চার ক্যামেরার ফোনের জন্য চার তারকা

২০১৮ মডেলের গ্যালাক্সি এ৯-এর ঘোষণায় স্যামসাং ঘুরেফিরে বারবার বলেছে, বিশ্বের প্রথম চার ক্যামেরার স্মার্টফোন। বোঝাই যাচ্ছে, স্মার্টফোনটির মূল আকর্ষণ হলো পেছনে চার ক্যামেরা। অন্যান্য যন্ত্রাংশও কিন্তু মন্দ না। এতে ৬.৩ ইঞ্চি সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে, আট কোরের স্ন্যাপড্রাগন ৬৬০ প্রসেসর, ৬ বা ৮ গিগাবাইট র‍্যাম, ১২৮ গিগাবাইট রম এবং ৩৮০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি আছে। স্যামসাংয়ের মিড-রেঞ্জ ‘গ্যালাক্সি এ’ সিরিজের সর্বশেষ সংযোজন এ৯। বাজারে এসেছে গত মাসে। বাংলাদেশের আপাতত ৬ গিগাবাইট র‌্যামের সংস্করণে পাওয়া যাচ্ছে। দাম পড়বে ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা।
তবে দাম কিংবা যন্ত্রাংশ নয়, দুটো মিলিয়ে একজন ব্যবহারকারী স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে কেমন অভিজ্ঞতা পান, সেটাই হলো মূল বিষয়। সে ধারণা পেতেই তিন দিন স্মার্টফোনটি রাতদিন সঙ্গে রাখে অভিজ্ঞতা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

নকশা
স্যামসাংয়ের ভাষায়, ক্ল্যাসিক ব্ল্যাক, বাবলগাম পিংক ও লেমোনেড ব্লু রঙে পাওয়া যাবে গ্যালাক্সি এ৯। রিভিউর জন্য আমরা পেয়েছিলাম লেমোনেড ব্লু সংস্করণটি। এর পেছনের অংশে গাঢ় নীলের সঙ্গে হালকা সবুজাভের মিশেল (গ্র্যাডিয়েন্ট) চমৎকার লেগেছে। কাচ আর ধাতব পদার্থের সমন্বয়ে হালকা–পাতলা গড়নের গ্যালাক্সি এ৯-এ বেশ একটা ‘প্রিমিয়াম’ ভাব আছে। তবে একই বাজেটের অন্যান্য ফোনের সঙ্গে তুলনা করলে বিল্ড-কোয়ালিটি একটু দুর্বল মনে হয়েছে। বিল্ড কোয়ালিটি মানে হার্ডওয়্যারের গাঁথুনি। পেছনের দিকে আঙুল দিয়ে টোকা দিলে ব্যাপারটা বোঝা যায়। পেছনে চার ক্যামেরার নিচে ফ্ল্যাশলাইট ও তার ডান দিকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের অবস্থান খারাপ মনে হয়নি। স্মার্টফোনটি হাতে নিলে সহজেই সেন্সরে তর্জনী রাখা যায়, ফলে আনলক করা বেশ সহজ বলতে হবে। তা ছাড়া চেহারা দেখিয়ে ফোন আনলক করার প্রযুক্তি বেশ দ্রুত কাজ করে।
সব মিলিয়ে চারটি বোতাম। পাওয়ার বোতাম একটি, ভলিউম কমানো বা বাড়ানোর জন্য দুটি, আরেকটি বোতাম আছে ডিজিটাল সহকারী বিক্সবি চালুর জন্য। তবে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম হওয়ায় আগে থেকেই গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনস্টল করা থাকে। আর গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকলে বিক্সবি ব্যবহারের তেমন প্রয়োজন পড়ার কথা না। ফোনের ওপরের দিকে সিম ইজেক্টর, আর নিচের দিকে ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক, ইউএসবি টাইপ-সি চার্জিং পোর্ট ও স্পিকার।

তিন রঙে পাওয়া যায় এ৯
তিন রঙে পাওয়া যায় এ৯

ডিসপ্লে
চলচ্চিত্র দেখা বা গেম খেলার জন্য এককথায় চমৎকার। ১০৮০ x ২২২০ রেজল্যুশনের ৬.৩ ইঞ্চি সুপার অ্যামোলেড পর্দা বেশ উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১৮.৫:৯। আর নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস। পর্দার পিক্সেল ডেনসিটি একটু কম তবে খালি চোখে পার্থক্য ধরা কঠিন। পর্দার দুপাশে বেজেল বেশ চিকন। ওপরে আর নিচে খানিকটা বেজেল থাকলেও তা বেমানান না। পর্দার ওপরে মধ্যে আছে ইয়ারপিস। তার বাঁ দিকে অ্যামবিয়েন্ট লাইট সেন্সর আর ডান দিকে সেলফি ক্যামেরা।

ক্যামেরা
প্রথমে ক্যামেরা ও লেন্সগুলো সম্পর্কে তথ্য দেওয়া যাক। পেছনে চার ক্যামেরার মধ্যে সবার ওপরে ৮ মেগাপিক্সেল আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা। ২.৪ অ্যাপারচারের লেন্সের ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল ১২০ ডিগ্রি। তার নিচেই আছে দুই গুণ অপটিক্যাল জুমের ১০ মেগাপিক্সেল টেলিফটো ক্যামেরা। এটিও ২.৪ অ্যাপারচারের লেন্স। তার নিচে আছে ২৪ মেগাপিক্সেলের মূল ক্যামেরা। ১.৭ অ্যাপারচারের এই লেন্সে আছে অটোফোকাস সুবিধা। সবার নিচে ৫ মেগাপিক্সেলের ডেপথ সেন্সিং ক্যামেরা। ছবির মূল বিষয় ফোকাসে রেখে বাকি অংশ তুলনামূলক ঝাপসা করে দেওয়া বা বোকাহ আবহ যোগ করার কাজে লাগবে এটি। আর সামনে আছে ২৪ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা।
এই স্মার্টফোনের ক্যামেরা নিয়ে যতটা উচ্চবাচ্য স্যামসাং করেছে, ততটা ভালো ফল পাওয়া যায়নি। কিছুটা হতাশাজনকই বলতে হয়। ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সে তোলা ছবিগুলোতে বেশ গ্রেইন ছিল। আর পর্যাপ্ত আলোতে এ৯-এর মূল ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো বেশ ভালো হলেও কম আলোয় ছবির মান হতাশাজনক। একই কথা সেলফি ক্যামেরার বেলাতেও প্রযোজ্য।

পারফরম্যান্স
পারফরম্যান্স বা ফোনটির কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৬০ অকটাকোর প্রসেসর বেশ ভালো। যদিও একই বাজেটের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্মার্টফোনে আরও ভালো প্রসেসর ব্যবহার করা হয়, তবে দৈনন্দিন কাজের জন্য তা যথেষ্ট। আর সঙ্গে থাকছে ৬ গিগাবাইট ডিডিআর৪ র‍্যাম। এক অ্যাপ থেকে আরেক আপে যাওয়া, ওয়েব ব্রাউজ করা, মাল্টি-টাস্কিং সুবিধা ব্যবহার করায় তেমন কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে নিড ফর স্পিড সিরিজের ‘নো লিমিটস’ খেলতে গিয়ে লোড হতে বেশ সময় লেগেছে। আমরা আনতুতু বেঞ্চমার্ক অ্যাপ দিয়ে পারফরম্যান্স পরীক্ষা করে দেখছি। মোট স্কোর উঠেছে ১৩৫৬১৩, যা অনেক কম দামের স্মার্টফোনের তুলনায় বেশ কম। স্ট্রেস টেস্টের সময় স্মার্টফোনটি গরম হয়ে উঠলেও ঠান্ডা হতে বেশি সময় নেয়নি।

ব্যাটারি
৩৮০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির বিষয়ে স্যামসাং বলেছে, নির্বিঘ্নে দিনভর ‘হেভি ইউসেজ’ সম্ভব। মানে একবার পূর্ণ চার্জ দিয়ে সারা দিন যা ইচ্ছা চান করুন, চার্জার খুঁজতে হবে না। তাদের সে দাবির সত্যতা মিলেছে। আমার মূল ফোনের পাশাপাশি এটি ব্যবহার করেছি। এক চার্জে টানা দুদিন ব্যবহারে কোনো সমস্যা হয়নি। আবার ফাস্ট চার্জিং সমর্থন করায় চার্জ হতে তেমন সময় নেয় না। সব মিলিয়ে ব্যাটারি পারফরম্যান্স সন্তোষজনক।

শেষ কথা
পেছনে চার লেন্সের ক্যামেরা যোগ করে মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছে স্যামসাং। তবে ছবির মান আরও উন্নত হতে পারে। কারণ, ব্যবহারকারী দিন শেষে ছবির মান দেখেন, ক্যামেরার সংখ্যা গুনে তাঁর কী লাভ? ব্যাটারি দারুণ। তবে বাজার বিবেচনায় দাম একটু বেশিই।