ডিজিটাল লেনদেন

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন এখন বেশ জনপ্রিয়। ছবি: স্মার্ট সময়
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন এখন বেশ জনপ্রিয়। ছবি: স্মার্ট সময়

নগদ টাকায় কেনাকাটার পরিবর্তে এখন জনপ্রিয় হচ্ছে মোবাইল ওয়ালেটের মতো সেবা। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মুহূর্তেই টাকা পাঠানো, অনলাইনে বা বাজারের কোনো দোকান থেকে পণ্য কিনে দাম পরিশোধ করা, স্কুল-কলেজের ফিসহ গ্যাস–বিদ্যুৎ–পানির বিল, মোবাইল রিচার্জ করা, অ্যাপভিত্তিক যানবাহনের ভাড়া, বাস–ট্রেনের টিকিট কেনাসহ নিত্যদিনের নানা কাজে এখন মোবাইল ফোননির্ভর লেনদেন চলছে। বিকাশ, রকেট, নগদ, আইপে—সেবাগুলো এরই মধ্যে পরিচিত আমাদের কাছে। আর এগুলো হয়ে উঠেছে জীবনযাপনের অংশ।

কী কী প্রয়োজন
সেবাদাতা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আলাদা নীতিমালা রয়েছে। তবে মোবাইল ফোনের লেনদেন অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ওয়ালেট খুলতে প্রথমেই দরকার হবে একটি মোবাইল ফোন। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও পাসপোর্ট আকারের ছবি। এরপর কয়েকটি তথ্য পূরণ করে খোলা যাবে মোবাইল ওয়ালেট।

বিকাশ
বিকাশ

বিকাশ
অ্যাকাউন্ট খোলার পর *২৪৭# ডায়াল করে বিকাশ মোবাইল মেন্যুতে যেতে হবে। এরপর ‘অ্যাকটিভেট মোবাইল মেনু’ বেছে নিন। বিকাশ অ্যাকাউন্টের জন্য ৫ ডিজিটের পিন নম্বরটি প্রবেশ করতে হবে। কনফার্ম করার জন্য আপনার পিন নম্বরটি আবার প্রবেশ করান। সব প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হবার পর আপনার মোবাইল নম্বরটি একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর হিসেবে গণ্য হবে।

রকেট
রকেট

রকেট
রকেট অ্যাকাউন্ট খুলতে মোবাইল থেকে *৩২২# ডায়াল করুন। রিপ্লাই চেপে ১ লিখে OK করুন। রিপ্লাই চেপে আপনার পছন্দমতো ৪ (চার) সংখ্যার গোপন পিন লিখে OK করুন। এরপর প্রি-রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে এবং আপনি অ্যাকাউন্ট নাম্বারটি (চেক ডিজিটসহ) এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারবেন। অ্যাকাউন্ট খোলার পর নিদিষ্ট স্থানে অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরম (কেওয়াইসি) পূরণ করে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ ও স্বাক্ষর দিয়ে জমা দেওয়া ৩-৫ কার্য দিবসের মধ্যে আপনার অ্যাকাউন্টটি চালু হয়ে যাবে।

নগদ
নগদ

নগদ
নগদ উদ্যোক্তা পয়েন্ট থেকেই নগদ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। নগদ ব্যবহার করা যাবে ইউএসএসডি (*১৬৭#) ডায়াল করে এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনাকে একটি ১৬ ডিজিটের অ্যাকাউন্ট নম্বর দেবে। এই অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহার করেও লেনদেনের কাজ করা যাবে। নগদ উদ্যোক্তা পয়েন্ট এবং মার্চেন্ট পয়েন্ট থেকে কিউআর কোডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন ও পেমেন্ট করা যাবে।

আইপে
আইপে

আইপে
স্মার্টফোন থেকে গুগল প্লে–স্টোরে গিয়ে আইপে অ্যাপ ডাউনলোড করে খুব সহজেই একটি ডিজিটাল ওয়ালেট খোলা যায় আইপেতে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস সমর্থিত স্মার্টফোন ছাড়াও ওমনি চ্যানেল সুবিধা নিয়ে ফিচার ফোন থেকে ব্রাউজারের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায় আইপে ওয়ালেট। অ্যাকাউন্ট খুলতে কেবল হিসাব ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, একটি ই-মেইল ও একটি পরিচয়পত্র আপলোড করলেই চলে।

নিরাপদ রাখুন মোবাইল ওয়ালেট
গ্রাহককে নানা রকম সুবিধা এনে দিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই মোবাইল ওয়ালেট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতে সক্রিয় অসাধু চক্র। অথচ নানান ছলে গ্রাহককে বোকা বানিয়ে টাকা সরিয়ে নেওয়ার যেসব ঘটনা ঘটছে, গ্রাহক সচেতন হলেই তা বন্ধ করা সম্ভব। ডিজিটাল ওয়ালেট কীভাবে সুরক্ষা করবেন, সে বিষয় পরামর্শ দিয়েছেন বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ।
 ব্যবহারকারীদের সব পরিচিতিতেই নিজের অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর গোপন রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পিন নম্বর কাউকে দেওয়া বা জানানো যাবে না। অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে, নতুন সেবা চালু করে দেওয়া হবে, চাকরি দেওয়া হবে, লটারি জিতেছেন, বিপদে সাহায্য করুন বা অন্য কোনো ধরনের হুমকি/ প্রলোভনে পড়ে পিন নম্বর শেয়ার করবেন না।
 অনেক গ্রাহক মোবাইল ফোনে অ্যাকাউন্টের নম্বর সংরক্ষণ করে রাখেন, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো কারণে মোবাইল হারিয়ে গেলে মোবাইল অ্যাকাউন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। সুতরাং পিন নম্বর, ইউজার আইডি মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখবেন না। সব সময় লেনদেন শেষে অ্যাকাউন্ট থেকে লগআউট করবেন।
 ‘বিকাশ বা রকেট থেকে বলছি’—এমন ফোন পেয়ে প্রতারণার শিকার হন গ্রাহক। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট একটা নম্বর থেকে গ্রাহককে কল করবে। যেমন বিকাশ থেকে ১৬২৪৭ নম্বর থেকে কল করবে। এর বাইরে যে নম্বর থেকে যেকোনো নম্বর থেকে ফোন এলেই বুঝতে হবে, প্রতারক ফোন করছে। এমনকি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন করে কখনোই পিন বা গোপন নম্বর জানতে চাওয়া হবে না। ফোনে কাকে তথ্য দিচ্ছেন, সে ব্যাপারে গ্রাহককে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
 অনেক ক্ষেত্রে প্রতারক নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে গ্রাহককে বলেন মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। এসএমএস কোন নম্বর থেকে এসেছে, তা যাচাই করে নেওয়া গ্রাহকের দায়িত্ব। এসএমএস এলেও নিজে ব্যালান্স চেক না করে ভুল করে দেওয়া টাকা ফেরত পাঠাবেন না।
 সচরাচর যেসব গ্রাহক প্রতারণার শিকার হন, তাঁদের ফোনে রেখে নির্দেশনা দেওয়া হয় এখন ১ চাপুন, এখন অ্যামাউন্ট দিন, পিন নম্বর দিন। কখনোই ফোনের নির্দেশনা অনুসারে বাটনে প্রেস করবেন না। ফোনের নির্দেশনা অনুসরণ করিয়ে আপনাকে দিয়েই আপনার অ্যাকাউন্টের টাকা প্রতারকের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিতে পারেন। বিকাশ থেকে বলছি বা অন্য কোনো পরিচয় দিলেও তার নির্দেশনা অনুসারে ফোনের বাটন প্রেস করবেন না।
 ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো বা অন্য কোনো মাধ্যমে খুব কাছের পরিচিত কেউ টাকা ধার চাইলে বা বিকাশ করতে বললে সঙ্গে সঙ্গে তা করবেন না। টাকা পাঠানোর আগে আসলেই তিনি টাকা ধার চেয়েছেন কি না, নিশ্চিত হয়ে নিন।
 আর্থিক লেনদেনের সেবা হওয়ার কারণে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) নির্ভর অ্যাপ ইনস্টলমেন্ট করে সুরক্ষিত করা হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই কাউকেই ওটিপি নম্বর শেয়ার করবেন না বা ওটিপির ম্যাসেজ শেয়ার করবেন না।