ফেসবুকে আরেক ধাক্কা, সরে যাচ্ছেন হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিষ্ঠাতা

হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যান কউম।
হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যান কউম।

ফেসবুকের সঙ্গে ঝামেলা বেধেছে হোয়াটসঅ্যাপের। তালে তাল মিলছে না। তাই এবার ভাঙনের সুর। নিজের প্রতিষ্ঠিত জনপ্রিয় মেসেজিং সেবা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যান কউম।

জ্যান কউম ও ব্রায়ান অ্যাক্টন ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

জ্যান কউম ফেসবুকের এক পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রযুক্তির বাইরে আমি যেসব কাজ করতে উপভোগ করি, তার জন্য কিছুটা সময় দিতে যাচ্ছি।’

গতকাল সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, হোয়াটসঅ্যাপের পরিকল্পনা ফেসবুকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কউম তা মেনে নিতে পারছিলেন না। হোয়াটসঅ্যাপ এখন ফেসবুকের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

কউম অভিযোগ করেন, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকে নেওয়া হচ্ছে এবং হোয়াটসঅ্যাপের এনক্রিপশনের মান দুর্বল করে ফেলা হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে কউম বলেন, প্রায় এক দশক আগে ব্রায়ানের সঙ্গে মিলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেরা কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ছিল তাদের এ যাত্রা। এখান থেকে তাঁর সরে যাওয়ার উপযুক্ত সময় এখন।

কউম বলেন, ‘আগের চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপ টিম এখন অনেক শক্তিশালী এবং এটি দারুণ কাজ করে যাবে। তবে আমি হোয়াটসঅ্যাপের বাইরে থেকে এর জন্য শুভকামনা করে যাব।’

স্ট্যানফোর্ডের অ্যালুমনাই ব্রায়ান অ্যাক্টন ও ইউক্রেনের অভিবাসী কউম ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিষ্ঠা করে ২০১৪ সালে তা ১ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারে ফেসবুকের কাছে বিক্রি করেন। হোয়াটসঅ্যাপ তৈরির আগে ইয়াহুতে কাজ করেন ব্রায়ান অ্যাক্টন ও জ্যান কউম।

এত দিন হোয়াটসঅ্যাপের হয়ে তথ্য সুরক্ষা ও কাজের স্বাধীনতা ফেসবুকের কাছ থেকে পাচ্ছিলেন তাঁরা। ফেসবুকের কাছে বিক্রি হওয়ার আগে তথ্য সুরক্ষার শর্তও জুড়ে দিয়েছিলেন।

গত নভেম্বর মাসে অ্যাক্টন হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে যান এবং এরপর থেকে ফেসবুকের নানা সমালোচনা করে থাকেন। গত মার্চ মাসে তিনি হ্যাশট্যাগ ডিলিটফেসবুক নামের একটি কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। ফেসবুক থেকে ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁসের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর তিনি ওই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওই কর্মসূচি শুরু করেন, যা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ওই সময় থেকেই ফেসবুক স্বীকার করে যে তাদের ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে, যা নির্বাচনী প্রচারে কাজে লাগানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।

হোয়াটসঅ্যাপকে বাণিজ্যিকীকরণের বিপক্ষে ছিলেন কউম ও অ্যাক্টন। অবশ্য হোয়াটসঅ্যাপে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় না।

কউমের সরে দাঁড়ানোর ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। কউমের পোস্টে মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, এনক্রিপশন নিয়ে কউম তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন, তার জন্য তিনি (জাকারবার্গ) কৃতজ্ঞ। কেন্দ্রীয় সিস্টেমের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে সাধারণ মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা দেখিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে এ নীতি বজায় থাকবে।

বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫০ কোটির বেশি। বিশ্বের বৃহত্তম মেসেজিং সেবা এটি।