১৪০ থেকে এখন ১৫০০ কর্মী

প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরি ডিজিকনের অন্যতম লক্ষ্য। ছবি: খালেদ সরকার
প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরি ডিজিকনের অন্যতম লক্ষ্য। ছবি: খালেদ সরকার

২০১০ সালে ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এরপর শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলা। প্রতিষ্ঠানটির শুরুতেই পরিকল্পনা ছিল দেশকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কথা হয় ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদ শরিফের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠান শুরুর কথা, বর্তমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বিভিন্ন কথা জানান তিনি।

শুধুই এগিয়ে যাওয়া
ডিজিকনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর প্রথম কার্যক্রম চালু হয় ২০১১ সালে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম কাজ করে দেশের প্রথম সারির একটি টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে। শুরুর বছর ডিজিকনের কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৪০ জনের মতো। আর বর্তমানে ডিজিকনের কর্মীর সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। আর এখন প্রতিষ্ঠানটিকে আউটসোর্সিং পার্টনার হিসেবে বেছে নিয়েছে নামীদামি ২৫টির বেশি দেশি ও আন্তর্জাতিক কোম্পানি। সঙ্গে কাজ করে ২৫টির বেশি কোম্পানি।
ওয়াহিদ শরিফ বললেন, ‘২০১১ সালে আমরা শুরু করি একটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সেবা দিয়ে। ২০১৩ সালে একটি শীর্ষ ইন্টারনেট সেবাদাতা তাদের কাস্টমার সার্ভিস পার্টনার হিসেবে আমাদের বেছে নেয়। এই ধারা অব্যাহত রেখে আজ পর্যন্ত আমরা স্বাস্থ্য, ই-কমার্স অটোমোবাইল, কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকসসহ সরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রাহকসেবা দেওয়া শুরু করি।’
এ ছাড়া সরকারের আইসিটি বিভাগের সঙ্গে ট্রেনিং সেক্টর নিয়ে কাজ করেছে ডিজিকন। আইসিটি খাতে অন্যতম বড় প্রশিক্ষণ প্রদানকারী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালে আরেকটি কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়, সেটা হলো ‘ইলেক টু হোম’। এরপর খাদ্য ও পানীয় নিয়েও কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংকের গ্রাহক সেবা প্রদান শুরু হয় ২০১৬ সাল থেকে। ‘একই বছরে আমরা অটোমোবাইল খাতে কাজ শুরু করি। গত বছর সরকারের কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার সঙ্গে যুক্ত হই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট অনলাইন আমাদের করা।’ বললেন ওয়াহিদ শরিফ।

১৪০ থেকে ১৫০০ কর্মীর ডিজিকন
২০১০ সালে প্রতিষ্ঠান শুরুর পর থেকে ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেড ৯ বছরে আটটি শিল্পখাতে কাজ করেছে। ২০১১ সালে একজন গ্রাহক ও ১৪০ জন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করে আজ ডিজিকনের গ্রাহক ২৫ এবং কর্মী ১ হাজার ৫০০।

প্রশিক্ষণে ডিজিকন
ডিজিকনের একটা স্বপ্ন ছিল প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করা। বিশেষ করে লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। ডিজিকন গ্রাহক সেবা আর আউটসোর্সিং মডেল চালাচ্ছে। ওয়াহিদ শরিফ বলেন, ‘এগুলো চালাতে গিয়ে আমরা দেখেছি আমাদের এখানে অনেক চাকরির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমরা চাকরি দেওয়ার জন্য দক্ষ লোক পাচ্ছি না। দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য আমরা তখন নিজেরাই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করলাম। ডিজিকনে প্রতি মাসে ৫০-৬০ জন করে লোককে চাকরি দিতে হয়। কিন্তু আমরা এত দক্ষ লোক পাচ্ছি না। তাই আমরা তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করলাম।’
এই ধারণা নিয়ে সরকারের আইসিটি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে ডিজিকন। এরপর ২০১৩ সালে ডিজিকন লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ চালু করে। ডিজিকন প্রায় ১২ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এখনো সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে।
শুধু প্রশিক্ষণ দিয়ে ডিজিকন থেমে থাকেনি, দক্ষদের চাকরির ব্যবস্থাও করেছে। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে, তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী চাকরি পেয়েছে। এ ছাড়া অনেকেই আলাদাভাবে কাজ করছে।

প্রশিক্ষণে কী শেখানো হচ্ছে
বর্তমানে ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেড প্রাথমিক আইসিটি শিক্ষা, গ্রাফিকস ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, গেম ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং, প্রফেশনাল কাস্টমার সার্ভিস, ব্যাক অফিস কাস্টমার ট্রেনিংসহ বিভিন্ন বিষয় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

আগামীর পরিকল্পনা
ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেড একটি সলিউশন পার্টনার হিসেবে বাজারে জায়গা করে নিতে চায়। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি সামাধান অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। একই সঙ্গে ডিজিটাল সার্ভিসেস এবং নন-ভয়েস নিয়ে কাজ করা আমাদের দ্বিতীয় ভিশন। বর্তমানে কিছু পরিসংখ্যান বলছে আগামী দিনগুলোতে ডিজিটাল যুগ যেভাবে বিকশিত হবে, তাতে মানুষের কাজ কমে যাবে এবং অটোমেশনের হার বেড়ে যাবে। যেহেতু আগামী দিনের সঙ্গে ডিজিকন থাকতে চায়, তাই এ খাত নিয়ে তারা কাজ করছে। ‘এর জন্য আমাদের দল কিন্তু অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। সামনের দিনে গ্রাহকের যে চাওয়া, সেটাকে যেন আমরা পূরণ করতে পারি, সে জন্য কাজ করছি।’ বলেন ওয়াহিদ শরিফ।

অর্জন
ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেড ২০১৭ পেয়েছে এশিয়ার বেস্ট এমপ্লয়ার ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড, ২০১২ সালে সার্ভিস এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেস্ট এমপ্লয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং আইসিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে পেয়েছে আইসিটি অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড।