পক্ষাঘাত চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি

কোমরে ইলেকট্রিক যন্ত্র নিয়ে হাঁটছেন ডেভিড। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে।
কোমরে ইলেকট্রিক যন্ত্র নিয়ে হাঁটছেন ডেভিড। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে।

পক্ষাঘাতে অনেকের পা অসাড় হয়ে যায়। চলাচল করতে পারেন না তাঁরা। সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির তিনজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিকে নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করেন সুইজারল্যান্ডের গবেষকেরা। ওই তিনজনকে সারা জীবন হুইলচেয়ারে কাটাতে হবে—এমন কথাই এত দিন শুনেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের চিকিৎসকেরা তাঁদের আশার আলো দেখালেন।

মেরুদণ্ডের চারপাশে একধরনের ইলেকট্রিক ডিভাইস বসিয়েছেন তাঁরা, যাতে মেরুদণ্ড থেকে মস্তিষ্কে সংকেত যায়। এতে মেরুদণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু আবার নতুন করে উদ্দীপনা পায়, ফলে তাঁরা হাঁটতে সক্ষম হচ্ছেন। গবেষকেরা আশা করছেন, তাঁদের এই আকস্মিক সাফল্য অনেক পক্ষ ঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে নড়াচড়া করার সুযোগ করে দেবে।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, সম্প্রতি তিনজন রোগীকে এ ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে নেচার সাময়িকীতে।

প্রথম যে রোগীকে চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দেন, তাঁর নাম ডেভিড মেজি। সুইজারল্যান্ডের ৩০ বছর বয়সী ওই যুবক সাত বছর আগে খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পান। ডেভিডকে যাঁরা চিকিৎসা দিয়েছিলেন, তাঁরা নিরাশার কথাই শুনিয়েছিলেন। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের ইপিএফএলের একদল গবেষক তাঁর মেরুদণ্ডে ইলেকট্রিক্যাল ইমপ্লান্ট করেছেন। এখন ওই যন্ত্র চালু করে তিনি প্রায় আধা মাইল হাঁটতে পারেন।

ডেভিডের অস্ত্রোপচারের যুক্ত ছিলেন সুইজারল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় স্নায়ুবিদ ও লুসান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের চিকিৎসক জসলিন ব্লোচ। তিনি বলেছেন, ডেভিডের সেরে ওঠা দেখে তিনিও বিস্মিত।

তবে এখনো ওই সিস্টেমের খরচ বেশি ও পরীক্ষাগারের বাইরে ব্যবহারের উপযোগী নয়। এ পদ্ধতি নিয়ে পরে নেদারল্যান্ডসের ৩৫ বছর বয়সী প্রকৌশলী জার্টান ওসকানের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। তিনি সাত বছর আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। তাঁর চিকিৎসকেরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি কিছুটা নড়াচড়া করতে পারছেন। জার্মানির ৪৮ বছর বয়সী সেবাসটিয়ান টোবলারের ক্ষেত্রেও সফল হয়েছেন চিকিৎসকেরা।

গবেষকেরা বলেন, তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটির আরও উন্নয়ন করা সম্ভব। এতে অনেকেই জীবনে আশার আলো দেখতে পাবেন। শিগগিরই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পদ্ধতিটি নিয়ে বড় আকারের পরীক্ষা শুরু করবেন। পরীক্ষা সফল হলে এ পদ্ধতির ব্যাপক ব৵বহার হবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।