পার্থ চক্রবর্তী: নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ই মুখ্য নয় যে ওই বিষয় নিয়েই অ্যাপ বানাতে হবে। মানুষের কী প্রয়োজন, কী সমস্যা আছে তা খুঁজে বের করে অ্যাপের মাধ্যমে সমাধান দিলে সফল হওয়া সম্ভব।

প্রজন্ম ডটকম: আয় ছাড়াও কোনো অ্যাপ জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সফল হতে পারে। এ বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখেন?

অমর দেবনাথ: মানুষের আগ্রহ ও প্রয়োজনীয়তার ওপর নির্ভর করে অ্যাপ বানালে সেটি জনপ্রিয় হতে পারে। এতে অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে। প্রয়োজন মিটছে ব্যবহারকারীদের। নির্মাতাদের জন্য এটি ভালো লাগার। তবে জনপ্রিয়তা বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে আয়ও তো বাড়বে।

বনি ইউসুফ: গেমের ক্ষেত্রে এমন কোনো গেমিং অ্যাপ বানাতে হবে, যেটি খেলতে সবার আগ্রহ থাকে এবং সেটি অবশ্য সব বয়সীদের জন্য হতে হবে।

প্রজন্ম ডটকম: এখনো দেশে গেম নির্মাণ শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠেনি। কেন?

অনিরুদ্ধ পৃথুল: অন্যান্য দেশের গেমিং খাতের বয়স আমাদের তুলনায় বেশি। এ ছাড়া আমাদের এখানে দক্ষ লোকবলও কম। ভবিষ্যতে এই খাত গড়ে উঠবে।

বনি ইউসুফ: খুব বেশি দিন হয়নি আমাদের এখানে গেম বানানো হচ্ছে, তাই।

বিপ্লব চন্দ্র নাগ: অন্যরা আমাদের অনেক আগে শুরু করেছে। আমাদের এখানেও সফল হবে সময় পেলে।

প্রজন্ম ডটকম: মোবাইল অ্যাপ শিল্প হিসেবে কতটা সম্ভাবনাময়?

নুর মোহাম্মদ: ল্যাপটপ কম্পিউটারের তুলনায় মোবাইল ফোন সহজে বহনযোগ্য। আর সব সময় ল্যাপটপ ব্যবহার করা সম্ভবও নয়। এ ছাড়া দিনে দিনে মোবাইল ব্যবহারকারী বাড়ছে। তাই মোবাইল অ্যাপ সম্ভাবনাময়। তবে এর জন্য প্রয়োজন কার্যকর পরিচর্যা।

মোহসি মাসনাদ: মোবাইল যেহেতু সহজেই বহনযোগ্য, তাই মোবাইল অ্যাপের ভবিষ্যৎ ভালো।

প্রজন্ম ডটকম: আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

অংশ নিয়েছেন যাঁরা

অনিরুদ্ধ পৃথুল

ইএটিএল-প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা ২০১৫-এর চ্যাম্পিয়ন রিকশা রেসিং অ্যাপ নির্মাতা দলের সদস্য।

মোহসি মাসনাদ

ইএটিএল-প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা ২০১৫-এর তৃতীয় স্থান অর্জনকারী এক্সপ্লোরিং বাংলাদেশ অ্যাপ নির্মাতা দলের সদস্য।

এবারের প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বের অ্যাপ নির্মাতা দলের সদস্য—

বনি ইউসুফ, গেরিলা ব্রাদার্স অ্যাপ,

রাশিদ আল শাফি, আইসিটি টিউটর,

জান্নাতুল ফেরদৌস, শব্দমেলা,

মো. জসিম উদ্দিন, পতে পড়া, খতে খেলা,

বিপ্লব চন্দ্র নাগ, মুসাফির,

রাইয়াদ রাদ, হেলথ মাস্টার,

নসরুল করিম সরকার, খামার,

পার্থ চক্রবর্তী, স্বাস্থ্যকথন

অমর দেবনাথ, অ্যাওয়াকেন্ড

নুর মোহাম্মদ, হ্যালোপ্যাথি

এবং

রাজেশ পালিত

সমন্বয়ক, বিচারকমণ্ডলী ইএটিএল-প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা ২০১৬

সঞ্চালনা: পল্লব মোহাইমেন, উপফিচার সম্পাদক, প্রথম আলো

গ্রন্থনা: এস এম নজিবুল্লাহ চৌধুরী