আপনার নিরাপত্তা আপনার হাতে

কয়েক বছর ধরে দেশের ব্যাংকগুলো খুব দ্রুত ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের নানা ধরনের সেবা চালু করেছে। ফলে ব্যাংকিং সেবা অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। তবে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের বেলায় নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে সবার আগে।

মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব আইটি ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মো. নাজমুল হুদা সরকার বলেন, ‘ব্যাংকের এই প্রযুক্তিনির্ভরতা যুগোপযোগী। কিন্তু যতই আমরা গ্রাহকের তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজলভ্য করে দিচ্ছি, ততই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার বিষয়টিও একটু দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যদি সঠিক নিরাপত্তা দেওয়া না যায়। তাই ব্যাংকগুলো তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের ব্যাপারে সচেষ্ট, যাতে শুধু অ্যাকাউন্টের গ্রাহক ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশাধিকার (অ্যাক্সেস) না পায়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে ব্যাংকের যেমন কিছু করার আছে, তেমনি গ্রাহকেরও কিছু দায়িত্ব আছে। ব্যাংক ও গ্রাহক দুই পক্ষ মিলেই আসলে এই নিরাপত্তার সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা প্রদান করবে।’

যেভাবে নিরাপদ অনলাইন ব্যাংকিং

সাধারণত ব্যাংক থেকে গ্রাহককে একটি লগইন আইডি, পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। প্রথমবার লগইনের পর অবশ্যই গ্রাহক পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করবেন। লগইন আইডি, পাসওয়ার্ড, পিন—এসব কখনোই কাউকে জানানো যাবে না। পাসওয়ার্ডটি যেন খুব সহজে অনুমেয় না হয়। অবশ্যই দুই-তিন মাস পরপর এটি বদলানো উচিত। নিজের ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা মুঠোফোন ছাড়া অন্য কারও যন্ত্র দিয়ে লগইন না করাই ভালো। ‘টু ফ্যাক্টর অথরাইজেশন’ ব্যবস্থা চালু থাকা জরুরি।

সব সময়ই খেয়াল রাখতে হবে, ব্যাংকের সঠিক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সাইটেই লগইন করেছেন কি না। অনেক সময় ভুয়া বা হুবহু নকল সাইট বানিয়ে আপনার লগইন তথ্যগুলো কেউ নিয়ে যেতে পারে। তাই ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে লগইন লিংকে যাওয়া নিরাপদ।

এ রকম প্রাথমিক কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজে আপনার তথ্য চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এসএমএস ও ই-মেইল অ্যালার্ট চালু রাখাও জরুরি। প্রতিবার লেনদেনের পর অ্যালার্ট মেসেজ চেক করে দেখা অথবা লেনদেন না করার পরও অ্যালার্ট এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি। ব্যবহৃত কম্পিউটারটি সব সময় অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যান্টিভাইরাস হালনাগাদ রাখবেন। বিনা মূল্যের ওয়াই-ফাই বা পাবলিক নেটওয়ার্ক থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করা মোটেও নিরাপদ নয়। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আপনার নিরাপত্তা আপনার হাতেই।

ব্যাংকগুলো নানাভাবে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। প্রথমত, এটা করা হয় একটা সুষ্ঠু তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো তৈরি এবং কিছু নীতিমালার মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা বা গাইডলাইনের আলোকে প্রতিটা ব্যাংক তার তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে, যাতে বলা থাকে কীভাবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করা যায়। একটা নিরাপদ ডেটা সেন্টার স্থাপনের জন্য ব্যাংক সব ধরনের নিরাপত্তামূলক যন্ত্র-সফটওয়্যার ব্যবহার করে, যাতে তথ্য চুরির জন্য কোনো রকম অনুপ্রবেশ না ঘটে।

গ্রাহক খেয়াল করবেন যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ওয়েবসাইটের ঠিকানাটা ‘https’-সংবলিত কি না, যা আপনার যন্ত্রের সঙ্গে ব্যাংকের সাইটের তথ্য আদান-প্রদানের গোপনীয়তা নিশ্চিত করে।

ব্যাংকগুলো প্রায়ই গ্রাহককে সতর্কতামূলক ই-মেইল বা এসএমএস পাঠায়, যাতে গ্রাহক নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও সচেতন হতে পারেন।