২০২১ সাল নাগাদ ২৫০০ কোটি আইওটি যন্ত্র

আইওটি যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। ছবি: এএফপি
আইওটি যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। ছবি: এএফপি

ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। ২০২১ সাল নাগাদ একে অপরের সঙ্গে ইন্টারনেটে সংযুক্ত ডিভাইস ব্যবহারের সংখ্যা ২৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ২০১৯ সাল নাগাদ কানেকটেড ডিভাইসের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৪ দশমিক ২ বিলিয়ন। বাজার গবেষণা সংস্থা গার্টনার গত শুক্রবার এ পূর্বাভাস দিয়েছে। আইএএনএসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র থেকে শুরু করে ঘর-গেরস্থালির পণ্য—সবকিছুতেই এখন চাই ইন্টারনেট। সব যন্ত্রেই ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধার এই ধারণা থেকে এসেছে আইওটি। ডিভাইস বা যন্ত্রে ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ বা ‘সব যন্ত্রেই ইন্টারনেট’ এখন বহুল আলোচিত একটি বিষয়। ইন্টারনেট অব থিংস বিষয়টিকে সংযোগ সুবিধার যন্ত্র, যেমন: গাড়ি, পোশাক বা গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট আন্তসংযোগ হিসেবে বোঝানো হয়। প্রতিটি যন্ত্র যাতে তারবিহীন যোগাযোগ পদ্ধতিতে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এবং বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে পারে, সেই নেটওয়ার্কই ‘ইন্টারনেট অব থিংস’।

‘টপ স্ট্র্যাটেজিক আইওটি ট্রেন্ডস অ্যান্ড টেকনোলজিস থ্রু ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গার্টনার উল্লেখ করেছে, আইওটি যন্ত্রের বিস্তার হওয়ায় এ ধরনের ডিভাইস তৈরি, সংরক্ষণ, ব্যবহার, এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মুছে ফেলাসহ এর সঠিক ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে সরকারকে সঠিক অবকাঠামো তৈরির দিকে যেতে হবে।

গার্টনারের রিসার্চ ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক জোনস বলেন, আগামী এক দশকে ডিজিটাল ব্যবসা ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে আইওটি। নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে আইওটি ব্যবসার আরও নতুন সুযোগ তৈরি হবে।

নিক জোনস আরও বলেছেন, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (সিআইও) হিসেবে যাঁরা উদ্ভাবনী আইওটি ট্রেন্ডের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন, তাঁদের ব্যবসায় ডিজিটাল উদ্ভাবনের নতুন ক্ষেত্রের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সাল নাগাদ বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য বিশেষ ধরনের চিপসেট তৈরি হবে, যাতে কম শক্তি প্রয়োজন হবে। এতে কম শক্তিতে চলতে পারে—এমন আইওটি ডিভাইসের ব্যবহার আরও বেড়ে যাবে। এতে ডেটা বিশ্লেষণ, স্পিস এনালাইসিসের মতো সুবিধা কম খরচের ডিভাইসে চলে আসবে।

এদিকে, জিএসএমএর এক জরিপে দেখা যায়, ঘরে তারবিহীন ইন্টারনেট ব্যবস্থা ব্যবহার করে তৈরি করা স্মার্টমিটার ও নিরাপত্তাব্যবস্থা একদিকে যেমন মানুষের অর্থ সাশ্রয় করেছে, তেমনি মানসিক প্রশান্তি বয়ে এনেছে। ব্যয় কমাতে, মানসিক শান্তি আনতে ও নিরাপত্তার জন্য শতকরা ৮৯ ভাগ মানুষ ভবিষ্যতে তারবিহীন ইন্টারনেট সুবিধার যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়। শুধু তা-ই নয়, ইন্টারনেটসামগ্রী মানুষের পারিবারিক জীবনকে বদলে দিচ্ছে।

‘দ্য ইমপ্যাক্ট অব দ্য ইন্টারনেট অব থিংস’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চারজনের মধ্যে অন্তত একজনের কাছে স্মার্ট যন্ত্র বা ইন্টারনেট সংযোগ–সুবিধাসম্পন্ন যন্ত্র রয়েছে।

বিজনেস ইনটেলিজেন্স বা বিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল নাগাদ ইন্টারনেট অব থিংসের বাজার স্মার্টফোন, পিসি, ট্যাব, ইন্টারনেট সুবিধার গাড়ি ও পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের সমন্বিত বাজারকেও ছাড়িয়ে যাবে।

ওই সময় নাগাদ আইওটির সক্ষমতার জন্য হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ব্যবস্থাপনা সেবাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যমান যুক্ত করবে আইওটি। ২০১৯ সাল নাগাদ ৬৭০ কোটি যন্ত্র বাজারে আসবে, যার মধ্যে হার্ডওয়্যার বিক্রির মুনাফা হবে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। হার্ডওয়্যার থেকে যে মুনাফা হবে, তা আইওটি থেকে আসা মুনাফার মাত্র ৮ শতাংশ হবে।

বিআইয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এখন আইওটির ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করছে এন্টারপ্রাইজ ক্ষেত্র। তবে সরকারি ও গৃহস্থালি ক্ষেত্রে আইওটির ব্যবহার বাড়তে থাকায় ২০১৯ সাল নাগাদ এন্টারপ্রাইজ ক্ষেত্রটি পেছনে পড়ে যাবে। ২০১৯ সাল নাগাদ আইওটির ক্ষেত্রে শীর্ষে থাকবে সরকারি ক্ষেত্র। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি ও ব্যয় সাশ্রয়ই হবে প্রবৃদ্ধির মূল কারণ।