মোট কয়টি কমলা ছিল?

গণিতের কিছু সহজ সমস্যার সমাধান মুখে মুখেই করা যায়। এ রকম একটি প্রশ্ন দেখুন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে একই সময়ে দুটি ট্রেন পরস্পর বিপরীত দিকে রওনা হলো। ঢাকার ট্রেন ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার ও চট্টগ্রামের ট্রেন ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলছে। ভুলবশত ট্রেন দুটি একই লাইনে চলতে থাকে, যদিও দুটি ট্রেন অনায়াসে পাশাপাশি চলার সুব্যবস্থা আছে। চালকেরা খেয়াল করেননি যে ভুল লাইনে ট্রেন চলছে। স্টেশনমাস্টারও না। ফলে, একসময় ট্রেন দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। যদি আধা ঘণ্টা আগেও খেয়াল করত, তাহলে হয়তো চালকেরা ব্রেক করে ট্রেন থামিয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে পারতেন।

এখন বলুন তো, সেই আধা ঘণ্টা আগে ট্রেন দুটির একটি অপরটি থেকে কত দূরে ছিল?

এর উত্তরের জন্য আমাদের খুব বেশি মাথা ঘামানোর দরকার হয় না। ট্রেন ভুল না সঠিক লাইনে চলছে, সেটা এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। মূল ব্যাপার হলো আধা ঘণ্টা ধরে ট্রেন দুটি যার যার গতিতে কত দূর চলেছে। দুটি ট্রেনের অতিক্রান্ত দূরত্বের যোগফলই হবে উত্তর। এটাই তো জানতে চাওয়া হয়েছে। খুব সহজ। আধা ঘণ্টায় ঢাকার ট্রেন (৭০/২) = ৩৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রামের ট্রেন (৬০/২) = ৩০ কিলোমিটার পথ একে অপরের দিকে চলেছে। সুতরাং আধা ঘণ্টা আগে ট্রেন দুটি একে অপরের থেকে (৩৫ ‍+ ৩০) = ৬৫ কিলোমিটার দূরে ছিল।

গণিতে আরেক ধরনের সমস্যা আছে, যা প্রথমে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটিয়ে সহজেই উত্তর বের করা যায়। যেমন, প্রশ্ন করলাম, পাঁচটি বিজোড় অঙ্কের (ডিজিট) যোগফল ২৬ হলে অঙ্ক চারটি কত? এই প্রশ্নের সমাধান বের করতে গেলে প্রথমেই ধাক্কা খেতে হয়। কারণ, ২৬ একটি জোড় সংখ্যা, তাই মনে হবে বিজোড় অঙ্ক যদি পাঁচটি হয়, তাহলে যোগফল তো বিজোড় হয়ে যাবে। ২৬ হওয়া তো অসম্ভব। কিন্তু এখানে একটু চালাকি আছে। শব্দের মারপ্যাঁচ। বলেছি বিজোড় ‘অঙ্ক’ (ডিজিট), ‘সংখ্যা’ (নাম্বার) নয়। বিজোড়সংখ্যক রাশি বা সংখ্যা অথবা অঙ্কের যোগফল বিজোড়ই হবে। কিন্তু একটি সংখ্যার মধ্যে দুটি বিজোড় অঙ্ক থাকতে পারে। তাহলে মোট চারটি সংখ্যার যোগফল জোড় হতে সমস্যা নেই। যেমন, (১ ‍+ ৩ ‍+ ৫ ‍+ ১৭) = ২৬। এখানে সংখ্যা যদিও চারটি, কিন্তু এদের মধ্যে একটি সংখ্যা ১৭–এর মধ্যে আছে দুটি অঙ্ক, ১ ও ৭। সুতরাং মোট পাঁচটি বিজোড় অঙ্ক হয়ে গেল। এদের যোগফল ২৬।

এ সপ্তাহের ধাঁধা
আমি কিছু কমলা কিনলাম। এদের মধ্যে প্রথম দিন চার ভাগের এক ভাগ খেয়ে ফেললাম। পরদিন খেলাম বাকি কমলার এক-তৃতীয়াংশ। পরদিন খেতে গিয়ে দেখি কমলা আছে মাত্র ২টি। এখন বলুন তো আমি কয়টা কমলা কিনেছিলাম?

খুব সহজ। অনলাইনে মন্তব্য আকারে অথবা [email protected] <mailto:[email protected]> ই-মেইলে আপনাদের উত্তর পাঠিয়ে দিন। সঠিক উত্তর দেখুন আগামী রোববার অনলাইনে।

গত সপ্তাহের ধাঁধার উত্তর

ধাঁধাটি ছিল এ রকম: ৮–এর চেয়ে বড় কোনো জোড় সংখ্যাকে ৮ দিয়ে ভাগ করলে ক্ষুদ্রতম অবশিষ্ট কত হতে পারে?
উত্তর:

প্রায় সবাই সঠিক উত্তর দিয়েছেন। তবে অনেকেই উত্তর ০ লিখেছেন। এটাও হতে পারে। কিন্তু যেহেতু প্রশ্ন ছিল ‘কত অবশিষ্ট’, তাই বুঝতে হবে যেকোনো সংখ্যা নিঃশেষে বিভাজ্য হলেই কেবল ০ অবশিষ্ট থাকে। কিন্তু নিঃশেষে বিভাজ্য হলে তো অবশিষ্ট থাকার প্রশ্নই আসে না। সবাইকে ধন্যবাদ।

কীভাবে উত্তর বের করলাম

সামান্য চিন্তা করলেই বোঝা যাবে। ৮ একটি জোড় সংখ্যা এবং অপর একটি বড় জোড় সংখ্যাকে ৮ দিয়ে ভাগ করতে হবে। সেই সংখ্যাটি যদি ৮ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য না হয়, তাহলে অবশিষ্ট অবশ্যই একটি জোড় সংখ্যা হবে। যেমন, ধরা যাক একটি জোড় সংখ্যা (৪ক ‍+ ৮)। এই সংখ্যাকে অপর একটি ছোট জোড় সংখ্যা (২ক ‍+ ২) দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকবে ৪। সবচেয়ে ছোট জোড় সংখ্যা যেহেতু ২, তাই ক্ষুদ্রতম অবশিষ্ট হতে পারে ২। যেমন: ৭৮, ৭৬, ও ৭৪, এই তিনটি জোড় সংখ্যাকে ৮ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকবে যথাক্রমে ৬, ৪ ও ২। তাই বলতে পারি, সম্ভাব্য ক্ষুদ্রতম অবশিষ্ট = ২।

আব্দুল কাইয়ুম, সম্পাদক, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা