ভীষণ চাপে ফেসবুক

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ভয়াবহ হামলা ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার হওয়ার পর থেকে ফেসবুকের ওপর বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে। ফেসবুক কীভাবে আপত্তিকর সহিংস কন্টেন্ট তাদের প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ দিয়েছে, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ফেসবুকের লাইভস্ট্রিম বন্ধ করে দেওয়ার দাবি উঠছে।

ফেসবুকের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গুগলের ইউটিউব, টুইটারেও লাখ লাখ কপি ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিও কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু মসজিদে হামলার ঘটনাটি ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারের জন্য বেছে নেওয়ায় এ প্ল্যাটফর্ম নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য সরকার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছড়ানো রোধে বাড়তি ব্যবস্থা নিতে বলেছে। তারা এসব মাধ্যমের ভারসাম্য রক্ষার নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বিশেষ করে ভিডিও লাইভস্ট্রিমের বিষয়টিতে আপত্তি করছে।

যুক্তরাষ্ট্রেও এসব কোম্পানির সমালোচনা হচ্ছে। সেখানকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেন নির্বাচনে জিতলে ফেসবুক, গুগল ও আমাজনের মতো কোম্পানিগুলোকে ভেঙে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

ফেডারেল সরকার ও বিরোধী লেবার পার্টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সন্ত্রাসী ভাবধারা ও কনটেন্ট ছড়ানো রোধে বাড়তি পদক্ষেপ দাবি করছে।

গতকাল রোববার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মে সন্ত্রাসী ভিডিও ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, একবার এসব মাধ্যমে ভিডিও চলে এলে তা ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো কঠিন। এ বিষয়ে বাস্তবিক কিছু আলোচনা প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। এত দিন তারা সীমিত আকারে সহযোগিতা করেছে।

বিরোধী নেতা বিল শর্টেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ফেসবুকের লাইভস্ট্রিমিংয়ের মতো বিষয়গুলোয় কোম্পানিগুলোকে উন্নত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ও ঘৃণিত বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ানো ঠেকানোর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক থাকতে হবে।

তাদের ব্যবসার মডেলই বলে দেয় বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারীদের সব তথ্যই জানা আছে। তাহলে ঘৃণ্য বক্তব্যগুলো কারা ছড়াচ্ছে, সে সম্পর্কেও তাদের ধারণা আছে।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, ফেসবুকের লাইভস্ট্রিমিং বন্ধ করা যায় কি না, তা নিয়ে তিনি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ডেইলি এক্সপ্রেসকে বলেছেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধের দায়িত্ব রয়েছে। তারা যথেষ্ট ব্যবস্থা না নিলে আইনি শাস্তি হবে।

নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসী হামলার ওই ভিডিও পুরোপুরি ফেসবুক থেকে মুছে ফেলা হয়েছে—এমন কথা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ফেসবুকের মুখপাত্র। ওই ঘটনার সম্পাদিত ও বিকৃত নানা ফুটেজ ফেসবুকে আপলোড করার চেষ্টা করছেন অনেকেই।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৪ ঘণ্টায় ১৫ লাখ ভিডিও সরানো হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই আপলোড করার সময় বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিন লাখ ভিডিও পোস্ট হয়ে গেছে।

ফেসবুক নিউজিল্যান্ডের নীতিমালাবিষয়ক পরিচালক মিয়া গারলিক বলেছেন, নীতিমালাবিরুদ্ধ কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁরা। প্রযুক্তি ও মানুষের সহায়তায় সম্পাদিত ভিডিওগুলোও মুছে ফেলা হবে।

ওই ভিডিও দেখানোর বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর প্রচলিত টেলিভিশন কোম্পানিগুলোকেও নজরদারির আওতায় এনেছে নিয়ন্ত্রকেরা। তথ্যসূত্র: সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।