স্বচ্ছ মহাকাশের সন্ধান, বিজ্ঞানী দলে বাংলাদেশি

গবেষক দলের সদস্য পিটার ভ্যান ডোকাম, অ্যালিসন মেরিট, জিয়েই ঝ্যাং, দেবোরাহ লোখর্স্ট, লামিয়া আশরাফ মওলা (নিচে বাঁয়ে), শ্যানি ডেনিয়েলি ও রবার্তো আব্রাহাম।  ছবি: সংগৃহীত
গবেষক দলের সদস্য পিটার ভ্যান ডোকাম, অ্যালিসন মেরিট, জিয়েই ঝ্যাং, দেবোরাহ লোখর্স্ট, লামিয়া আশরাফ মওলা (নিচে বাঁয়ে), শ্যানি ডেনিয়েলি ও রবার্তো আব্রাহাম। ছবি: সংগৃহীত

ফুল বা পুঁতি গেঁথে মালা হয়। এ ক্ষেত্রে সুতাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ছায়াপথের ক্ষেত্রে ডার্ক ম্যাটার বা কৃষ্ণ বস্তু তেমনই একটি উপাদান। বিজ্ঞানীদের এত দিনের ধারণা যেন বড় ধাক্কা খেল এবার। একদল মহাকাশবিজ্ঞানী বলছেন, তাঁরা কৃষ্ণ বস্তুহীন বা স্বচ্ছ মহাকাশের সন্ধান পেয়েছেন। এই বিজ্ঞানী দলের একজন সদস্য বাংলাদেশের লামিয়া আশরাফ মওলা।

হাজার-কোটি নক্ষত্রসহ নানা মহাকাশীয় বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি ছায়াপথ। আমাদের সূর্য যে ছায়াপথের সদস্য, তার নাম মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা। এমন আরও অনেক ছায়াপথের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সব কটি ছায়াপথেরই একটি সাধারণ উপাদান কৃষ্ণ বস্তু। এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ছায়াপথ সৃষ্টিতে কৃষ্ণ বস্তুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। আজ পর্যন্ত এই উপাদান বিজ্ঞানীদের চোখে ধরা পড়েনি। অদৃশ্য বলেই তার নাম কৃষ্ণ বস্তু।

আকাশগঙ্গার মতো ছায়াপথগুলোয় সাধারণ মহাকাশীয় বস্তুর চেয়ে কৃষ্ণ বস্তুর পরিমাণ প্রায় ৩০ গুণ বেশি থাকে। অথচ ‘এনজিসি ১০৫২-ডিএফ২’ বা সংক্ষেপে ‘ডিএফ২’ নামের নতুন ছায়াপথে ৪০০ ভাগের ১ ভাগ কৃষ্ণ বস্তু রয়েছে। এতে নক্ষত্রের সংখ্যাও কম। সাধারণ ছায়াপথে নক্ষত্রের সংখ্যার তুলনায় তা ২০০ ভাগের ১ ভাগ। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার গত বুধবার এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। এই গবেষক দলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জার্মানির কয়েকজন বিজ্ঞানী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে লামিয়া মওলা যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের নিউহ্যাভেনে অবস্থিত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী। গবেষণা নিবন্ধটির মূল লেখক ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ভ্যান ডোকামের অধীনেই তিনি পিএইচডি করছেন।

ঢাকার মেয়ে লামিয়া বাংলাদেশে এ-লেভেল পর্যন্ত পড়েছেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলেসলি কলেজে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট করেন। তিনি ই-মেইলে প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাপক পিটার ভ্যান ডোকাম ও কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্তো আব্রাহাম ড্রাগনফ্লাই নামে একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেছেন, যা মহাকাশের কম উজ্জ্বল বস্তুও শনাক্ত করতে সক্ষম। এই গবেষক দলে লামিয়া যোগ দেন ২০১৫ সালে।

লামিয়া জানান, পিটার ভ্যান ডোকামের দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তাঁরা আলট্রা-ডিফিউসিভ বা অতি-সম্প্রসারিত তবে কম উজ্জ্বল ছায়াপথগুলো (ইউডিজি) পর্যবেক্ষণ করছিলেন। ডিএফ ২ ছায়াপথ ওই সময় প্রথম তাঁদের চোখে ধরা দেয়।

পিটার ভ্যান ডোকাম জানিয়েছেন, সাধারণত ইউডিজিগুলোর আকার আকাশগঙ্গার মতো হলেও তাতে নক্ষত্রের পরিমাণ এত কম থাকে যে, চোখে পড়ে না বললেই চলে। এগুলো নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ২০১৫ সালে মহাকাশে ‘ভুতুড়ে উজ্জ্বলতার’ সন্ধান পান তাঁরা। এই উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়ছে ডিএফ ২ থেকে। এই ছায়াপথের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এর নক্ষত্রগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না থেকে জোট বেঁধে আবর্তিত হচ্ছে। নক্ষত্রের ওই জোটগুলোই পুরো ছায়াপথের ভর বহন করছে। অর্থাৎ সেখানে কৃষ্ণ বস্তুর ঠাঁই নেই বললেই চলে। আমাদের থেকে ৬ কোটি ৫০ লাখ আলোকবর্ষ দূরে ছায়াপথটির অবস্থান।