ঘড়ির ঘোরে

ঘড়ির প্রতি আকর্ষণ চিরায়ত। এই সময়ে ঘড়ি প্রযুক্তিনির্ভর ও স্মার্ট। মডেল: রনি, ছবি: সুমন ইউসুফ
ঘড়ির প্রতি আকর্ষণ চিরায়ত। এই সময়ে ঘড়ি প্রযুক্তিনির্ভর ও স্মার্ট। মডেল: রনি, ছবি: সুমন ইউসুফ

কটা বাজে? সময় দেখতে এখনো অনেকেই বাঁ হাতের কবজির দিকে তাকান। সেখানেই যে বাঁধা থাকে সেকেন্ড, মিনিট আর ঘণ্টার হিসাব। ঘড়ির আবেদন এখনো ফুরায়নি। ঘড়ির প্রযুক্তিতে রূপান্তর ঘটেছে। অ্যানালগের বদলে যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল সার্কিট। এ ছাড়া যুগের সঙ্গে ঘড়িও স্মার্ট হয়েছে, প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়েছে আর নকশাতে এসেছে পরিবর্তন। তবে ঘড়ির ঐতিহ্যের যে আবেদন, তা থেকেই গেছে।
বাজারে সব বয়সের ও পেশার মানুষের কথা মাথায় রেখে বিক্রেতারা নানা ধরনের হাতঘড়ি বিক্রি করেন। মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে ঘড়ি কেনেন। তবে এখনকার হাতঘড়িতেও প্রযুক্তির নানা সুবিধা যুক্ত করে দেন এর নির্মাতারা। সময়ের পাশাপাশি দিন, তারিখও দেখায় অনেক হাতঘড়ি। ডিজিটাল সার্কিট যুক্ত হওয়ায় দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলেও ঘড়ি নষ্ট হয় না। এর বাইরে কম্পাসের সাহায্যে দিতে পারে দিকনির্দেশনা। স্টপ ওয়াচের কাজও করতে পারে। কিছু ঘড়িতে ব্যবহারকারীর অবস্থান শনাক্ত করতে রয়েছে জিপিএস–সুবিধা। আবার কিছু ঘড়িতে দিন তারিখ ও রিমাইন্ডার অপশন থাকে। হাতের নড়াচড়ার ওপর চলে, এমন ঘড়িও আছে। সৌরশক্তিতে চলা ঘড়িও বাজারে রয়েছে।

এক ঘড়িতে ছয়টি কাঁটা
সাধারণ ঘড়িতে তিনটা কাঁটা থাকে। কিন্তু ক্রোনোগ্রাফ ঘড়িতে ছয়টা কাঁটা। এটা সময়, দিন, তারিখ দেখানোর পাশাপাশি স্টপ ওয়াচের (থামাঘড়ি) কাজও করে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় ইচ্ছেমতো সময় সেট করা যায়। ফলে এটা সাঁতারু, অ্যাথলেট কিংবা পর্বতারোহীদের দারুণ কাজে দেয়। কিছু ঘড়িতে আবার স্টপ ওয়াচের পাশাপাশি তিন থেকে চারটা দেশের সময় দেখা যায়। এর বাইরে হৃৎস্পন্দন মাপা, ফোন কল রিসিভ করার মতো স্মার্টওয়াচও আছে।

মডেল: নুসরাত
মডেল: নুসরাত

ঐতিহ্যের ঘড়িতে আগ্রহ
কল্লোল গ্রুপের ওয়াচ ডিভিশনের ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ আলম বলেন, মানুষ এখন ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে ঘড়ি পরছেন। অনেকের একাধিক ঘড়ি থাকে। দেশে এখনো স্মার্টওয়াচ ততটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। মৌসুমভেদে ক্রেতারা এর দিকে ঝুঁকলেও বেশির ভাগ মানুষ এখনো ক্লাসিক ঘড়িকেই প্রাধান্য দেয়। বাজারে টাইটান, টিশ, রাডো, ক্রিডেন্স ঘড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া ক্লাসিক ক্যাসিওর ঘড়িও মানুষ এখনো খোঁজে। দামের দিক থেকেও ঘড়িতে মানুষের পছন্দের বিষয়টি ভিন্ন। অনেকে বেশি দামের ঘড়ির দিকেই আগ্রহ দেখায়। এ ক্ষেত্রে তাদের নকশা ও ঘড়ির বৈশিষ্ট্য বিষয়টি পছন্দের তালিকায় থাকে। বাজারে যেমন চেইনের ঘড়ি দেখা যায়, তেমনি গোলাকৃতি, ওভাল, চতুর্ভুজ আকৃতির বিভিন্ন ডায়ালের ঘড়ির দেখাও মেলে।

বসুন্ধরা সিটির টাইম জোনে কর্মরত কল্লোল গ্রুপের ওয়াচ ডিভিশনের সহকারী ব্যবস্থাপক কবীর আহমেদ বলেন, মেয়েদের জন্য যেমন ফ্যাশনেবল ঘড়ির চাহিদা রয়েছে, ছেলেদের ক্ষেত্রে বহুমুখী সুবিধার (মাল্টিফাংশনাল) ঘড়ির চাহিদা বেশি। এসব ঘড়িতে স্মার্টওয়াচ, টেকোমিটার ও দরকারি নানা সুবিধা রয়েছে। মানুষ এখন প্রয়োজনে ও ফ্যাশনের জন্য নানা রকম ঘড়ি কিনছে।

বাংলাদেশে হাতঘড়ির বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোই ভরসা। দেশে হাতঘড়ি আমদানিকারকদের মধ্যে টাইম জোন, টাইম ভিউ, সাকো ওয়াচ, ওয়াচেস ওয়ার্ল্ড প্রভৃতি অন্যতম। নারী ও পুরুষ সব ধরনের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফরমাল ও ক্যাজুয়াল ঘড়ি পাওয়া যাবে তাদের শোরুমগুলোয়। বাজারে টাইম জোনের কাছে ৪০টিরও বেশি ব্র্যান্ডের ঘড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ক্রিডেন্স, টিসট, ক্যাসিও, মন্ট্রেক্স, টাইটান, ফাস্ট ট্র্যাক, সিকো, রাডো, টমি হিলফিগার, সিকে, ওবাকু, ইস্প্রিট, টিসো ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে ওমেগা, গুচি, এমিকা, ফসিল, ডিজেল, সুইস্টার, লোবর, ভিকটোরি নক্স, বারবারি, রয়েল ক্রাউন, রোলেক্সসহ নানা ব্র্যান্ডের ঘড়ি বাজারে পাবেন।

স্মার্ট ঘড়ি
সাধারণ ক্লাসিক হাতঘড়ির বিকল্প হচ্ছে স্মার্টওয়াচ। প্রযুক্তিনির্ভর হাতঘড়িটিতে এখন রয়েছে ডিজিটাল সব বৈশিষ্ট্য। শুধু সময় দেখা নয়, মুঠোফোনের বিকল্প হিসেবেও কাজ করবে এই স্মার্টওয়াচ। কেনার পর প্রথমেই এর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ ফোনে নামিয়ে নিতে হয়। সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস, দুটি অপারেটিং সিস্টেমের জন্যই নির্মাতারা অ্যাপ তৈরি করে থাকেন। তবে কেনার আগে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। এরপর অ্যাপ থেকেই নোটিফিকেশন দেখানো, ব্যায়ামের তথ্য, ব্যান্ড বা ওয়াচ আপডেট বা অন্যান্য কাজ করা যাবে।
স্মার্টওয়াচ বাজারের বেশির ভাগই অ্যাপলের দখলে। ‘অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৩’–এর পাশাপাশি বাজারে এখন অ্যাপল ওয়াচ–৪ পাবেন। শক্তিশালী যন্ত্র, সহজ অপারেটিং সিস্টেমের জোরে সবার মন জয় করেছে এই যন্ত্র। অ্যাপ চালানো, হৃৎস্পন্দন মাপা, জিপিএসের মাধ্যমে হাঁটা মাপা, ম্যাপের মাধ্যমে নেভিগেশন, নোটিফিকেশন দেখা, ফোন কল করা ও ধরা, মেসেজের উত্তর দেওয়া থেকে শুরু করে প্রচুর কাজ করা যাবে এতে। ডিজাইনেও ফ্যাশনেবল। বিক্রেতারা জানান, এখন অ্যাপল ওয়াচ ফোর বিক্রি করছেন। এর চাহিদা এখন বেশি। ই–কমার্স সাইট বাগডুম সূত্রে জানা গেছে, তাদের সাইটে অ্যাপল সিরিজ থ্রি (৪২ এমএম), সিরিজ ফোর (৪৪ এমএম), স্যামসাং গ্যালাক্সিএস৩ ফ্রন্টায়ার স্মার্টওয়াচ, গ্যালাক্সি স্মার্টওয়াচ (৪৬ এমএম), হুয়াওয়ে ওয়াচ জিটি পাওয়া যাবে।

কেমন দাম
ঘড়ির দাম নির্ভর করে মান ও ব্র্যান্ডের ওপর। তা ছাড়া কোন দেশ থেকে উত্পাদিত, সেটার ওপরও দাম নির্ভর করে। ব্র্যান্ডের ঘড়িগুলোতে ওয়ারেন্টি সুবিধাও রয়েছে। যেমন মেইড ইন সুইজারল্যান্ড ঘড়িগুলোর দাম ২০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর জাপান, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা ব্র্যান্ডের ঘড়ির দাম সাড়ে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু। নন-ব্র্যান্ড কালারফুল রাবার, চেইন ও কাপড়ের বেল্টের বিভিন্ন ঘড়ি বিভিন্ন দোকানে পাবেন ৩০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। টাইটান ব্র্যান্ডের ঘড়ির দাম পড়বে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা। ফাস্ট ট্র্যাক, ক্রেডেন্সের হাতঘড়ি পাবেন সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। টিসটের দাম পড়বে ১৭ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। বাজারে টাইটান ফাস্ট ট্র্যাকের এলইডিযুক্ত ডিজিটাল হাতঘড়ি পাবেন। এর দাম পড়বে তিন হাজার টাকা।

যেখানে পাওয়া যাবে
স্বল্প মূল্যে নানা ধরনের হাতঘড়ি পাবেন নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররমসহ দেশের বিভিন্ন শপিং মলে। টাইম জোন কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ৪৩টি শোরুম রয়েছে, যার মধ্যে ঢাকায় ২২টি আর চট্টগ্রামে ৪টি। এর বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় শহরে শোরুম রয়েছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হাতঘড়ির জন্য যেতে পারেন বসুন্ধরা সিটি, গুলশান ডিসিসি মার্কেটে, রাপা প্লাজা, সীমান্ত স্কয়ার, যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন শপিং মলে। এ ছাড়া মেয়েদের বিভিন্ন ডিজাইনের শৌখিন হাতঘড়ি পাবেন নিউমার্কেট কিংবা বায়তুল মোকাররম মার্কেটে। এখন অনলাইনের বিভিন্ন দোকান থেকে খুব সহজেই বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের হাতঘড়িটি। এখন বাগডুম ডটকম, প্রিয়শপ ডটকম, দারাজ ডটকম, আজকের ডিলসহ বিভিন্ন ই–কমার্স সাইটেও ঘড়ি পাবেন।