দেশের ঘরে দেশি স্মার্ট টিভি

ওয়ালটনের কারখানায় তৈরির পর চলছে টিভির পরীক্ষা
ওয়ালটনের কারখানায় তৈরির পর চলছে টিভির পরীক্ষা

দেশেই এখন সংযোজন করা হচ্ছে স্মার্ট টিভি। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সংযোজিত স্মার্ট টিভির প্রতি আগ্রহও বাড়ছে ক্রেতাদের। দেশে এখন দুটি প্রতিষ্ঠানের স্মার্ট টিভি সংযোজনের কারখানা আছে। একটি হচ্ছে ওয়ালটন ও আরেকটি মিনিস্টার।

টিভি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ১৯৯৫ সালের পর থেকে সাদাকালো টেলিভিশন সংযোজনের মাধ্যমে দেশে গড়ে ওঠে টেলিভিশন সংযোজন শিল্প। দেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সংযোজন কারখানা গড়ে ওঠে। পরে রঙিন টিভির চাহিদা বেড়েছে। দেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিভি সংযোজন শুরু হলেও কারখানা স্থাপন করে বড় আকারে উৎপাদন পর্যায়ে গেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে স্মার্ট টিভি সংযোজনের মতো বড় পরিসরে কাজ করছে ওয়ালটন ও মিনিস্টার।

ওয়ালটন আগামী বছর স্মার্ট টিভিসহ প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শোতে (সিইএস) অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ২০১২ থেকে ওয়ালটন আর ২০১৫ সাল থেকে মিনিস্টার স্মার্ট টিভি সংযোজন শুরু করে।

টেলিভিশন আমদানিকারকদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টিভি সেটের চাহিদা রয়েছে। তবে এর বাইরের বাজারের (গ্রে মার্কেট) পণ্যও অনেক বিক্রি হয়। তাই টিভির বাজার আরও বড়। টিভি বাজারে গত দুই বছর থেকে স্মার্ট টিভির চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। টিভির বাজারের ৪০ শতাংশ বাজার দখল করেছে দেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটন। মিনিস্টারের বাজারও বাড়ছে।

ওয়ালটন ও মিনিস্টার কর্তৃপক্ষ বলেছে, দেশে দ্রুতগতিতে স্মার্ট টিভির চাহিদা বাড়ছে। চলতি বছরে মোট টিভির মধ্যে স্মার্ট টিভির চাহিদা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এসব টিভির অধিকাংশই এলইডি প্রযুক্তির। টিভির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কোরিয়া, চীন, তাইওয়ানসহ বিশ্বের সাতটি দেশ থেকে আনা হয়। কিছু যন্ত্রাংশ দেশের কারখানায় তৈরি হয়। এরপর দেশেই সংযোজন করা হয় এসব টিভি। দেশে সংযোজন করার ফলে এসব টিভি দামে সাশ্রয়ী ও মানসম্পন্ন হয়।

ওয়ালটন টেলিভিশন বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা নাহিদ হোসেন জানান, ২০১২ সাল থেকে দেশেই টেলিভিশন উৎপাদন করছে ওয়ালটন। দেশের স্মার্ট টিভির চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ পূরণ করে ওয়ালটন।

সম্প্রতি স্মার্ট টিভিতে অ্যান্ড্রয়েড ৭ অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত ৩২, ৩৯ ও ৪৩ ইঞ্চির নতুন মডেলের টিভি বাজারে ছেড়েছে ওয়ালটন। নতুন মডেলের প্রতিটি টিভিতে রয়েছে ১ গিগাবাইট র‌্যাম ও ৮ গিগাবাইট মেমোরি প্রযুক্তি। নিয়মিত গবেষণার মাধ্যমে এলইডি ও স্মার্ট টেলিভিশন উৎপাদন করছে তারা। টিভির মান যেমন উন্নত হয়েছে, তেমনি কমেছে উৎপাদন খরচও। তাই ২৩ হাজার ৮০০ টাকায় গ্রাহকদের দিচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ৭ অপারেটিং সিস্টেমের ৩২ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি।

মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড মিডিয়া কে এম জি কিবরিয়া বলেন, ২০১৫ সাল থেকে স্মার্ট টিভি সংযোজন শুরু হয়েছে। বর্তমানে ময়মনসিংহের ত্রিশালে এবং গাজীপুরে দুটি কারখানা রয়েছে। সেখানে ৫ হাজার কর্মী কাজ করছেন। প্রতিদিন এক হাজার টিভি সংযোজন করছেন তাঁরা। স্মার্ট টিভির চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে। দাম ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে থাকায় ৩২ ও ৪৩ ইঞ্চি মাপের টিভির চাহিদা বেশি। এখন বাণিজ্য মেলা চলছে। এখানে ৫৫ ইঞ্চি মাপের ৪কে টিভির ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে। মিনিস্টারের ১২ হাজার থেকে ৯৯ হাজার টাকা দামের টিভি আছে।

মিনিস্টারের কারখানায় তৈরি হচ্ছে স্মার্ট টিভি
মিনিস্টারের কারখানায় তৈরি হচ্ছে স্মার্ট টিভি

ওয়ালটনের উপনির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম বলেন, একসময় স্থানীয় টেলিভিশন বাজার ছিল আমদানিনির্ভর। কিন্তু দেশেই আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের টেলিভিশন উৎপাদন শিল্প স্থাপিত হওয়ায় সেই চিত্র বদলেছে। টেলিভিশন উৎপাদন খাতে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।

উন্নত বৈশিষ্ট্য ও গবেষণায় জোর

সাশ্রয়ী মূল্যের স্মার্ট টিভিতে এখন দেশের ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। গত বছরের ফুটবল বিশ্বকাপ ও এবারের বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে ইতিমধ্যে স্মার্ট টিভিতে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

কিবরিয়া বলেন, মিনিস্টারের স্মার্ট টিভি ঘিরে আগ্রহ বেড়েছে। তাদের উৎপাদন বাড়ছে। আগামী কয়েক বছরে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ বলছে, এরই মধ্যে টেলিভিশন গবেষণা ও মানোন্নয়নে আরও বিশাল পরিমাণ বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারিজের সমন্বয়ে নতুন প্রোডাকশন লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন স্থানীয় বাজারে ৩২, ৩৯, ৪৩, ৪৯ ও ৫৫ ইঞ্চির সর্বমোট ২৫টি মডেলের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ ও ৪৯ ইঞ্চিতে রয়েছে ১টি করে মডেল, ৪৩ ইঞ্চিতে ৩টি মডেল এবং ৩৯ ইঞ্চিতে ৫টি মডেল। তবে মধ্যম আয়ের গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে ৩২ ইঞ্চির স্মার্ট টিভিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অর্থাৎ ১৫টি মডেল রয়েছে। ওয়ালটনের বড় পর্দার ৫৫ ও ৪৯ ইঞ্চির স্মার্ট টিভির দাম পড়ছে যথাক্রমে ৬৯ হাজার ৯০০ টাকা এবং ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা।

ওয়ালটনের টেলিভিশন বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, রিমোট ছাড়াই গ্রাহকের হ্যান্ডসেটে ইনস্টলকৃত ই-শেয়ার অ্যাপসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ওয়ালটনের স্মার্ট টিভি। ই-শেয়ার থেকে গ্রাহক তাঁর সুবিধামতো কি–রিমোট, টাচ রিমোট, মাউস ও এয়ার মাউস মোট চারটি ভিন্ন ফরম্যাটের রিমোট অপশন বেছে নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে গ্রাহক ঘরের যেকোনো প্রান্ত থেকেও মুঠোফোনে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন টিভির কনটেন্ট। মোবাইল থেকে টিভিতে ইমেজ, ভিডিও ও গেমস মিররিং সুবিধা রয়েছে।

ওয়ালটন টেলিভিশন বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, গ্রাহকদের সময়োপযোগী পণ্য উপহার দিতে ওয়ালটন গড়ে তুলেছে দেশের অন্যতম বড় টেলিভিশন গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ। যেখানে কাজ করছেন উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী ও দক্ষ প্রকৌশলীরা। তাঁরা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওয়ালটন টিভিতে প্রতিনিয়ত সংযোজন করছেন সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি। নিশ্চিত করছেন টিভির আন্তর্জাতিক মান।

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ওয়ালটন টিভি এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। গুণগত উচ্চমান এবং দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে রপ্তানি বাজার। ওয়ালটন টিভিতে রয়েছে ছয় মাসের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টিসহ এলইডি প্যানেল ও খুচরা যন্ত্রাংশে দুই বছরের ওয়ারেন্টি ও পাঁচ বছরের বিনা মূল্যে বিক্রয়োত্তর সুবিধা। আরও রয়েছে আইএসও সনদপ্রাপ্ত সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের আওতায় দেশব্যাপী বিস্তৃত সার্ভিস পয়েন্ট থেকে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা।