কাজ ছেড়ে রাজপথে গুগলের কর্মীরা

কর্মস্থলে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে কাজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন গুগলের কর্মীরা। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে।  ছবি: এএফপি
কর্মস্থলে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে কাজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন গুগলের কর্মীরা। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। ছবি: এএফপি

কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সহকর্মীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর অভূতপূর্ব এক প্রতিবাদ জানালেন গুগলের কর্মীরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির অনেক কর্মী কাজ ছেড়ে নেমে এলেন রাজপথে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রতিবাদে শামিল হন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাপান, চীন, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশে কাজ করা গুগলের কর্মীরা। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির পাশাপাশি বৈষম্য, বর্ণবাদ এবং অনিয়ন্ত্রিত নির্বাহী ক্ষমতারও প্রতিবাদ জানান তাঁরা।

গুগল কর্মীদের এই প্রতিবাদ ‘গুগল ওয়াকআউট’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় ‘হ্যাশট্যাগ গুগল ওয়াকআউট (#googlewalkout)’ দিয়ে বিপুল হারে পোস্ট করছেন ব্যবহারকারীরা। গুগল কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্টের তথ্যানুসারে, বিশ্বজুড়ে গুগলের কার্যালয়গুলো থেকে স্থানীয় সময় বেলা ১১টার সময় কর্মীদের কর্মক্ষেত্র বর্জনের কথা।

ভারতে গুগলের দেড় শ কর্মী অফিস বর্জন করেছেন। সিঙ্গাপুর ও জাপানের টোকিওতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়েও একইভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। লন্ডনে গুগলের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসেছেন কিছু কর্মী। সুইজারল্যান্ডের জুরিখ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসেছেন অনেক কর্মী। জার্মানির বার্লিনেও অফিস বর্জনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কিছু কর্মী।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস–এর গত বুধবারের খবরে জানানো হয়, আয়োজকেরা আশা করছেন, বিশ্বজুড়ে গুগলের দেড় হাজারের বেশি কর্মী প্রতিবাদে অংশ নেবেন। তাঁদের বেশির ভাগই হবেন গুগলের নারী কর্মী।

বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে আয়োজকেরা গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেডের প্রতি পরিচালনা পর্ষদে কর্মীদের প্রতিনিধিকে সংযুক্ত করার এবং অভ্যন্তরীণভাবে সব কর্মীর পারিশ্রমিকের তথ্য জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। গুগলের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রচলিত চর্চায়ও পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

বৈচিত্র্য আনতে, নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি আচরণের উন্নতি এবং গুগলের মূলমন্ত্র ‘মন্দ কিছু করো না’ নিশ্চিত করার দাবিতে গুগলের ভেতরে কয়েক মাস ধরে অসন্তোষ বাড়ছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে অভ্যন্তরীণ পর্যায়েই কর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই অসন্তোষ তীব্রতা পায় গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গত দশকে অন্তত তিন নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগের ক্ষেত্রে নীরব ছিল গুগল। তাঁদের একজন অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতা অ্যান্ডি রুবিন, যিনি জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০১৪ সালে গুগল ছাড়েন। সে সময় তাঁকে ৯ কোটি মার্কিন ডলার দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে রুবিন ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সিএনএন জানায়, চলতি সপ্তাহে গুগল এক্সের পরিচালক রিচার্ড দ্যভল পদত্যাগ করেন। নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তিনি এক চাকরিপ্রার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। রিচার্ড অবশ্য চাকরি ছাড়ার সময় কোনো অর্থ পাননি।

গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই এক বিবৃতিতে কর্মীদের প্রতিবাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘কর্মীরা গঠনমূলক পরিকল্পনা সামনে এনেছেন। প্রতিষ্ঠান কর্মীদের কথা শুনছে, যাতে এসব পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচির ব্যাপারে অবগত রয়েছি এবং কর্মীরা যদি প্রতিবাদে শামিল হতে চান, তাহলে তাঁরা সমর্থনও পাবেন।’

দুই দশক আগে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কর্মীদের সঙ্গে স্বচ্ছতা বজায় রাখার কারণে বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়ায় গুগল। কিন্তু প্রতিবাদের আয়োজকেরা বলেছেন, গুগলের নির্বাহী কর্মকর্তারা কাঠামোগত কিছু সমস্যা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ধীরলয়ে অগ্রসর হয়েছেন। তাঁদের দাবি, গুগলকে অবশ্যই যৌন হয়রানির পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে হবে এবং হয়রানি-সংক্রান্ত ঘটনার ক্ষেত্রে জোরপূর্বক নিষ্পত্তির পথ ছাড়তে হবে।