আউটসোর্সিং কোন পথে?

প্রযুক্তির মাধ্যমে নানা ধরনের কাজের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কাজের সুযোগ। এর বড় একটি উদাহরণ হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং। এতে নির্দিষ্ট অফিসে বসে কাজের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানগুলো বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে কাজের দায়িত্ব দিয়ে দেয়। বিশ্বজুড়ে আউটসোর্সিং খাতের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৮ সালে আউটসোর্সিং শিল্পের আকার ৮ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

ভবিষ্যতে এ খাতের আরও প্রবৃদ্ধি হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এ খাতে নানা পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। ২০১৯ সালের আউটসোর্সিং দুনিয়ায় পাঁচটি খাতে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে। এসব খাতের পরিবর্তনগুলো জেনে নিন:

ডেটা সিকিউরিটি
আউটসোর্সিং খাতে সবচেয়ে বড় প্রবৃদ্ধি দেখা দেবে তথ্য সুরক্ষা বা ডেটা সিকিউরিটি খাতে। কারণ, মানুষ এখন নানা রকম স্মার্ট পণ্যে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। এসব স্মার্ট পণ্য নানা রকম তথ্য বা ডেটা তৈরি করছে। তাই প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের মাথায় ডেটা সিকিউরিটির বিষয়টি এখন সবার আগে আসবে। বিশেষ করে ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) ব্যবহার বাড়লে এর ওপর আক্রমণও বাড়বে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এইচপির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ আইওটি পণ্যে মারাত্মক নিরাপত্তা ত্রুটি রয়েছে। সিকিউরিটি আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলো তাই এ খাতে গুরুত্ব দেবে। এ খাতে আউটসোর্সিং করার ব্যাপক সুযোগ তৈরি হবে। যাঁরা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ করবেন, তাঁরা এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে ব্যাপক আয় করতে পারবেন।

বিশেষ আউটসোর্সিং
আউটসোর্সিং খাতে যেকোনো বিষয়ে বিশেষত্ব থাকতে হবে। কারণ, একাধিক আউটসোর্সিং সেবাদাতাকে ব্যবস্থাপনা করাটাও অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে, মাঝারি ও ছোট আকারের কোম্পানির জন্য। তারা কম খরচে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পুরো কাজ চায়। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আলাদা আলাদা দায়িত্ব দিলে তাদের ব্যবস্থাপনাসহ কাজে দেরি হতে পারে। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানগুলো সেন্ট্রালাইজড সিস্টেম বা যেখান থেকে সব সেবা পাওয়া যাবে, সেদিকেই ঝুঁকবে। অর্থাৎ, বিশেষ কাজের উপযোগী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চাহিদা বাড়বে এ বছরে।

ক্লাউড টেকনোলজি
এখন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ক্লাউড প্রযুক্তির দিকে যাচ্ছে। ২০১৯ সাল জুড়ে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসাগুলোর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ এখন অনলাইনে তথ্য রাখা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার। আইডিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মোট ব্যয়ের অর্ধেকই হবে পাবলিক ও প্রাইভেট ক্লাউডের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে। তাই ক্লাউড প্রযুক্তিতে আউটসোর্সিং বিষয়ে প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ভালো করার সুযোগ থাকবে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা
যেসব প্রতিষ্ঠান সামাজিকভাবে দায়বদ্ধতা দেখায়, তাদের পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। বাজারে পণ্য ও সেবা আনার ক্ষেত্রে তাই পরিবর্তনের বিষয়টি চোখে পড়ছে। ‘সোশ্যালি রেসপনসিবল আউটসোর্সিং’ বা (এসআরও) সুবিধা বাড়তে দেখা যাবে। এর অধীনে আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা কর্মীরা কাজ পান। বর্তমান বিশ্বে ২ লাখ ৪০ হাজার কর্মী এর আওতায় পড়েন। আগামী এক দশকে এ ধরনের আউটসোর্সিং কাজের সুবিধা বাড়বে।

রোবোটিকস
তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় দ্রুত পরিবর্তন আসবে। আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসের যুগ। আউটসোর্সিং বিশেষজ্ঞরা তাঁদের পোর্টফোলিওতে বিষয়টি যুক্ত করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ অটোমেশনের কারণে ৮০ কোটি চাকরি বন্ধ হবে। একই ধরনের কাজ বারবার করা, যেমন: খাবার প্রক্রিয়াজাত, গাড়ি চালানোর মতো বিষয়গুলো বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। অনেক প্রতিষ্ঠান অটোমেশনের দিকে যাবে। এ ক্ষেত্রে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পছন্দের বিষয়টি বেছে নেওয়ার আরও সুযোগ দেবে। তথ্যসূত্র: স্মল বিজনেস ডটকো