হুয়াওয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে 'প্রতারণার' অভিযোগ

হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝু
হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝু

চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার কানাডার একটি আদালতে তাঁর জামিন শুনানির সময় এক আইনজীবী তাঁর জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, জামিন দিলে মেং ওয়ানঝু পালিয়ে যেতে পারেন।

ক্রাউন অ্যাটর্নি জন গিব-কার্সলের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, স্কাইকম নামের এক অনানুষ্ঠানিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যে ইরানের টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করছে হুয়াওয়ে। এতে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেওয়া নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

ওই আইনজীবী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো থেকে হুয়াওয়ের জন্য অর্থ ছাড় করা হলেও তাদের অজ্ঞাতে আইন লঙ্ঘন করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে স্কাইকম। তাদের সঙ্গে যুক্ত আছে হুয়াওয়ে। ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে স্কাইকমের সঙ্গে সম্পর্কের কথা লুকিয়েছেন হুয়াওয়ের ওই অর্থ কর্মকর্তা। স্কাইকমের কিছু কর্মকর্তা হুয়াওয়ের ই–মেইল ব্যবহার করেন এবং ইরানের কর্মকর্তারা অন্য ঠিকানা ব্যবহার করেন।

মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে এ মামলা পরিচালনা করছে কানাডা। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের আশঙ্কা রয়েছে।

আইনজীবী জন গিব-কার্সলের জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, মেং ওয়ানঝু বিত্তশালী। তাই যেকোনো জরিমানা শোধ করে পালিয়ে যেতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে হুয়াওয়ের কর্মকাণ্ডের তদন্ত শুরুর পর থেকে তিনিসহ হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা সে দেশে ভ্রমণ বাতিল করেছেন।

এদিকে মেং ওয়ানঝুর পক্ষে আইনজীবী ডেভিড মার্টিন বলেন, যে প্রমাণ দেখানো হচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার কোনো আইন তিনি ভেঙেছেন বলে প্রমাণ করা যায় না। দুটি দেশের নিষেধাজ্ঞা আইন জটিল এবং সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে। এ ছাড়া টেলিকম যন্ত্রপাতি নিষেধাজ্ঞার বাইরে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণ অনুরোধে ১ ডিসেম্বর কানাডার ভাঙ্কুভার বিমানবন্দরে হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতার মেয়ে মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানে প্রযুক্তি বিক্রি করার অভিযোগ করা হচ্ছে। তিনি হংকং থেকে মেক্সিকো যাচ্ছিলেন। ভাঙ্কুভার বিমানবন্দরে তাঁর যাত্রাবিরতি ছিল। বছরের দুই সপ্তাহ তিনি কানাডার থাকেন। সেখানে তাঁদের সম্পত্তিও রয়েছে।

বোস্টনের একটি স্কুলে তাঁর ১৬ বছরের সন্তান লেখাপড়া করে। আইনজীবী মার্টিন বলেন, তাঁকে জামিন দিলে তিনি আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে পালাবেন না। এতে চীন ও তাঁর বাবা হুয়াওয়ে প্রতিষ্ঠাতা রেন রেন ঝেংফেইয়ের জন্য বিব্রতকর হবে।

মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ চীন। দ্রুত তাঁকে মুক্তি দিতে আহ্বান জানিয়েছে। মেংকে চীনের বিখ্যাত ব্যবসায়ী বলা হয়। তিনি হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতার মেয়ে।

গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে আদালতে নেওয়া হয় মেংকে। তিনি আদালতে বসে যুক্তিতর্ক শোনেন। ভাঙ্কুভারে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার শুরু বলা হয় এই শুনানিকে। আইনি প্রক্রিয়ায় হেরে গেলে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করতে কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। বিচারক যদি তাঁকে প্রত্যর্পণের অনুমতি দেন, তবে তিনি কয়েক দফা আপিলের অনুমোদন পাবেন।

চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুর গ্রেপ্তারে কানাডা সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

মেং ওয়ানঝুর গ্রেপ্তারে ক্ষুব্ধ হয়েছে চীন। এই গ্রেপ্তারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করে তাঁর মুক্তি চেয়েছে বেইজিং। দোষী সাব্যস্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।

হুয়াওয়ে বলেছে, মেং ওয়ানঝু অন্যায় কিছু করেছেন বলে তাদের জানা নেই।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যখন একটি টানাপোড়েনের সম্পর্ক চলছে, ঠিক তখনই গ্রেপ্তার হলেন মেং ওয়ানঝু। দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলে আসছিল। এই যুদ্ধে দুই দেশে একে অন্যের পণ্যের ওপর বিপুল পরিমাণে পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেছে। ওয়ানঝু যেদিন গ্রেপ্তার হন, ঠিক সেদিনই নিজেদের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের লাগাম আপাতত টেনে ধরতে রাজি হয় যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।

গত শনিবার আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পরস্পরের দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে কোনো শুল্ক আরোপ করা স্থগিত রাখতে রাজি হন। কিন্তু ওয়ানঝুর গ্রেপ্তারের ঘটনায় চীন ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে বেইজিং সতর্ক করেছে।

মেং ওয়ানঝুর গ্রেপ্তারের ঘটনার পর হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান লিয়াং হুয়া প্রধান অর্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।