হুয়াওয়ে চরবৃত্তি করে না: রেন ঝেংফেই

হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী রেন ঝেংফেই।
হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী রেন ঝেংফেই।

চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছে না হুয়াওয়ে। এমনকি চীনা সরকার থেকে বিশেষ অনুরোধ এলেও হুয়াওয়ে কখনো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রদান করবে না। সম্প্রতি চীনে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ বিবৃতি দিয়েছেন প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী রেন ঝেংফেই।

হুয়াওয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কিছুদিন ধরে নিরাপত্তা বিষয়ে যে রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছিল, এর পরিপ্রেক্ষিতে রেন এই বিবৃতি দিয়েছেন। মার্কিন প্রশাসন থেকে দাবি করা হচ্ছিল, হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে চীন সরকার গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এটা সত্যি নয় বলে দাবি করেছেন রেন।

সাবেক পিপলস লিবারেশন আর্মির সেনা রেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জানান, বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও গ্রাহকদের ক্ষতি হয়—এমন কোনো কাজ তিনি করবেন না এবং সেটা তাঁর নিজের পার্টি বললেও না। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরও ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, ‘ট্রাম্প একজন অসাধারণ প্রেসিডেন্ট।’

রেন হুয়াওয়ের চীনের শেনজেনে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘গ্রাহকদের সাইবার নিরাপত্তা এবং প্রাইভেসি সুরক্ষার ব্যাপারে সব সময় আমরা তাদের পাশে আছি। আমরা কখনই কোনো জাতি অথবা ব্যক্তির ক্ষতি হয়—এমন কিছুই করব না।’

রেন বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যায় বলেছে, চীনের আইন অনুযায়ী চীনা কোনো প্রতিষ্ঠানকেই গুপ্তচরবৃত্তিতে যুক্ত করা দণ্ডনীয়। হুয়াওয়ে কিংবা আমার কাছে কখনো চীনা সরকারের পক্ষ থেকে এমন অনুরোধ আসেনি।’

রেন ও সরকারের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্ক কখনো গ্রাহকদের তথ্যকে তৃতীয় পক্ষের হাতে তুলে দিতে পারে কি না—এমন প্রশ্নে রেন বলেন, ‘ব্যবসায়িক নীতিতে সব সময় গ্রাহকদের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে এবং একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের ব্যবসায়িক নীতি মেনে চলতে হয়। সুতরাং আমি সরকারের সঙ্গে আমার সম্পর্ককে কোনো বড় বাধা হিসেবে দেখছি না। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আমার অবস্থান খুবই স্পষ্ট এবং আমরা এ ধরনের যেকোনো অনুরোধকে না বলব।’

রেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি এখনো বিশ্বাস করি, ট্রাম্প একজন অসাধারণ প্রেসিডেন্ট। করনীতির প্রশ্নে তাঁর অবস্থান অনেক শক্তিশালী ছিল। আমি মনে করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পোন্নয়নে তাঁর এই অবস্থান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

রেনকে তাঁর মেয়ের গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনব্যবস্থার ওপর তাঁর পূর্ণ আস্থা আছে। তিনি বিশ্বাস করেন, শিগগিরই তিনি সুবিচার পাবেন।

২০১৯ সাল হুয়াওয়ের ব্যবসার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই বছরে তারা ১২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যবসায়িক মুনাফা অর্জন করতে চায়। যদিও হুয়াওয়ে ২০১৮ সালে তাদের অর্জিত মুনাফা কত, তা প্রকাশ করেনি।

রেন বলেন, ‘২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে হুয়াওয়েকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। অনেক বছর ধরেই আমরা গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রচুর বিনিয়োগ করছি। সে ক্ষেত্রে জেডটিইর ভাগ্যে যা ঘটেছে, হুয়াওয়ের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটবে না।’

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যখন একটি টানাপোড়েনের সম্পর্ক চলছে, ঠিক তখনই গ্রেপ্তার হন মেং ওয়ানঝু। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণ অনুরোধে গত ১ ডিসেম্বর কানাডার ভাঙ্কুভার বিমানবন্দরে হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতার মেয়ে মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানে প্রযুক্তি বিক্রি করার অভিযোগ করা হচ্ছে। তিনি হংকং থেকে মেক্সিকো যাচ্ছিলেন। ভাঙ্কুভার বিমানবন্দরে তাঁর যাত্রাবিরতি ছিল।

এই গ্রেপ্তারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করে মেং ওয়ানঝুর মুক্তি চেয়েছে বেইজিং। দোষী সাব্যস্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।