সফটওয়্যারে গাড়ির সেবা

গাড়ির সমস্যা হলে তার সমাধান বাতলে দেন ভ্রুমের কর্মীরা। ছবি: স্মার্ট সময়
গাড়ির সমস্যা হলে তার সমাধান বাতলে দেন ভ্রুমের কর্মীরা। ছবি: স্মার্ট সময়

গাড়ি নষ্ট হলে কী করেন? এখন তো হাতের নাগালে থাকা স্মার্টফোন দিয়েই নষ্ট গাড়ির যন্ত্রাংশের খোঁজ নিতে পারেন। চাইলে গাড়ির জ্বালানির সঠিক ব্যবস্থাপনাও করতে পারেন। বাংলাদেশি সফটওয়্যার উদ্যোক্তারা তৈরি করেছেন এমন সেবা। গাড়ির মালিকদের ঝামেলাহীন দ্রুত সেবা দিচ্ছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনভিত্তিক সেবা ভ্রুম।

ভ্রুমের উদ্যোক্তারা জানান, গাড়িসংক্রান্ত অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ভ্রুম সার্ভিসেস লিমিটেড। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এর যাত্রা শুরু হয়। প্রায় দুই বছর ধরে সফলভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কয়েকজন বন্ধু মিলে ঢাকায় গাড়ির মালিকদের সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে এ সেবা শুরু করেন। সবাই অনুভব করেন, এমন কোনো কোম্পানি থাকা দরকার, যা গাড়ির যত্নে বাড়িতে এসে সেবা দিতে পারবে। এ লক্ষ্য থেকেই তাঁরা একটি কোম্পানি তৈরি করে যাত্রা শুরু করেন। এ সেবা তৈরির সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সেবা ও পেশার লোক ছিলেন। কিন্তু সবার লক্ষ্য ছিল তা ঠিকভাবে করা। এভাবেই জন্ম নেয় ভ্রুম।
ভ্রুমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আহসান হাবীব বলেন, প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল হোম সার্ভিস দেওয়া এবং দেশের পেশাদার ওয়ার্কশপগুলোর একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা। এ ক্ষেত্রে গাড়ির মালিকেরা নির্ভরতার সঙ্গে নিরাপদ সেবা নিতে পারবেন এবং তাঁদের সেবার নিশ্চয়তা থাকবে। আসল পার্টস সঠিক দামে কিনতে পারবেন।

সৈয়দ হাবিব বলেন, ভ্রুম কর্মীদের সফলতার মূলমন্ত্র আত্মবিশ্বাস। তাঁরা যাত্রা শুরু করার আগে ৩০০ ওয়ার্কশপ পরিদর্শন করে মাত্র ৩১টি ওয়ার্কশপকে দক্ষ কর্মী ও যন্ত্রপাতির দিক থেকে মানসম্পন্ন বলে মনে করেন। তাদের নিয়েই ভ্রুমের পক্ষ থেকে ‘ভ্রুম টোয়েন্টি ফোর পার সেভেন’ (Vroom 24x7) নামের অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে অ্যাপ চালু করা হয়। এর মাধ্যমে হোস সার্ভিস নেওয়া যায়। এর বাইরে ভ্রুমের মেম্বারশিপ কার্ড রয়েছে, যাতে ব্যবহারকারীরা নানা সুবিধা পান। ইস্টার্ন ব্যাংকের সঙ্গে মিলে প্রথম চালকদের জন্য ফুয়েল কার্ড চালু করা হয়। এতে ঝামেলা ছাড়াই জ্বালানি কিনতে পারেন চালকেরা। এতে জ্বালানির বিল মাসিক ভিত্তিতে দেওয়া হয়। এতে দৈনন্দিন ঝামেলা কমে।
ভ্রুমের নির্বাহী পরিচালক নাজিম আনোয়ার চৌধুরী তাঁদের সেবা বাড়ানোর কৌশলগত সফলতার রূপকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেবা আরও বাড়াতে চাই। শুধু বাড়ি বা ওয়ার্কশপ সেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। এ কারণে ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে জ্বালানি ব্যবস্থাপনার কার্ড চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া করপোরেট গ্রাহকদের জন্য ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট সলিউশন আনা হয়েছে। এতে একটি স্ক্রিনেই পুরো সেবা পাওয়া যায়। এই সফটওয়্যারে করপোরেট গ্রাহক তাঁর প্রতিটি গাড়ির খরচ তাৎক্ষণিক জানতে পারেন। এ ছাড়া খরচ ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ, চলাফেরার বিষয়গুলো নজরে থাকে। এটাই তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা। এ সুবিধা এনেছে ভ্রুম।
ভ্রুমে বর্তমানে ২০ জনের একটি দল কাজ করছে। শিগগিরই ঢাকার বাইরেও সেবা বাড়ানোর কথা বলেন নাজিম। ভ্রুমের উদ্যোক্তারা বলেন, বর্তমানে বাজারে তাঁদের পাঁচটির মতো প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে। তবে তাঁরা যখন শুরু করেন, তখন বাজার একেবারেই অপ্রস্তুত ছিল। এখন বাজার বড় হচ্ছে। এতে সচেতনতা বাড়ছে। আরও উন্নত সেবা দিয়ে নতুন গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জনে কাজ করছে ভ্রুম।

১০ হাজার কোটি টাকার সফটওয়্যার বাজার
* দেশের সফওয়্যারের বাজার এখন ১০০ কোটি ডলারের বেশি হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
* ভ্যাট, রাইড শেয়ারিং, খুচরা বিক্রি, ই–কমার্স, গেম, ভবনের নিরাপত্তাসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশি সফটওয়্যার। তরুণ উদ্যোক্তারাও স্থানীয়ভাবে ফরমাশি সফটওয়্যার তৈরি করছেন।
* বেসিস নিবন্ধিত তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ১৭১। এর বাইরেও আছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
* বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইনের মতো নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার।
* গত পাঁচ বছরে স্থানীয় সফটওয়্যারের বাজার দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে। দেশের সফটওয়্যার বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশই দেশি সফটওয়্যার নির্মাতাদের হাতে। ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৭টি ব্যাংকেই দেশি সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে।
* ২০১৬ সালে দেশের বাজারে সফটওয়্যারের চাহিদা ছিল প্রায় ৩২ শতাংশ। ২০১৭ সালে প্রায় ৮৫ শতাংশ।
* দেশি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি যুক্ত প্রায় ১০ লাখ লোক। আর দেশে বসে বিদেশের কাজ করছেন আরও প্রায় ২ লাখ লোক।
* টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সফটওয়্যারনির্ভর কাজ বেশি হয়। এরপরে আছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
* বেসিস ও সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে সফটওয়্যারের ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে রপ্তানিও। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশে পণ্য ও সেবা রপ্তানিতে অনেক প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে রপ্তানি ২০১৮ সালে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা টাকার হিসাবে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।
* সফটওয়্যার খাতের যেসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে—ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপস, গেমস, অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডেটা এন্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি। সূত্র: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বেসিস