ফেসবুক ব্যাংকে কি টাকা রাখবেন?

ফেসবুকের ওপর আপনার আস্থা কতটুকু? ফেসবুক যদি ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে তবে কি আপনি সেখানে টাকা রাখবেন? ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ফেসবুক—আর তাই এমন প্রশ্ন উঠছে।

এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’। এই ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরিতে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে ফেসবুক। প্রযুক্তি দুনিয়ায় হইচই তোলা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিটকয়েনের মতো নিজস্ব মুদ্রা তৈরি করবে ফেসবুক। তবে ফেসবুকের এই ডিজিটাল ক্যাশ সিস্টেমের এখনো পর্যন্ত কোনো নাম ঠিক হয়নি।

গত সপ্তাহে বড় ধরনের ধাক্কা খায় ফেসবুক। ১৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটি। ফেসবুকের গোপন প্রকল্প ‘ফেসবুক কয়েনের’ খবর মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই ঘটনা ঘটে। অবশ্য তার আগে অনেকটা গোপনে আয়ারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ই-মানির লাইসেন্স নিয়ে নিয়েছে ফেসবুক। দুই বছর আগে নেওয়া ওই লাইসেন্সে ই-মানি চালু করা, পেমেন্ট দেওয়া, ক্রেডিট ট্রান্সফার, বিল পরিশোধ, প্রবাসী আয়ের মতো নানা বিষয় রয়েছে।

২০১৫ সালে জেপি মরগ্যান ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেমি ডিমন ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের সতর্ক করে বলেছিলেন, সিলিকন ভ্যালি আসছে। ব্যাংকিং ও পেমেন্ট খাতকে চ্যালেঞ্জ জানাবে সিলিকন ভ্যালি। বিটকয়েন নিয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থানকে অস্বচ্ছ ও প্রতারণাপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। গত মাসে জেপিএম কয়েন চালু করেছে ব্যাংকটি। এ কয়েন দিয়ে আন্তসীমান্ত দেনা পাওনা মেটানো যাবে। তিনি এ ক্ষেত্রে তাদের অস্পষ্টতা দূর করেছেন বলে জানান।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সিলিকন ভ্যালির বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডিজিটাল সম্পদ গ্রহণ করছে এবং এ খাতে বড় ধরনের পরিকল্পনাও করছে। ফেসবুক কয়েন নামে যে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ফেসবুক কাজ করতে যাচ্ছে তাকে স্থিতিশীল কয়েন বলা হচ্ছে।

এর আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য সান অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুকের ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম যাতে বিটকয়েনের মতো ওঠানামা না করতে পারে, সে কারণে টেকসই মুদ্রা হিসেবে একে চালু করার কথা ভাবছে ফেসবুক। এর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ মানি ট্রান্সফার ও পেমেন্ট সিস্টেম যুক্ত করা হবে। এটি ফেসবুক মার্কেটপ্লেসের জন্য দারুণ কাজে আসবে।

এ বিষয়টি নীতিনির্ধারক ও নিয়ন্ত্রকেরা কীভাবে মানিয়ে নেবেন তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে উঠছে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর থেকে ফেসবুকের ওপর অনেকেই আস্থা হারিয়েছে। ফেসবুক থেকে ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে তা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর কাজে লাগিয়েছিল যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। ওই কেলেঙ্কারির সময় যেভাবে মানুষের মতামত না নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদেরা ফেসবুক নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলছেন।

ফেসবুক ঘিরে তথ্য ফাঁস ও কেলেঙ্কারির কারণে গ্রাহকদের আস্থা টলে গেছে। পনেমন ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায় দেখা গেছে, সিনেটে জাকারবার্গের শুনানির আগে ৬৬ শতাংশ গ্রাহক আস্থা নষ্ট হওয়ার কথা বলেছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত গ্রাহকের আস্থার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ফেসবুকের ওপর ব্যাংকার, রাজনীতিবিদ, নীতি নির্ধারক ও নিয়ন্ত্রকেরা ফেসবুকের ওপর চোখ রাখছেন।

অনেক গ্রাহক ফেসবুকের কার্যক্রম ঠিকমতো ধরতে পারেন না। অনেকেই ক্রিপটোকারেন্সি কীভাবে কাজ করে, ব্যাংক কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে পারেন না। কিন্তু তারা কোম্পানির বোর্ড, নীতিমালা, আইনপ্রণেতা ও নিয়ন্ত্রকদের ওপর আস্থা রাখেন। তারা প্রতারিত হতে চান না। তারা আস্থা রাখতেই চান।

কিন্তু ফেসবুকের ক্ষেত্রে একের পর এক যা ঘটে চলেছে তাতে ফেসবুকের ওপর কতজন আস্থা রাখবেন সে প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছেই। তথ্যসূত্র: ফোর্বস ডটকম।