কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী

মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে থাকে দেহরক্ষী।
মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে থাকে দেহরক্ষী।

ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে তাঁর কার্যালয়। সেখানে অন্য কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত অফিস করেন তিনি। তবে এর বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে হয় তাঁকে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেকের ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। সাদামাটাভাবে চলেন তিনি। সাধারণত ছাই রঙের টি-শার্ট ও ট্রাউজার পরে অফিস করেন। পোশাক বিষয়ে মাথা না ঘামালেও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এখন বেশ উদ্বেগ বেড়েছে তাঁর। তাই তো নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। অফিস থেকে যাতে জরুরি প্রয়োজনে বের হতে পারেন, সে কারণে সেখানে গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে।

বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তি বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা নিজের চারপাশে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা মোতায়েন করে রাখেন। তবে সে তুলনায় জাকারবার্গ এখন আরও বেশি সতর্ক হয়ে উঠেছেন। ফেসবুকের সাবেক ও বর্তমান নিরাপত্তাকর্মীদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, জরুরি ভিত্তিতে যাতে জাকারবার্গকে অফিস থেকে সরিয়ে নেওয়া যায়, সে জন্য অফিসে ‘প্যানিক স্যুট’ বা গোপন সুড়ঙ্গ রয়েছে। তবে ওই গোপন সুড়ঙ্গ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেনি ফেসবুক। বিষয়টি অস্বীকারও করেনি কর্তৃপক্ষ।

বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক বড় কর্মকর্তার পৃথক অফিস থাকে, কিন্তু জাকারবার্গের তা নেই। অন্য কর্মীদের মতো জাকারবার্গের ডেস্কও খোলা। অন্যদের মতো তিনি সেখানে বসেন। তবে তাঁর পাশে দেহরক্ষী থাকে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে মেনলো পার্কের জাকারবার্গের ওই অফিসের নিচেই আছে গাড়ি রাখার জায়গা। কিন্তু গাড়িবোমার উদ্বেগের কারণেই কেউ জাকারবার্গের বসার জায়গার ঠিক নিচে গাড়ি রাখতে পারেন না।


২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফেসবুকের পরিচালনা কমিটি জাকারবার্গ ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য বছরে এক কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে।

জাকারবার্গ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে নানা রকম উপহার পান। কিন্তু কোনো উপহার তিনি নিজে খোলেন না। জাকারবার্গের কাছে কোনো কিছু পৌঁছাতে হলে তা আগে নিরাপত্তার পরীক্ষায় পাস করে আসতে হয়। কোনো রেস্তোরাঁ বা বারে গেলে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা আগে তল্লাশি করেন। জাকারবার্গের সংস্পর্শে আসা কোনো চিকিৎসক বা প্রশিক্ষককেও নিরাপত্তার পরীক্ষা পেরোতে হয়।

২০১৫ সালের পর থেকেই জাকারবার্গের নিরাপত্তার খরচ বেড়ে চলেছে। ২০১৫ সালে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের নিরাপত্তার পেছনে সাড়ে ৩৩ কোটি টাকা (৪২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার) খরচ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস ৫০০ সুচকে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এ খরচ ছিল সর্বোচ্চ। ফেসবুকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ফেসবুক জাকারবার্গের নিরাপত্তার পেছনে ব্যয় করেছিল ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার, ২০১৭ সালে ৯ মিলিয়ন ডলার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেগুলেটরি ফাইলিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাকারবার্গের পেছনে ফেসবুকের মোট নিরাপত্তা খরচ দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার।

ফেসবুক থেকে জাকারবার্গ বাড়ির নিরাপত্তা সিস্টেম ও নিরাপত্তাপ্রহরীর খরচ নেন। জাকারবার্গের বাড়ির নিরাপত্তা দেখেন মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক এক কর্মকর্তা।

তবে ফেসবুক শুধু জাকারবার্গের নিরাপত্তায় এত টাকা খরচ করছে, তা নয়। ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গের নিরাপত্তার পেছনেও তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়।