যেন বাড়িতেই সিনেমা হল

প্রজেক্টর থাকলে বাড়িতেই বড় পর্দায় দেখা যাবে প্রিয় সিনেমা
প্রজেক্টর থাকলে বাড়িতেই বড় পর্দায় দেখা যাবে প্রিয় সিনেমা

ব্যস্ততার জন্য অনেকেরই প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখার সুযোগ হয়ে ওঠে না। এ জন্য মন খারাপ করার দিন শেষ। একটি প্রজেক্টরই পারে এ সমস্যার সমাধান নিতে। আপনি চাইলেই আপনার ঘরটি হয়ে উঠবে প্রেক্ষাগৃহ।

সিনেমা হলের আমেজ
রাজধানীর শ্যামলীতে নিজের বাড়ির ঘরে বসে প্রজেক্টরে সিনেমা ও খেলা দেখেন একজন ক্রীড়া সাংবাদিক। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা শোনান এভাবে—প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় করে দেখার মধ্যে আলাদা একটা আনন্দ রয়েছে। বিশ্বকাপ বা যেকোনো সময় প্রিয় দল আর্জেন্টিনার খেলা তিনি দেখেন প্রজেক্টরে। তাতে খেলোয়াড়দের আকারে বড় দেখা যায়। তাঁদের সহজেই চেনা যায়। ফলে মনে হয় যেন মাঠে বসে খেলা দেখছি।

বাহারি ধরন 
বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্টর পাওয়া যায়। গ্লোবাল ব্র্যান্ড (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবসায় প্রধান রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘প্রজেক্টরের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। একেক ধরনের চাহিদার জন্য আলাদা প্রজেক্টর বাজারে রয়েছে। টেকনোলজি অনুযায়ী আমরা তিন ধরনের প্রজেক্টর বিক্রি করি। ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রজেক্টরগুলো ক্রেতা ক্রয় করে থাকে।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রজেক্টর এখন সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। বাজারে বাণিজ্যিক ও শৌখিন প্রজেক্টর পাওয়া যায়। প্রজেক্টরের আলোর উজ্জ্বলতার ওপর তার মান নির্ভর করে। দামি প্রজেক্টেরর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর ছবি চকচকে, উজ্জ্বল। কম দামে কিছু চীনা প্রজেক্টর বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো মোটামুটি মানের।

দুভাবে দেখা যায়
প্রজেক্টরের মাধ্যমে সিনেমা দুইভাবে দেখা যায়—একটা পর্দায়, আরেকটা পর্দা ছাড়া। প্রজেক্টর দিয়ে পর্দা ছাড়া সিনেমা দেখতে চাইলে ঘরের দেয়ালের রং সাদা বা অফ হোয়াইট হলেই হবে। তারপর নির্দিষ্ট দূরত্বে প্রজেক্টর বসিয়ে দেয়ালে আলো ফেললেই ছবি দেখা যাবে। এ ক্ষেত্রে ভিউটা ঠিক করে নিতে হয়। প্রজেক্টরের দুটো ভিউ থাকে। চালু করার আগে এ দুটোকে ঠিক করে নিতে হয়। একটু দূরত্ব বজায় রাখলে মোটামুটি ভালোই দেখা যায়। প্রজেক্টর যত দূরে থাকবে, ততই এর পর্দার আকার বড় হবে। ঘরের আয়তন অনুযায়ী প্রজেক্টর এগিয়ে–পেছনে নিয়ে ছবি বড়–ছোট করা যাবে। তবে প্রজেক্টর থেকে দেয়াল অনেক বেশি দূরে থাকলে ছবি ভালো দেখা যায় না। যাঁরা প্রজেক্টর ঘরের বাইরে ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য পর্দা হলো সমাধান। শুধু ঘরে দেখতে চাইলে দেয়ালেই শ্রেয়। পর্দা ব্যবহার করার সমস্যা হলো, এটা সিনেমা দেখার পর ভাঁজ করে রাখতে হয়, আবার সিনেমা দেখার সময় খুলতে হয়। প্রজেক্টরের দুই ধরনের পর্দা রয়েছে। একটি হলো স্ট্যান্ডের সঙ্গে লাগানো। এর দাম তুলনামূলক বেশি। আরেকটি হলো ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে বানানো পর্দা। এর জন্য একটি ডিজিটাল ব্যানার লাগবে। ব্যানারে পেছনের অংশ কালো এবং সামনের অংশ সাদা হতে হবে।

সব মাধ্যমেই দেখা যায়
এই সময়ের প্রজেক্টর সবকিছুতেই সংযোগ দেওয়া যায়। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টিভি এবং মোবাইল ফোন থেকে প্রজেক্টর ব্যবহার করা যায়। আধুনিক প্রজেক্টরে সব সংযোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন পেনড্রাইভ, কার্ড রিডার, সরাসরি ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সঙ্গে তার দিয়ে সংযোগ দেওয়া। কেব্​ল টিভি থেকে সংযোগ দেওয়ার জন্য একটা পোর্ট রয়েছে প্রজেক্টরে। প্রজেক্টরের সঙ্গে একটা তার দেওয়া থাকবে। এই তারটির একটি অংশ ডিশের সংযোগ আছে এমন টিভিতে এবং আরেকটি অংশ প্রজেক্টরে লাগাতে হবে। ইন্টারনেট সংযুক্ত স্মার্ট টিভিতে প্রজেক্টরে ইন্টারনেটের সুবিধাও পাওয়া যাবে।
প্রজেক্টর নিজের মোবাইল ফোনের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। এ জন্য যন্ত্রের ব্লুটুথ অপশন চালু করতে হবে। মোবাইল ফোনসেট নির্মাতা হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুটি যন্ত্রে ব্লুটুথ থাকলে মোবাইল ফোন থেকে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সিনেমা বা নাটক দেখা যাবে। হুয়াওয়ে স্মার্টফোনের মাধ্যমে প্রজেক্টরে হাই রেজ্যুলেশনের সিনেমা, নাটকসহ বিভিন্ন জিনিস দেখা যাবে। এ ছাড়া বাজারে কিছু ছোট আকারের প্রজেক্টর পাওয়া যায়, যা সরাসরি মোবাইল ফোনের পেছনে ক্যামেরার সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। এর ফলে মোবাইল ফোনে যা চালু করা হবে, তা–ই দেখা যাবে। এগুলোর দাম তুলনামূলক কম। স্থায়িত্বও কম।

শব্দ
প্রজেক্টরে সিনেমা, খেলা বা অন্য যেকোনো কিছু দেখতে চাইলে এর শব্দ (সাউন্ড সিস্টেম) ভালো হওয়া চাই। প্রজেক্টরের নিজস্ব একটা সাউন্ড সিস্টেম দেওয়া থাকে। নিজস্ব সাউন্ড সিস্টেমটা তুলনামূলক কম শব্দ হয়। প্রজেক্টরে সিনেমা মানের সাউন্ড পেতে চাইলে এর সঙ্গে আলাদা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য ব্যবহারকারীকে হোম থিয়েটার সাউন্ড সিস্টেম কিনে নিতে হবে। ব্যবহারকারী যে মানের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করবেন, তিনি সে মানের সাউন্ড উপভোগ করতে পারবেন। আর রিমোটের ব্যবহারের নিয়ম টেলিভিশনের রিমোটের মতোই।

সাবধানতা
ইলেকট্রনিক যন্ত্র হওয়ার কারণে প্রজেক্টরের ব্যবহার একটু সাবধানে করতে হয়। প্রজেক্টরের আলো বের হয় যে অংশ দিয়ে (আতশি কাচ) তাতে হাত দেওয়া যাবে না। এবং শক্ত কোনো কাপড় দিয়ে মোছা যাবে না। খুব সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হবে। বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সিনেমা বা খেলা দেখা শেষ হলে ভালোভাবে বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে রাখতে হবে।

দাম ও ব্র্যান্ড
দেশের বাজারে আসুস, ভিভিটেক, ক্যাসিও, হিটাসি, ইপসন, প্যানাসনিক, লেনোভো, তোশিবা, বেনকিউ, ভ্যালুটপসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রজেক্টর পাওয়া যায়। এ ছাড়া চায়না থেকে আমদানি করা কিছু নন–ব্র্যান্ডের প্রজেক্টরও পাওয়া যায়। মান ও ব্র্যান্ডের ওপর প্রজেক্টের দাম নির্ভর করে। ৮ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রজেক্টরের দাম পড়বে।

পাওয়া যায় যেখানে
প্রজেক্টর সাধারণত সব কম্পিউটার বাজারেই পাওয়া যায়। এর মধ্যে এলিফ্যান্ট রোডে বিভিন্ন কম্পিউটার মার্কেট, আইডিবি, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাস, ইস্টার্ন প্লাজা ও স্টেডিয়াম মার্কেটে পাওয়া যায়। ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে অবস্থিত কলমিলতা মার্কেটে কম দামে ভালো মানের প্রজেক্টর পাওয়া যায়।