বাজেটে বিদেশি সফটওয়্যার আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব

২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক ৫৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে দেশি সফটওয়্যার শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সফটওয়্যার খাতের ব্যবসায়ীরা। এর ফলে দেশি সফটওয়্যারের ব্যবহার কমে যাবে, এমন কি ছোট ছোট সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে তো বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে সবাই উৎসাহিত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশি সফটওয়্যার। দেশি সফটওয়্যার শিল্পের স্বার্থে বিদেশি সফটওয়্যার আমদানি শুল্ক আগের মতোই রাখা ভালো।’

বিভিন্ন দেশের সফটওয়্যার সহজে এলে দেশি সফটওয়্যার শিল্প যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি ক্রেতা পরবর্তী সেবাও পাবেন না বলে মনে করেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান। তিনি বলেন, দেশে যে ধরনের সফটওয়্যার তৈরি হয়, সেরকম সফটওয়্যার বিদেশ থেকে আনার ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক নূন্যতম ৫৮ শতাংশই রাখতে হবে। শুল্ক ও মূসক রাখতে হবে দেশি তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের স্বার্থেই।

এশিয়া-ওশেনিয়া অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং অর্গানাইজেশনের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ এইচ কাফি আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি নিজেদের দেশীয় শিল্পের ব্র্যান্ডিং না করি, তবে এটি কখনোই দাঁড়াতে পারবে না। মুখে মুখে দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করার কথা বলব, অথচ বিদেশি পণ্য ব্যবহারে উৎসাহ দেব—এটা হতে পারে না। বিদেশি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হলে দেশি সফটওয়্যারকে বাঁচানো যাবে না।’

সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ডেটাসফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বেসিসের সাবেক সভাপতি মাহবুব জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, সেখানে এই ধরনের প্রস্তাব খুবই দুঃখজনক। দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এই ধরনের প্রস্তাব কীভাবে দেওয়া হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা এরই মধ্যে আইসিটি বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। বিদেশি সফটওয়্যার আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ৫৮ শতাংশের চেয়ে আরও বেশি বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।’

সফটওয়্যার নির্মাতারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যবহারের জন্য সব ধরনের সফটওয়্যার তৈরির সক্ষমতা এখন দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে। ব্যাংকিং, হিসাবরক্ষণ, ইআরপি, সিআরএম, পিওএস ইত্যাদি সফটওয়্যার দেশেই তৈরি হচ্ছে। তাই বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন।

সফটওয়্যার তৈরির ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, আমদানি শুল্ক কম থাকলে হিসাবরক্ষণের মতো ছোট ছোট সফটওয়্যারও বাইরে থেকে আসবে। অভো টেকনোলেজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমরা যারা ছোট ছোট সফটওয়্যার তৈরি করি, তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’