গুগলের 'না', মাইক্রোসফটের 'হ্যাঁ'

পেন্টাগনের জেডি প্রকল্পে কাজ করতে আগ্রহী মাইক্রোসফট। ছবি: রয়টার্স।
পেন্টাগনের জেডি প্রকল্পে কাজ করতে আগ্রহী মাইক্রোসফট। ছবি: রয়টার্স।

কর্মীরা আপত্তি করেছেন বলে মার্কিন সেনাবাহিনীর কয়েকটি প্রকল্প থেকে সরে এসেছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল। তবে গুগলের ঠিক বিপরীত পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে মাইক্রোসফটের তৈরি সব প্রযুক্তি সরবরাহ করতে ইচ্ছুক বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

গত শনিবার ক্যালিফোর্নিয়ার সিমি ভ্যালিতে রিগান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোরামে এক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্র্যাড স্মিথ এসব কথা বলেন।

আইএনএনএসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেনাবাহিনীর নানা প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। গত জুন মাসে গুগলের হাজারো কর্মী তাঁদের প্রতিষ্ঠানের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মার্কিন সেনাবাহিনীর ড্রোন ফুটেজে ব্যবহারসংক্রান্ত চুক্তিতে প্রবল আপত্তি জানান। গুগল শেষ পর্যন্ত ওই চুক্তি বাতিল করে।

স্মিথ বলেছেন, প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কোনো উদ্বেগে থাকলে তাঁরা তা শুনতে রাজি।

মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে মাইক্রোসফট এই প্রথম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করল। গত অক্টোবরে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা ও প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সেনাবাহিনীর প্রকল্পে যুক্ত থাকার বিষয়ে আলোচনা করেন।

স্মিথ বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত প্রতিরক্ষার প্রয়োজন বলে মনে করি। যাঁরা এ প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের মাইক্রোসফটসহ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ থাকা উচিত। মাইক্রোসফটে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সবার কাছ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন চাওয়া বা প্রত্যাশা করা হবে না। যাঁরা এ প্রকল্পে কাজ করতে চান না, তাঁদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো হবে।’

মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, ‘মার্কিন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের প্রযুক্তি পাবেন। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আমরা গর্বিত।’

মাইক্রোসফট সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের (ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স) জয়েন্ট এন্টারপ্রাইজ ডিফেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্লাউড প্রজেক্ট (জেডি) পেতে দরপত্র জমা দিয়েছে।

গত অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (৮৪,৪৪০ কোটি টাকা) জেডি প্রকল্পে ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তির দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের অধীনে থাকা গুগল। নৈতিক নীতিমালার সঙ্গে ওই প্রকল্প যায় না বলেই এ সিদ্ধান্ত নেয় গুগল।

পেন্টাগনের ‘জয়েন্ট এন্টারপ্রাইজ ডিফেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ বা ‘জেডি’ প্রকল্পটি পেতে মাইক্রোসফট ও আমাজন এখন লড়বে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গুগলের আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স সফটওয়্যার ব্যবহারের মূল বাধা হচ্ছে এটি অস্ত্র বা যেকোনো ক্ষতিকর সার্ভিসে ব্যবহার করা হলে তা মানবাধিকার ও নজরদারির আন্তর্জাতিক নীতির বিরুদ্ধে যাবে।

গত মার্চে গুগল মার্কিন সরকারের তথ্য নিয়ে পরিমিত পরিসরে নিরাপত্তার কাজ করার সনদ পায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট ও আমাজন ডটকম পুরোপুরি অনুমতি পেয়েছে। পেন্টাগনের চুক্তির ক্ষেত্রে আমাজনকেই এগিয়ে রাখছেন পেন্টাগনের কর্মকর্তারা।

গুগল কর্তৃপক্ষ তাদের ক্লাউড ব্যবসাকে বাড়াতে ওই চুক্তি করতে আগ্রহী হয়েছিল। এতে গুগলের বিপণনকাজে আরও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু গুগলের হাজারো কর্মী এর বিরোধিতা করেন। গুগলের প্রযুক্তি যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে বা মানুষের ক্ষতির কাজে না লাগে, সে বিষয়ে জোর দেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। গুগল কর্মীদের বিরোধিতার মুখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে নিয়মনীতি ঠিক করে।

গুগল বলছে, যদি যৌথভাবে চুক্তিতে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে, তবে তারা জেডি প্রকল্পের অংশবিশেষে কাজ করতে পারে।

পেন্টাগনের কাজ পেতে মাইক্রোসফট যে মুখিয়ে আছে, তাদের প্রেসিডেন্টের কথাতেই তা পরিষ্কার।