পরকীয়ার পরিণতি, নাকি রাজনীতি?

লরা সানচেজের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন জেফ বেজোস
লরা সানচেজের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন জেফ বেজোস

বিপদে জেফ বেজোস। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে সংসার ভেঙেছে তাঁর। প্রেমিকাকে অনলাইনে পাঠানো নোংরা বার্তা ও ছবির কথা জানাজানি হয়ে গেছে। এ নিয়ে ব্যক্তিগত মর্যাদার ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। ওই সব নোংরা ছবির মধ্যে যেমন তাঁর অন্তরঙ্গ ছবি রয়েছে, তেমনি সম্মানহানি হওয়ার মতো নানা বিষয় রয়েছে।

এগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাবলয়েড ম্যাগাজিন ন্যাশনাল এনকোয়ারের হাতে। ওই ম্যাগাজিনটির মালিকপক্ষ আবার বেজোস বিরোধীপক্ষ, অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পঘনিষ্ঠ।

বেজোস দাবি করছেন, পুরো ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর বিপরীত বিবৃতি দাবি করে ওই ছবি প্রকাশ করার হুমকি দিয়েছে ট্যাবলয়েড কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটিকে ব্ল্যাকমেল বলে উল্লেখ করেছেন বেজোস। তিনি এক ব্লগ পোস্টে ন্যাশনাল এনকোয়ারের আইনজীবীর পাঠানো ই–মেইল প্রকাশ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্ল্যাকমেলে আত্মসমর্পণ করবেন না তিনি। যদিও তিনি সম্মানহানির বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তিনি চান না, অস্বস্তিকর কোনো ব্যক্তিগত ছবি জনসমক্ষে আসুক। তিনি সাংবাদিকতার সুনামকে অস্ত্র না করার আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্য, বেজোস নিজেও ওয়াশিংটন পত্রিকার মালিক।

বেজোসের এ বিপাকে পড়ার ঘটনা গত জানুয়ারিতে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণার পর থেকে শুরু হয়। গত ৮ জানুয়ারি ২৫ বছর সংসার করার পরই স্ত্রী ম্যাকেনজির সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা আসে। বেজোস ও তাঁর স্ত্রী ম্যাকেনজি বেজোস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচ্ছেদের কথা জানান। তাঁদের চার সন্তান রয়েছে। ব্লুমবার্গ জানায়, টুইটারের এক বার্তায় জেফ বেজোস ও ম্যাকেনজি বেজোস নিজেদের আগামীতে আলাদা থাকার কথা জানান। হেজ ফান্ড ডি. ই-তে কাজ করার সময় জেভ বেজোস ও ম্যাকেনজির পরিচয়। ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। এর এক বছর পরেই জেফ আমাজন চালু করেন।

অবশ্য বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা আসার পরই এর কারণ অনুসন্ধানে নেমে পড়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যে এনকোয়ারের দাবি করে, তাদের কাছে রয়েছে বেজোসের প্রেমিকা সাবেক টিভি উপস্থাপিকা লরা সানচেজের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি। স্ত্রী ম্যাকেনজির সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়ার তিন মাস আগে এমনই এক প্রেমময় নৈশভোজে মিলিত হয়েছিলেন তাঁরা। সেই অন্তরঙ্গ সময়ের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ হয়ে যায়। তাতে দেখা যায়, স্ত্রীকে রেখে প্রেমিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন বেজোস। গত বছরের ৩০ অক্টোবর লস অ্যাঞ্জেলেসের এক হোটেলে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নৈশভোজে মেতে ওঠেন জেফ বেজোস ও লরা। এনকোয়ার দাবি করে, সেখানে তাদের ঘনিষ্ঠতা দেখা যায়। এর বাইরে লরাকে লেখা নানা রগরগে বার্তা ফাঁস হয়ে যায় অনলাইনে।

বার্তা নিয়ে যতটা চিন্তিত তার চেয়ে বেজোস বেশি চিন্তিত তা কীভাবে ফাঁস হলো তা নিয়ে। তাঁর অন্যান্য অ্যাকাউন্ট ঠিক আছে তো? এসব বার্তা ও ছবি কীভাবে ফাঁস হলো তা অনুসন্ধান শুরু করেছেন তিনি। তাঁর নিরাপত্তাবিষয়ক টিম সন্দেহ করছে, এই ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কোনো মিত্র বা মিত্ররা। বেজোস তাঁর এক ব্লগ পোস্টে বলেছেন, ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক হয়ে তিনি অনেক শক্তিশালী মানুষের শত্রু হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এএমআইয়ের বস ডেভিড পেকারের বন্ধু।

ট্রাম্পের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই বেজোসের ঝামেলা চলছে। বেজোস ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরোধিতায় সোচ্চার ছিলেন। এ ছাড়া বেজোস ওয়াশিংটন পোস্টেরও মালিক। ট্রাম্প নিয়মিত পত্রিকাটির সংবাদ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে আসছেন। তাই নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প আমাজনের সমালোচনা করে আসছিলেন। তাই বেজোসকে ফাঁসাতে পরকীয়ার কাহিনি সাজানো কি না, তা–ও সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। বেজোসের ব্যক্তিগত ছবি কীভাবে অন্যের হাতে গেল, তা খুঁজে দেখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে বেজোসের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দল তৎপর হয়ে উঠেছে। তাঁর ব্যক্তিগত ফোন পরীক্ষা করে দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্য ডেইলি বিস্ট বলছে, সানচেজ সন্দেহের বাইরে। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, বেজোসের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এর পেছনে পুরোটাই রাজনীতি। জেফ বেজোস ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে সাপে-নেউলের সম্পর্কের পরিণতি।

ব্লুমবার্গের কোটিপতি সূচক অনুসারে, ৫৪ বছর বয়সের জেফ বেজোসের এখন সম্পদের পরিমাণ ১৩৭ বিলিয়ন ডলার। বিবিসি বলছে, ট্রাম্প চটে আছেন বেজোসের ওপর। তাঁর অভিযোগ আমাজনের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ডাক বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের ডাকব্যবস্থাকে ডেলিভারিম্যান হিসেবে সস্তায় ব্যবহার করছে আমাজন। আমাজন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোকে সঠিক কর দেয় না বলেও অভিযোগ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমাজনের কারণে অনেক খুচরা ব্যবসায়ী তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। এ ছাড়া আমাজনের তদবিরকারী হিসেবে ওয়াশিংটন পোস্টকেও খোঁচা দেন ট্রাম্প। এর আগে টুইটারে ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজনের সমালোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কর আর চাকরি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অভিযুক্ত করেন তিনি।

স্ত্রী ম্যাকেনজির সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ
স্ত্রী ম্যাকেনজির সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ

ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও ব্ল্যাকমেলের বিষয়টিকে অবশ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন বেজোস। ব্লগ পোস্টে বেজোস লিখেছেন, তাদের দীর্ঘদিনের ব্ল্যাকমেল চর্চা, রাজনৈতিক পক্ষপাত, রাজনৈতিক আক্রমণ ও দুর্নীতিতে আমি অংশ নিতে চাই না। আমি এর বিরুদ্ধে দাঁড়াব। কী ঘটে আমিও দেখতে চাই।

বেজোসের উঠে আসার গল্প
শীর্ষ ধনী কিংবা সফল ব্যক্তিদের অনেকের বেলায় যেমনটা দেখা যায়—একেবারে সাধারণ জায়গা থেকে উঠে আসা, জেফের বেলায় ব্যাপারটা তেমন নয়। জেফ যখন ছোট, মা জ্যাকলিনের পরিবারের জমির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার একর। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া জমি এবং পরে নিজের কেনা জমি মিলিয়ে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে জেফ বেজোস হয়ে ওঠেন টেক্সাসের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমির মালিক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই দেখা যায় জেফ বেজোসের মধ্যে। ছোট ভাইবোনদের এটা–সেটা দিয়ে একটা অ্যালার্ম ঘড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানের নানা আয়োজনে অংশ নিতেন নিয়মিত।
জেফ বেজোসের জন্ম ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের আলবুকার্কে। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিকসের প্রতি ছিল তাঁর ব্যাপক আগ্রহ। ষাটের দশকের জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন সিরিজ ‘স্টার ট্রেক’-এর বিশেষ ভক্ত তিনি। স্কুলে পড়ার সময়ই নিজেদের বাড়ির গ্যারেজে তৈরি করেন একটি ছোট গবেষণাগার। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কীভাবে কাজ করে তার খুঁটিনাটি জানতে দিনের বেশির ভাগ সময় ওই গ্যারেজেই পড়ে থাকতেন তিনি। স্কুল ও উচ্চমাধ্যমিক পেরোনোর পর জেফ বেজোস নিজের প্রিয় বিষয় কম্পিউটার অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তি হন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৬ সালে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে প্রিন্সটন থেকে কম্পিউটার অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করেন তিনি। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাতের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি কোম্পানিতে কাজ করেন। ডিই শ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় তাঁর মাথায় ঘুরতে থাকে ইন্টারনেটের অপার সম্ভাবনার কথা। ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে নতুন কী ব্যবসা দাঁড় করানো যায়, তখন সেটিই ছিল তাঁর মূল ভাবনা।

আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বেজোস জানিয়েছিলেন, বিশ্বের সেরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের পরিকল্পনা নিউইয়র্ক থেকে সিয়াটলে গাড়ি চালানোর সময় করেছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে ডিই শর চাকরি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে চলে যান। সেখানে এক বছর গবেষণার পর নিজের বাড়ির গ্যারেজে ১৯৯৫ সালের ১৬ জুলাই প্রতিষ্ঠা করেন আমাজন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে বই বিক্রি করাই ছিল বেজোসের প্রথম ব্যবসা। প্রথম এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪৫টি দেশে অনলাইনে ২০ হাজার ডলার বা ১৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করে আমাজন। সে সময় অনলাইনে বইয়ের এমন বিক্রি ছিল অনেকটা অভাবনীয়।

এরপর শুরু হয় আমাজনের জয়যাত্রা। ১৯৯৮ সালে বইয়ের বাইরে গান ও সিনেমার সিডি বিক্রি করতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৭ সালে ডিজিটাল মাধ্যমে বই পড়ার যন্ত্র ‘কিন্ডেল’ বাজারে নিয়ে আসেন বেজোস। স্ক্রেপহিরো নামের একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আমাজনের পণ্যসম্ভারে ৪০ কোটি পণ্য আছে।

বেজোস প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবেও পরিচিত। ২০০০ সালে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন প্রতিষ্ঠা করেন। নিত্যনতুন উপায়ে আমাজনের ব্যবসা বাড়ানোর পাশাপাশি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে ২৫ কোটি ডলারে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাটি কিনে নেন তিনি। বেজোস দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকাটি। বেজোস এক্সপেডিশন নামে ব্যক্তিগত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করেন বেজোস। গুগলে প্রথম দিককার বিনিয়োগকারী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। অভিনয়ের অভিজ্ঞতাও নিয়েছেন জেফ। ২০১৬ সালে স্টার ট্রেক বিওয়াইন্ড-এ অভিনয় করেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দা–কুমড়ো সম্পর্ক বেজোসের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দা–কুমড়ো সম্পর্ক বেজোসের।


ট্রাম্পের সঙ্গে দা-কুমড়ো
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জেফ বেজোসের দা-কুমড়ো সম্পর্কের কারণ ওয়াশিংটন পোস্ট। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের যোগ্যতা নিয়ে বরাবরই সন্দেহ প্রকাশ করে এসেছে বেজোসের মালিকানাধীন পত্রিকাটি। বিষয়টিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে ট্রাম্প এখন সুযোগ পেলেই বেজোস ও আমাজনকে আক্রমণ করেন। ট্রাম্প পত্রিকাটিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘দ্য আমাজন ওয়াশিংটন পোস্ট’। তাঁর ভাষায়, ‘ফেক নিউজ’ বা ভুয়া খবর পরিবেশনকারী এই পত্রিকাটি ঠিকভাবে ইন্টারনেট কর দেয় না। ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মানুচিন সম্প্রতি ঘোষণা দেন, আমাজনের কর আদায়ের পুরো প্রক্রিয়া তদন্ত করে দেখা হবে। জেফ বেজোসের একটি বড় সমালোচনা হলো, বিলিয়নিয়ার বা শত কোটিপতি হলেও নিজের সম্পদ দান করার ব্যাপারে খুবই কৃপণ তিনি। এ ক্ষেত্রে বিল গেটস বা ওয়ারেন বাফেট, এমনকি ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের ধারেকাছে নেই তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৫ ধনীর মধ্যে জেফ বেজোসই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ‘গিভিং প্লেজ’ কার্যক্রমে যোগ দেননি। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের আয় করা মোট সম্পদের অর্ধেক বা তার বেশি সম্পদ দান করার পরিকল্পনাই হলো গিভিং প্লেজ। বিল গেটস যেখানে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দান করেছেন ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার, সে তুলনায় ২০১৫ সাল পর্যন্ত বেজোস দান করেছেন মাত্র ১০ কোটি ডলার। অবশ্য গত জুনে নিজের সম্পদ কীভাবে মানবকল্যাণে ব্যয় করা যায়, সে জন্য টুইটারে সবার পরামর্শ চান বেজোস। তবে ‘ব্লু অরিজিন’ নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেটি মহাকাশে পরিবহনের খরচ কমিয়ে আনার জন্য গবেষণা করছে। এ ছাড়া বেজোস ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন নামের পারিবারিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানেও অর্থ দেন তিনি।

প্রেম করে বিয়ে, আবার পরকীয়া
জেফ বেজোস সেই বিরল সিইওদের একজন, যিনি সব কর্মী নিয়োগের সময় ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজে উপস্থিত থাকেন। আমাজনের প্রথম এক দশকে এই নিয়মের তো কোনো ব্যত্যয়ই ঘটেনি। প্রযুক্তির সংবাদভিত্তিক অনলাইন গণমাধ্যম ওয়্যারড ২০০০ সালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। আমাজনের প্রত্যেক কর্মীর নিয়োগ সাক্ষাৎকারে উপস্থিত থাকতেন প্রতিষ্ঠানের সিইও। তিনি সাদা বোর্ডে নিয়োগপ্রার্থীর জন্য নানা প্রশ্ন, তথ্য-উপাত্ত লিখে রাখতেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর সঙ্গে কথা বলতেন। আমাজনের একজন সাবেক কর্মী বলেছিলেন, জেফ সব সময় চাইতেন নতুন যে কর্মী যোগ দেবেন আমাজনে, তাঁর দক্ষতা ও মেধা অন্যদের থেকে হবে বেশি। আবার পরে যে কর্মী আসবেন, তাঁকে আগের কর্মীর মেধাকে টেক্কা দিয়ে আসতে হবে। জেফ বেজোসের সঙ্গে ম্যাকেনজির প্রথম দেখা ১৯৯২ সালে। জেফ তখন নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগ কোম্পানি ডি ই শর ভাইস প্রেসিডেন্ট। চাকরির জন্য সেখানে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েছিলেন ম্যাকেনজি। সেই থেকে পরিচয়, এরপর প্রেম, তিন মাসের মধ্যে বাগদান। ১৯৯৩ সালে বিয়ে হয় তাঁদের, জেফ তখন ৩০ বছরের যুবক, ম্যাকেনজির সদ্য ২৩ পেরিয়েছে। পরের বছরই সিয়াটলের ভাড়া বাসায় দুজনের সংসার শুরু। তবে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই জানাজানি হয়ে গেছে, ২৫ বছর পরে এসে এবার তাঁর বুকে তির মেরেছেন লরা।