'বন্ধুকে বোঝাতে হয় না, যাঁরা বন্ধু নন তাঁরাই ঝামেলা পাকান'

আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা
আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা

আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা সুবক্তা। বিভিন্ন উদ্যোক্তা সম্মেলনে তাঁর কথায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন বহু তরুণ। একেবারে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন তিনি। তাঁর জীবনদর্শনও ব্যতিক্রম। নিজের গড়া আলিবাবা থেকে সম্প্রতি সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তাঁর অবসরের গুঞ্জন ঘিরে তৈরি হওয়া রহস্যকে তিনি ‘সি গসিপ’ বলে উল্লেখ করেছেন। জ্যাক মা আসলে বলতে চেয়েছেন, অফিসে কাজের দায়িত্ব পালনে আবদ্ধ থেকে জীবনের শেষ দেখতে চান না তিনি। এর চেয়ে বরং সাগরতীরে মরে যাওয়াই ভালো বলে মনে করেন তিনি। এতে তাঁর মুক্ত–স্বাধীন থাকার ইচ্ছার প্রতিফলন দেখা যায়।

আলিবাবা থেকে তাঁর আকস্মিক সরে যাওয়া আর দার্শনিকসুলভ নানা উক্তিই অনেকের মনে সন্দেহ তৈরি করেছে। তবে কি সরকারি চাপে বা কোনো ক্ষোভ থেকেই সরে যাচ্ছেন জ্যাক মা?

১০ সেপ্টেম্বর ৫৪তম জন্মদিন ছিল জ্যাক মার। ওই দিন তিনি বললেন, এক বছরের মধ্যে ৪২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের আলিবাবার নির্বাহী চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বের জন্য পথ খুলে দেবেন। আলিবাবার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যানিয়েল ঝ্যাংকে উত্তরসূরি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আগামী বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন ঝ্যাং। ওই সময় প্রতিষ্ঠানে শুধু পরিচালক পদটি রাখবেন মা। তাঁর ওই অবসরের ঘোষণা ঘিরে চীনে নানা গুঞ্জন ছড়ায়। অনেকেই ধারণা করেন, চীনের ব্যবসার পরিবেশের কারণে তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীনে ব্যবসার পরিবেশ খারাপ হয়েছে। চীন সরকার ও রাষ্ট্রীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাইভেট কোম্পানিগুলোয় বেশ হস্তক্ষেপ করে। এ কারণেই সরে দাঁড়াতে চান জ্যাক মা। তবে জ্যাক মার বক্তব্য হলো, আলিবাবার অফিসে এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে করতে মরে যাওয়ার চেয়ে সমুদ্রসৈকতে জীবনের শেষ সময় কাটানো ভালো।

তবে চীনের তিয়ানজিন শহরে সামার দাভোস ফোরামে নিজের অবসর ঘিরে তৈরি হওয়া গুঞ্জন নিয়ে কথা বলেছেন জ্যাক মা। তাঁর ভাষ্য, ১৯ বছর ধরে আমাদের চারপাশে কত গুঞ্জন রটেছে। যাঁর ভবিষ্যতের স্বপ্ন রয়েছে, গুঞ্জন, আলোচনা, কঠোরতা, হতাশা তাঁর জীবনের অংশ।

মার ওই বক্তব্য নিয়ে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, জ্যাক মাকে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে বলে কেউ কেউ সন্দেহ করছেন। কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন, অন্য দেশে বিশাল সম্পদ গড়েছেন তিনি। তাই চীন ছেড়ে যাবেন জ্যাক মা।
তবে লোকে যা–ই বলুক না কেন, জ্যাক মা বলেছেন, গুঞ্জনকে তিনি গুরুত্ব দেন না। তাঁর ভাষ্য, ‘বন্ধুকে ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার হয় না। যাঁরা বন্ধু নন, তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা দিতে গেলে পরিস্থিতি খারাপ হয়।’

জ্যাক মা বলেন, ‘৫৪ বছর বয়সে এসে ইন্টারনেট ইন্ডাস্ট্রিতে আমি কিছুটা পুরোনো বা অচল হয়ে গেছি। তবে কিছু ক্ষেত্রে আমি এখনো তরুণ। আগামী ১৫–১৬ বছরে আমি আরও অনেক কিছু করতে পারি। আমি জানি ৫৫-৫৬ বা ৬০ বছরে কোনো কিছু ছেড়ে দেওয়া কঠিন। তবে যখন আপনি ভবিষ্যৎ বিষয়ে নিশ্চিত থাকবেন না, তখনই তা আঁকড়ে পড়ে থাকবেন।

নিজের অবসরটাকে প্রতিষ্ঠান ও নিজের জন্য পিছিয়ে আসা না বলে তিনি একধাপ এগিয়ে নেওয়ার কথাই বলেছেন।

একজন সাধারণ ইংরেজি শিক্ষক থেকে ৪২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে গিয়ে কখনো চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শাসক গোষ্ঠীর আঁচড় লাগতে দেননি। ১৯৯৯ সালে বিজনেস টু বিজনেস মার্কেটপ্লেস হিসেবে ১৭ জন সহপ্রতিষ্ঠাতা নিয়ে আলিবাবা প্রতিষ্ঠা করেন। নিজের হ্যাংঝোর অ্যাপার্টমেন্ট শুরু করা সেই উদ্যোগ আজ বৈশ্বিক ই-কমার্স জায়ান্ট হয়ে গেছে। এর বাইরে ক্লাউড কম্পিউটিং ও পণ্য পৌঁছে দেওয়ার সেবাও চালু করেছেন তিনি।

২০১৩ সালে আলিবাবার প্রধান নির্বাহীর পদ ছেড়ে দেন জ্যাক মা। এরপর নিজেকে দাতব্য কাজসহ নানা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করেন। বর্তমানে জ্যাক মার নিজস্ব সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৯০ কোটি মার্কিন ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৯তম শীর্ষ ধনী তিনি। ওই সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠাতা আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ১৬ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, রয়টার্স ও সিনহুয়া।