আপনার গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার কি নিরাপদ?

অসংখ্য গাড়ি সড়কে। সিএনজিচালিত গাড়ি হলে প্রয়োজন সিলিন্ডারের ব্যাপারে সচেতন থাকা। ছবি: স্মার্ট সময়
অসংখ্য গাড়ি সড়কে। সিএনজিচালিত গাড়ি হলে প্রয়োজন সিলিন্ডারের ব্যাপারে সচেতন থাকা। ছবি: স্মার্ট সময়

আজ যে গাড়িতে আপনি বা আপনার পরিবার চলাফেরা করছেন, কাল সেই গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার আপনার পরিবারের জন্য ঝুঁকির কারণ হবে না, এই নিশ্চয়তা কি রয়েছে? গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার নিরাপদ রাখাটাই জরুরি। এ বিষয়ে ধারণা থাকা একান্তই প্রয়োজন।

 বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সারা দেশেই জনপ্রিয় সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি)। প্রচলিত জ্বালানির চেয়ে অর্ধেক বা এর কম খরচে এই জ্বালানি ব্যবহার করা যায় বলে গাড়িতে সিএনজির চাহিদাও বেড়েছে। এই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অননুমোদিত সিএনজি রূপান্তর প্রতিষ্ঠান। আরও আছে অদক্ষ মেকানিকদের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা। আর এসব জায়গা থেকে সেবা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। যার খেসারত জীবনের মূল্য দিয়ে দিতে হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা জানিয়ে গেল সেই সতর্কবার্তা।

যেসব বিষয়ে জানতে হবে

গাড়িকে সিএনজিতে রূপান্তর করতে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে যারা গ্রাহকসেবা দিচ্ছে, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে সিএনজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হলে গাড়ি নিরাপদ থাকে। খরচ কমাতে গিয়ে যেন সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি না হয় এই বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

নাভানা সিএনজি লিমিটেডের রি-টেস্টিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (বিপণন) কামরুজ্জামান বলেন, সিএনজিতে রূপান্তরের সময় গ্রাহক খরচ বাঁচানোর কথা ভাবেন। অল্প কিছু টাকা বাঁচিয়ে নিম্নমানের সিএনজি রূপান্তর সেন্টারের শরণাপন্ন হয়। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সম্প্রতি চকবাজার ট্র্যাজেডিতে যে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছিল, তা উন্নতমানের সিলিন্ডার ছিল না। মানসম্মত সিলিন্ডারগুলোতে সেফটি ভালভ বা শাট অফ ভালভ থাকে। সিলিন্ডারে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে এই ভালভটি সিলিন্ডারের গ্যাসকে বাইরে বেরোতে দেয় না। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে না।

ছাড়পত্র নিতে হবে

একজন গাড়ির মালিক যেখানেই তার গাড়িকে সিএনজিতে রূপান্তর করান না কেন, এর আগে অবশ্যই সিলিন্ডার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেই সিলিন্ডার–সংক্রান্ত ছাড়পত্র সংগ্রহ করবেন। এ ছাড়া রূপান্তরকারী প্রতিষ্ঠান সিলিন্ডারের ওপর আরও একটি ছাড়পত্র প্রদান করেন। এই ছাড়পত্রগুলো থাকলে গ্রাহক সিলিন্ডারের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারে।

সিলিন্ডারের যন্ত্রাংশ মানসম্পন্ন কি না

সিলিন্ডারের সঙ্গে থাকা যন্ত্রাংশগুলো উন্নত মানের কি না—খবর নিতে হবে। ইন্টারনেটের যুগে সহজেই সিএনজি রূপান্তরের যন্ত্রাংশগুলো সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যায়। একটি সিলিন্ডার সিএনজি রূপান্তরের জন্য উপযোগী এবং টেকসই কি না, গ্রাহকের বোঝার উপায় কী? এ প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক গ্যাস সিলিন্ডার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সিলিন্ডারে মান নির্ধারণ করতে ৫-৬ ক্যাটাগরির মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করেন। এই মানদণ্ডের পরীক্ষায় যে গ্যাস সিলিন্ডারগুলো উত্তীর্ণ হয়, সেগুলো নির্দ্বিধায় ১৫ থেকে ২০ বছর ব্যবহার করা যায়।


পাঁচ বছর পরপর পুনর্নিরীক্ষণ

গাড়িতে সিলিন্ডার বসানোর পর বাড়তি কোনো যত্ন নিতে হয় না। তবে দাহ্য পদার্থ বা স্ফুলিঙ্গ তৈরি করতে পারে, এমন পদার্থ থেকে গাড়ি বা সিলিন্ডারের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। শতভাগ নিরাপদ ব্যবহারের জন্য প্রতি পাঁচ বছর পরপর সিলিন্ডারের পুনর্নিরীক্ষণ (রি-টেস্টিং) করা জরুরি। এতে গাড়ির সিএনজি পরিচালন প্রক্রিয়ার ত্রুটি, সিলিন্ডার গ্যাসের অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়।

যেখানে হয় রি–টেস্টিং

নাভানা, ইন্ট্রাকোসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সিএনজি সিলিন্ডার রি–টেস্টিং পরীক্ষণ করে থাকে। দিনব্যাপী এই পুনর্নিরীক্ষণ করতে ক্ষেত্রভেদে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ হয়। সিএনজি রূপান্তরের ব্যাপারে গ্রাহকদের যে আগ্রহ লক্ষ করা যায় সিএনজি সিলিন্ডার পুনর্নিরীক্ষণে গ্রাহকদের মধ্যে অতটা সচেতনতা নেই। গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নাভানা সিএনজি লিমিটেড ডেটাবেইস অনুসারে নিয়মিত গ্রাহকদের রি–টেস্টিংয়ের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামে সিএনজি সিলিন্ডার পুনর্নিরীক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকা উচিত

আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কোরিয়া, জার্মানি, ইতালি এবং ভারতের সিএনজি সিলিন্ডারগুলো মানসম্মত হয়। খাবার বা ওষুধের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণের যে স্টিকার লাগানো থাকে, প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারেও সে ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ এবং পুনর্নিরীক্ষণের সময় উল্লেখ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন কয়েকজন সিএনজি গাড়ি ব্যবহারকারী।