নতুন দুয়ারের উন্মোচন

নতুন ধারার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে নতুন প্রজন্ম। ছবি: খালেদ সরকার
নতুন ধারার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে নতুন প্রজন্ম। ছবি: খালেদ সরকার

কাউকে দেশি সফটওয়্যার নির্মাতা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম বলতে বললে ডেটাসফটের নাম বলবেনই। সফটওয়্যার উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ডেটাসফট। বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপীয় দেশেও নিজস্ব কার্যালয় চালু করে প্রযুক্তি ব্যবসা করছে ঢাকাভিত্তিক ডেটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ।

ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), বিগ ডেটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ডেটাসফট। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ডেটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের প্রথম আইএসও সনদ পাওয়া সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর শ্যামলীতে এর প্রধান কার্যালয়। চট্টগ্রামের কাস্টম হাউস অটোমেশন, পাটের জিনরহস্য উন্মোচনের মতো সফলতাগুলোর পেছনে অবদান রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের।

ডেটাসফট লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এম মনজুর মাহমুদ জানান, ডেটাসফট যাত্রা শুরুর পর থেকেই নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। স্বাতন্ত্র্য এখানেই।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ডেটাসফট। রাজধানীর মণিপুরীপাড়ায় ছোট একটি অফিসে এর যাত্রা শুরুর পর দীর্ঘ সময় গবেষণা, পরিকল্পনায় কেটেছে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ কর্মকর্তা এ এস এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি যোগ করলেন, ২০০৭ সালে মাইক্রোফিন্যান্স বিষয়ে সম্ভাবনা দেখে এ বিষয়ে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা চালু করা হয়। সাস মডেলে আনা হয় মাইক্রোফিন ৩৬০ নামের একটি সেবা, যা দেশের ক্ষুদ্র অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখে। ওই বছর সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকে কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যারের কাজ করে ডেটাসফট।

২০০৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য সিমুলেশন সিস্টেম তৈরি করে ডেটাসফট, যা তাদের কাজের পরিধি বাড়িয়ে দেয়। একই বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস অটোমেশন ও বন্দর অটোমেশনের কাজ করে ডেটাসফট। ২০১০ সালে সুপারব্র্যান্ডের পুরস্কার জেতা এই কোম্পানির জন্য বড় সাফল্য ছিল পাটের জিনরহস্য উদ্ভাবনে কারিগরি সহায়তা করা। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ডেটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিন-নকশা।

২০১২ সালে মোবিঅ্যাপ নামের একটি মোবাইল অ্যাপভিত্তিক সেবা চালু করে। ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং ঠেকাতে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং সেবা ভেলোসিটি এএমএল সলিউশন চালু করে ডেটাসফট। ২০১৬ সালে ফিনটেক, পে৩৬৫ নামের অ্যাপ চালু হয়।

ডেটাসফট ২০১৬ সালে তৈরি করে স্মার্ট ইআরপি (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং) নামে বাণিজ্যিক ইআরপি সেবা। ২০১৬ সালে মাইক্রোফিনের সেবা ১০০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের মাইলফলক অর্জন করে। ২০১৬ সালে ডেটাসফট জাপান ইনকরপোরেশন চালু হয় এবং ওই বছরেই সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে আইওটি ল্যাব চালু করে। ২০১৭ সালে ভিআর ল্যাব চালু করে প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, শেভরন, সিটি ব্যাংক, ডিএইচএল, ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক, ইউএনডিপির মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে ডেটাসফট। তাদের কাছে বিশেষ শিল্পভিত্তিক সেবা, আইওটি ও বিগডেটা অ্যানালিটিকস সেবা রয়েছে। পণ্য ও সেবা হিসেবে মাইক্রোফিন্যান্স, এইচআর ম্যানেজমেন্ট, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ভেলোসিটি ও এমপ্লয়ি বেনিফিট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম রয়েছে। দেশের অন্যতম সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় তরুণদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নানা আয়োজন, প্রশিক্ষণ, গবেষণাপত্র প্রকাশের মতো কাজ করে এতে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ৩০০ ডেভেলপার তাদের জন্য ঢাকা অফিসে কাজ করছেন। বাংলাদেশের তরুণেরা বিশ্বের অন্য দেশের চেয়ে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই, ডেটাসফট তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। তাদের এ সাফল্যের অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতেও এ তরুণদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে।

ডেটাসফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান বলেন, আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতটিকে যদি পরবর্তী স্তরে নিতে হয়, তবে বড় লাফ দিয়ে আমাদের আধুনিক প্রযুক্তির এআর, ভিআর, মেশিন লার্নিং, আইওটি রোবটিকসের দিকে যেতে হবে। ডেটাসফট সেটাই করছে। আইওটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটিতে কাজ করছি। কিছু এআই প্রকল্প, কিছু প্রেডিকটিভ অ্যানালিটিকস নিয়ে কাজ করছি। এটা যদি আমরা ঠিকমতো করতে পারি, তাহলে আমাদের পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। আমাদের অর্থনীতি এখন গার্মেন্টস ও প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল কিন্তু আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি তথ্যপ্রযুক্তি খাত হতে পারে। যদি আমরা নতুন প্রযুক্তির দিকে যেতে পারি, তবে তা সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশের নীতিমালার সঙ্গে তা মানানসই। ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ একসঙ্গে মিলিত হচ্ছে, যা আমাদের জন্য সৌভাগ্য। আমাদের সৌভাগ্যবান প্রজন্ম এটা, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি কিন্তু তারা দেশটাকে অন্য স্তরে নিয়ে যেতে পারে।