আমার ঘর থাক নিরাপদ

বাইরে থেকেও দেখা যাবে বাড়ির অবস্থা। মডেল: প্রমি। ছবি: সুমন ইউসুফ
বাইরে থেকেও দেখা যাবে বাড়ির অবস্থা। মডেল: প্রমি। ছবি: সুমন ইউসুফ

বাড়ির নিরাপত্তায় বেশি আয়োজন দরকার। অথচ এই বিষয়ে আমাদের মনোযোগ বেশ কম। তবে সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে এবং আনুষঙ্গিক কিছু নিরাপত্তা সরঞ্জাম যুক্ত করে বাড়িঘরের নিরাপত্তা বাড়িয়ে নেওয়া এখন কঠিন কিছু নয়। খরচও যে খুব বেশি, তা-ও কিন্তু নয়।

নিরাপত্তাসামগ্রী কেনার আগে প্রয়োজন বুঝে নিতে হবে। সে অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করে যুক্ত করতে হবে। ইনডোর-আউটডোর ক্যামেরা, অ্যালার্ম, লাইট, ডোর সিকিউরিটিসহ আরও বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম সংযোজনের সুযোগ রয়েছে। দেশের বাজারে নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলোর মধ্যে ইনডোর-আউটডোর ক্যামেরার ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ি, বাগান, গ্যারেজসহ আশপাশে নিরাপত্তার জন্য ক্যামেরা সংযোজন করছেন অনেকেই।

ঘরে ও ঘরের বাইরে ক্যামেরা
নিরাপত্তা ডিভাইসগুলোর মধ্যে ইনডোর ও আউটডোর ক্যামেরার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। দেশীয় বাজার সহজলভ্যতার কারণে মানুষ এটি দ্রুত গ্রহণ করছে। সিসিটিভি ও আইপিটিভি—এই দুই ধরনের ক্যামেরাগুলো বিভিন্ন মানের হয়ে থাকে, সেই সঙ্গে দামের পার্থক্যও রয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে ২ মেগাপিক্সেলের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর দাম ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে শুরু হয়েছে। ক্যামেরাগুলোতে তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকে না, সংরক্ষণের জন্য ডিভিআর নামের আলাদা একটি যন্ত্রের সঙ্গে ক্যামেরাগুলো সংযোজন করতে হয়। কয়টি এবং কী মানের ক্যামেরা সংযোজন করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে ডিভিআর নির্বাচন করতে হয়। ৪, ৮, ১৬ পোর্টের ডিভিআর পাওয়া যায়। এক একটি পোর্টের সঙ্গে এক একটি সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোজন করতে হয়। ডিভিআরের সঙ্গে মনিটর যুক্ত করে ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করা ভিডিও দেখা যাবে। একাধিক ক্যামেরা একই মনিটর থেকে দেখার সুবিধা পাওয়া যাবে ডিভিআর থেকে। ৪ পোর্টের ডিভিআরগুলোর দাম শুরু ৪ হাজার টাকা থেকে, আর ৮ পোর্টের ডিভিআরের সর্বনিম্ন দাম ৬ হাজার টাকা।

ডিভিআর তথ্য সংরক্ষণ করে না, সংরক্ষণ করতে হলে আলাদা হার্ডডিস্ক সংযোজন করতে হবে। কত দিনের জন্য তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, সেটি বিবেচনা করে হার্ডডিস্ক ড্রাইভ কিনতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে যে একটি ২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা এক দিনে প্রায় ১০ গিগাবাইট তথ্য রেকর্ড করে থাকে। ডিভিআরটিতে যেহেতু তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, তাই সবার যাতায়াত নেই এমন স্থানে এটি রাখা ভালো।

এ ধরনের সিসিটিভি ক্যামেরা বাড়িতে ব্যবহার করা যায়
এ ধরনের সিসিটিভি ক্যামেরা বাড়িতে ব্যবহার করা যায়

ক্যামেরাগুলোর সঙ্গে আলাদা করে পাওয়ার অ্যাডাপ্টর কিনতে হবে। তবে ডিভিআর যদি পিওই প্রযুক্তি সমর্থন করে, তবে আলাদাভাবে আর পাওয়ার সংযোগের প্রয়োজন হবে না। পাওয়ার অ্যাডাপ্টরের দাম ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে আর পিওই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে পিওই সুইচ কিনতে হবে ২৯০০ টাকা দিয়ে। বাড়িতে যন্ত্র বসানোর জন্য প্রতি ক্যামেরা ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। এই সিসিটিভি ক্যামেরার তথ্যগুলো মোবাইল বা অন্য যেকোনো স্থান থেকে দেখার জন্য ডিভিআরের সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে হবে।

দেখতে একই হলেও কিছুটা ভিন্ন প্রযুক্তির হলো আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ক্যামেরা। আইপি ক্যামেরাগুলো প্রতিটি আলাদাভাবে দেখার সুযোগ থাকে এবং প্রয়োজনে সব কটি একসঙ্গে দেখার জন্য এনভিআর ব্যবহার করা যেতে পারে। আইপি ক্যামেরাগুলোর দাম শুরু হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে। ৪ পোর্টের এনভিআর সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা এবং ৮ পোর্টেরগুলো ১১ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ একই ধরনের হয়ে থাকে।

এই যন্ত্রাংশগুলোতে এক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা দেওয়া হয়, তবে ব্র্যান্ডের পার্থক্যের কারণে দাম কিছুটা কমবেশি হতে পারে।

অ্যালার্ম বা অ্যালার্ট সিস্টেম

ব্যাংক, বিমা বা বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভবনের বাইরে দেখা যায় বড় বড় অ্যালার্ম সিস্টেম। একেবারে একই না হলেও বাড়ির নিরাপত্তার জন্যও ব্যবহার করা যায় কিছুটা ভিন্ন ধরনের অ্যালার্ট সিস্টেম। কখনো উচ্চ শব্দের অ্যালার্ম, কখনো আবার এসএমএস বা ই-মেইল অ্যালার্ট ব্যবহার করে সতর্কতা ও সচেতনতার সহায়ক হতে পারে।

সেন্সরের ব্যবহার

নিরাপত্তা যে শুধু চোর ডাকাত–সংক্রান্ত হতে হবে এমন নয়, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন কাজের নানা ধরনের সেন্সর ব্যবহার করে জীবনধারণের ব্যবস্থা সহজ করা ও দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। ফায়ার অ্যালার্ম বা স্মোক ডিটেকটর, উইন্ডো সেন্সর, পানির লিক বা ওভারফ্লো সেন্সরসহ আরও বহু কাজের জন্য সেন্সর রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অনলাইন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে এমন ডিভাইসগুলো।

ডোর লক

অফিস বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাকসেস নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্ড, চোখের আইরিশ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস ডিটেকশন ইত্যাদি প্রযুক্তির দরজা ব্যবহার করা হয়। একই ধরনের ডোর লক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে বাড়ির নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও। ফিঙ্গারপ্রিন্টভিত্তিক দরজার নিরাপত্তার জন্য এমন একটি ব্যবস্থা সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। সঙ্গে সার্ভিস চার্জ ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির জন্য কয়েক হাজার টাকা খরচ হতে পারে।