সত্যের প্রধান হয়ে ওঠা

সত্য নারায়ণ নাদেলা
সত্য নারায়ণ নাদেলা

কর্ণাটকের মানিপাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি কলেজের পরিচালক ভিনোদ থমাস তাঁর স্মৃতি হাতড়ে ৮৪১৯২১৮ নিবন্ধন নম্বরের ছাত্রটির হদিস বের করতে পারছিলেন না। আজ থেকে ২৫ বছর আগে তাঁকে পড়িয়েছিলেন তিনি। একনজরেই দৃষ্টি কাড়ে এমন কিছু অবশ্য ছাত্রটির ছিল না। শেষে স্কুলের নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেল, তিনি ছিলেন প্রথম সারির ছাত্রদের একজন। সেদিনের সেই ছাত্রটিই হলেন বর্তমানে মাইক্রোসফট করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নারায়ণ নাদেলা।
ভারতের হায়দরাবাদে ১৯৬৭ সালে জন্ম নেওয়া সত্য নাদেলা মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন ২২ বছর আগে। বিল গেটস ও স্টিভ বালমারের পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হয়ে সম্মানিত বোধ করার পাশাপাশি যথেষ্ট বিনয়ীও সত্য নাদেলা। প্রযুক্তির এই সাম্রাজ্য নিয়ে নাদেলার নিজস্ব মূল্যায়ন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যকে সম্মান করে না, কেবল উদ্ভাবনী ক্ষমতাকেই শ্রদ্ধা জানায়’। বলতে গেলে ঠিক এ কারণেই তিনি প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পেলেন।
মাইক্রোসফটের পর্দার অন্তরালের কারিগর তিনি। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা (সিআরএম) ও এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (ইআরএম) সিস্টেম অর্থাৎ ডাইনামিকস তৈরি করেছেন তিনি। এ ছাড়া সার্চ ইঞ্জিন বিং এবং অনলাইনভিত্তিক ক্লাউড সেবাতেও রয়েছে তাঁর অবদান। এ জন্য স্বয়ং বিল গেটসের কাছ থেকেই পেয়েছেন চমৎকার সনদ, প্রকৌশলীর নিপুণ দক্ষতা, ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি আর লোকজন সংগঠিত করার ক্ষমতা—সব মিলিয়ে সত্য একজন পরীক্ষিত নেতা।
৪৬ বছর বয়সী নাদেলার বেড়ে ওঠা ভারতেই। ক্রিকেট তাঁর কাছে নেশার মতো। আজ তাঁর এই যে উত্থান, এর পেছনেও রয়েছে ক্রিকেটের অবদান। একবার হায়দরাবাদ স্কুলের পক্ষে খেলা ক্রিকেট ম্যাচে যাচ্ছেতাই বল করছিলেন তিনি। স্কুল ক্রিকেটের অধিনায়ক ব্যাপারটা খেয়াল করলেন। পরের ওভারে অধিনায়ক নিজেই বোলিং করে দলের জন্য এনে দিলেন অতিপ্রয়োজনীয় এক ব্রেক-থ্রু। এরপর আবার নাদেলাকে দিলেন বল করতে। এ ঘটনা তিনি কখনো ভোলেননি। নেতৃত্বদানের বিষয়টা তিনি শিখেছিলেন এখান থেকেই।
শিক্ষার্থী হিসেবেও সত্য নাদেলা অসাধারণ। একজন প্রযুক্তিবিদ হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল সান মাইক্রোসিস্টেমে। ১৯৯২ সালে তিনি যখন মাইক্রোসফটে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পান, তখন তিনি ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করছিলেন। মাইক্রোসফট সে সময় উইন্ডোজ এনটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করছিল। ইউনিকস এবং ৩২-বিট অপারেটিং সিস্টেমের কাজ জানেন এমন লোক খোঁজ করছিল মাইক্রোসফট। এদিকে নাদেলা চাইছিলেন স্নাতকোত্তর শেষ করতে, আবার মাইক্রোসফটে চাকরির প্রস্তাবটাও ছাড়তে চাইছিলেন না। শেষ পর্যন্ত দুটোই সম্পন্ন করেছেন। প্রতি সপ্তাহে বিমানে উড়ে যেতেন শিকাগো, শনিবার ক্লাস করে আবার রেডমন্ডে এসে সপ্তাহের কাজে যোগ দিতেন। এভাবে আড়াই বছর সময় লেগেছিল, তবু তিনি তাঁর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।
মাইক্রোসফটের নতুন এই প্রধান নির্বাহী কবিতা পড়ে মনে প্রশান্তি খুঁজে পান। সব ধরনের কবিতাই তিনি পড়েন, হোক সেটা ভারতীয় কিংবা আমেরিকান। তাঁর কাছে সেরা সংকেত বা কোড হলো এই কবিতা। টেস্ট ক্রিকেটটাও উপভোগ করেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেট তাঁর কাছে অনেকটা রুশ উপন্যাসের মতো, যেখানে প্রচুর উপকাহিনি থাকে।
নতুন প্রধান নির্বাহী হিসেবে সত্য নাদেলার এখানকার চ্যালেঞ্জ হবে উইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেমসহ মাইক্রোসফটে যেসব বাধাবিপত্তি আছে সেগুলো কাটিয়ে ওঠা। কে জানে, তাঁর উদ্ভাবনী প্রতিভা আর নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কারে হয়তো ভবিষ্যৎ পৃথিবীর গতিধারাই বদলে যেতে পারে।