সবাই অ্যাপলের নকল করে: স্টিভ ওজনিয়াক

স্টিভ ওজনিয়াক। ছবি: রয়টার্স
স্টিভ ওজনিয়াক। ছবি: রয়টার্স

অ্যাপলের সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস আজ যদি বেঁচে থাকতেন, তবে অ্যাপলের বর্তমান অবস্থা দেখে গর্ববোধ করতেন। অ্যাপল এখন প্রযুক্তির চেয়ে মানুষকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক গত মঙ্গলবার সিএনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।

স্টিভ ওজনিয়াক দাবি করেন, প্রতিটি মোবাইল ফোন কোম্পানি এখন অ্যাপলকে নকল করছে। আইএএনএসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলেন, বর্তমানের প্রযুক্তিপ্রেমী প্রজন্মের যাত্রা শুরু হয়েছিল যাঁদের হাত ধরে, তাঁদেরই একজন ওজনিয়াক। স্টিভ ওজনিয়াক এবং স্টিভ জবস ভালো বন্ধু ছিলেন। তাঁরা দুজন ১৯৭৬ সালে বাড়ির গ্যারেজে বর্তমানের জনপ্রিয় অ্যাপল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্টিভ ওজনিয়াককেই অ্যাপলের প্রথম কম্পিউটার তৈরি এবং প্রোগ্রামের জন্য পুরো কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে মারাত্মক একটি বিমান দুর্ঘটনায় স্মৃতিশক্তি হারিয়েছিলেন ওজনিয়াক। ১৯৮৭ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপল ছেড়ে দেন এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ শুরু করেন।

ওজনিয়াক বলেন, ‘অ্যাপল ব্যবহারকারীদের গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রযুক্তি চেয়ে ব্যবহারকারীদের চাওয়া পাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগের বিষয়টি স্টিভ জবস পছন্দ করতেন। তিনি এভাবেই চিন্তা করতেন। অ্যাপল এখন যেভাবে উদ্ভাবনের দিকে নজর দিচ্ছে, যা আমদের প্রাত্যহিক জীবনে সব সময় প্রভাব ফেলে।’

ওজনিয়াকের মতে, ‘অ্যান্ড্রয়েড ফোন আপনাকে হাসাতে পারে। এতে তোলা ছবিতে নানা মজার ফিচার থাকতে পারে, কিন্তু তা উদ্ভাবন নয়।’

প্রযুক্তিগুরু হিসেবে খ্যাত ওজনিয়াক বলেন, প্রযুক্তির চেয়ে মানুষের চাহিদাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রযুক্তির ক্ষতির প্রভাবের যেন শিকার না হন, সেটা দেখতে হবে। মানুষের মতোই মানুষ যেভাবে জীবনযাপন করে, সেভাবেই জীবন পার করতে হবে।

আইফোনের প্রশংসার পাশাপাশি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা নিয়েও মন্তব্য করেছেন ওজনিয়াক। তাঁর মতে, ‘টেসলা অনেক ভুল করেছে। অটো পাইলট ও অটো স্টিয়ারিং কার ঠিকমতো কাজ করবে বলে আমার মনে হয় না।’

ওজনিয়াক বলেন, ‘আমি জীবনে একটি বিষয় শিখেছি, আর তা হলো তুমি কী জানো, সেটার চেয়ে কী করতে চাও, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো উদ্যোগ নিতে চাও, তবে ধারণা আর কাগজের টুকরোর ওপর নির্ভর না করে কাজের মডেল ও ব্যবসার পরিকল্পনা করে নেমে পড়তে হবে।’

অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস সম্পর্কে ওজনিয়াক বলেন, অ্যাপল প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর আগে থেকেই জবসকে চিনতেন তিনি। তবে জবস কম্পিউটারের ভেতরে কী থাকে, সেটা তখন জানতেন না। কারণ, তিনি প্রকৌশলী ছিলেন না। কিন্তু কোনো পণ্যকে কীভাবে দেখতে হয়, সে বিষয়ে ভালো জ্ঞান ছিল তাঁর। টাকাপয়সা ছাড়া যে জীবন যাপন করা যায়, সে রকম জীবন যাপন করতে চেয়েছিলেন তিনি। তিনি সত্যিকারের হিপ্পি ছিলেন। তিনি সবকিছু শিখতে ভালোবাসতেন।

বিশ্বসেরা অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তিপণ্য তৈরি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ইনকরপোরেটেডের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ছিলেন দারুণ উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী। নানা ধরনের সময়োপযোগী প্রযুক্তিপণ্যের বিষয়ে ভাবা থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অসাধারণ। অ্যাপল কম্পিউটারের তৈরি চমক লাগানো নানা ধরনের পণ্যই সেসবের প্রমাণ। প্রযুক্তি জগৎকে বদলে দেওয়া অ্যাপলের তৈরি সেরা পণ্যের তালিকাটাও তাই বেশ সমৃদ্ধ। ১৯৭৬ সালে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ধারণা নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিল অ্যাপল-১। তাঁর হাত ধরেই এসেছিল আইফোন। অনেক দিন ক্যানসারে ভুগে স্টিভ জবস ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর মারা যান।