শেয়ারবাজারে ব্যর্থ হয়ে আউটসোর্সিংয়ে সফল

শরিফুল ইসলাম। ছবি: সুমন ইউসুফ
শরিফুল ইসলাম। ছবি: সুমন ইউসুফ

স্বপ্ন তো সবাই দেখে। কারও স্বপ্ন রূপ পায় সাফল্যে, আবার কারও স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পারেন তাঁরা, যাঁদের মধ্যে রয়েছে মেধা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রম। এমনই একজন ফ্রিল্যান্সার শরিফুল ইসলাম। যিনি প্রিন্ট ডিজাইনে পেয়েছেন সেরা হওয়ার স্বীকৃতি। ২০১৬ সালে সেরা ৩৮২ এনভাটো অথোরদের একজন। আউটসোর্সিং কাজের জন্য ক্রিয়েটিভ অনলাইন বাজারে (মার্কেটপ্লেস) হয়েছেন ২০১৭ সালের সেরা হ্যান্ডপিক আইটেম অথোরদের একজন। ২০১৮ সালে আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিশ্বখ্যাত অ্যাডবি স্টক মার্কেটেও। শরিফুলের প্রথম আয় ছিল ৬২ ডলার। এখন মাসে ২ হাজারের বেশি ডলার আয় করেন তিনি।

শুরুর গল্প
রাজধানীর শনির আখড়ায় থাকেন শরিফুল ইসলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। বাবা-মা ও ছোট বোনকে নিয়েই ছোট পরিবার। আর পরিবারের বড় ছেলে শরিফুল। বন্ধুবান্ধব যখন চাকরিতে ব্যস্ত, শরিফুল তখন ফ্রিল্যান্সিং করা শুরু করেছেন। শিখেছেন কম্পিউটার গ্রাফিকস। এমন কাণ্ড দেখে খেপে গেলেন বাবা শাহাব উদ্দিন। কোনো কাজকর্ম নেই? শুধু বাসায় বসে বসে কম্পিউটারে সারা দিন-রাত জেগে কী করো? এসব বলেই শরিফুলের বাবা কম্পিউটারসহ যাবতীয় যন্ত্র ভেঙে ফেলেন।

বাবার এমন রাগ থাকাটা স্বাভাবিক। কারণ এর আগে ২০১০ সালে শরিফুল বাবার জমিয়ে রাখা পাঁচ লাখ টাকা মায়ের কাছ থেকে নিয়ে শেয়ার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। শেয়ার ব্যবসায় ধস নামলে পুরো টাকাটাই হারাতে হয় তাঁকে। বাসায় তৈরি হয় অশান্তি। ‘খুব খারাপ সময় কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু একটা বিশ্বাস ছিল, সঙ্গে জেদও, আউটসোর্সিং কাজে নিজেকে গড়ে তুলব।’ বললেন শরিফুল।

২০১৪ সালে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচির আওতায় ঢাকার ক্রিয়েটিভ আইটিতে গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স করেন শরিফুল। এরপর পুরোপুরি ফ্রিল্যান্সার বনে যান। বর্তমানেও একই কাজ করছেন তিনি।

প্রথম আলো ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারেন বিস্তারিত। সময়টা তখন ২০১৩-১৪। একটি সেমিনারে অংশ নেন ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটে। সেমিনারটি করেই গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স করার সিদ্ধান্ত নেন শরিফুল।

গ্রাফিক ডিজাইনের প্রিন্ট ও প্রকাশনা বিষয়ে নিজেকে বেশি উপযুক্ত মনে করেন শরিফুল। গ্রাফিক ডিজাইনের অনেক প্যাটার্ন আছে। লোগো, বিজ্ঞাপন, ব্যানার, বিজনেস কার্ড, পোস্টকার্ড ডিজাইন, পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনা, লেটারহেড ডিজাইন, বইয়ের অঙ্গসজ্জা, শেষ প্রচ্ছদ, রেস্তোরাঁর মেনু কার্ড ইত্যাদি ডিজাইন করেন তিনি।

শরিফুল মূলত রেডি টেম্পলেট নিয়ে কাজ করেন। গ্রাহক চাইলে নিজেই সেটা পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারেন। তিনি এনভাটো স্টুডিওতেও সেবা দেন। শরিফুলের বেশির ভাগ গ্রাহক যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার। দেশের বাজারে ২০১৪ সালের পর কখনোই কাজ করেননি তিনি।

শরিফুল তাঁর পেশার প্রথম দিককার কথা বলতে থাকেন, ‘সবাই যখন ধরেই নিয়েছে আমি হয়তো ভালো কিছু করতে পারব না; বিশেষ করে বাবা, তখন আমার মা আমার ওপর আস্থা বা বিশ্বাস কোনোটাই হারাননি। আমার প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে বাবাকে না জানিয়ে নীরবেই সহায়তা দেন। যতটুকু সাফল্য অর্জন করেছি, তার সবটুকু জুড়েই রয়েছে আমার মা।’