যুক্ত হতে পারেন আপনিও

অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযু্দ্ধ আমাদের সবার জন্যই অহংকারের বিষয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এবং এর পরবর্তী সময়ে জন্মগ্রহণ করেছেন এমন অনেকের মধ্যেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারার একটি আক্ষেপ দেখা যায়। সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকলেও পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যুক্ত থাকা যেতে পারে। শুধু যে একটি নির্দিষ্ট বয়সীরাই এই কাজে যুক্ত থাকতে পারবে এমন নয়, বরং সব রকম বয়সীরাই এই ধরনের কাজে যুক্ত থাকত পারবেন।
সংরক্ষিত তথ্যগুলো যদি ইন্টারনেটে সহজলভ্য করা যায় এবং সমন্বয়ের কাজগুলোও যদি অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়, তবে একই সঙ্গে অনেক মানুষ একাধিক স্থান থেকে একত্রে কাজ করতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট
https://facebook.com/liberationwarbangladesh.org
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিকৃতিরোধ ও প্রচারের লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রচারের জন্য এই বিষয় প্রকাশিত বই, দলিলপত্র, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ডকুমেন্টারি, ভিডিও ফুটেজ, অডিও, চলচ্চিত্র, ছবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাসমৃদ্ধ একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি ও আর্কাইভ তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ আর্কাইভটি যে কেউই বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন।
এই আর্কাইভের সঙ্গে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা প্রতিনিয়তই নতুন নতুন প্রকাশনগুলো তালিকাবদ্ধ করছেন এবং আর্কাইভের তথ্যভান্ডার সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র থেকে বলছি
ফেসবুক পেজ: https://facebook.com/muktizuddho1971
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যা অনেক, যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বা মূল ঘটনাকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে বহু গল্প ও উপন্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু বইগুলো যাঁরা প্রকাশ করেছেন বা সাহিত্য রচনা করেছেন, সেগুলো কখনোই ইতিহাসের রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। কারণ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেখক, সম্পাদক ও প্রকাশক তাঁদের বিশ্বাস ও ধারণাগুলো সেখানে যুক্ত করে থাকেন। ব্যাপারটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র থেকে বলছি দলের কাজ করে যাওয়ার মূল স্পৃহা। এই দলের সবাই এমন সব দলিল নিয়ে কাজ করছেন যেগুলোতে কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রভাব নেই। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র’ সংকলনটি বিনা মূল্যে অনলাইনে সহজলভ্য করা এবং অনুবাদ করার কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠন। পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আর্কাইভ তৈরি, ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য জনমত তৈরির কাজ করছে তাঁরা।

মুক্ত আসর
https://facebook.com/MuktoAsor
‘মুক্ত আসর’ একটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন। ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংগ্রহ ও সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সবার মধ্যে উজ্জীবিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো: মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কাজ, সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনি’ ইত্যাদি। স্বপ্ন ৭১ নামের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশিত করে থাকে। অনলাইন ও মুদ্রিত উভয় সংস্করণেই প্রকাশিত হয়ে থাকে এই পত্রিকা।
এই প্রতিটি সংগঠনই অনলাইনে সক্রিয়। নিজেস্ব ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে নিজের মধ্যে যোগাযোগ করে থাকে। কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী এমন যে কেউই যুক্ত হতে পারবেন। সদস্য হিসেবে কাজ করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই।

বাংলা উইকিপিডিয়া
https://bn.wikipedia.org
বাংলা উইকিপিডিয়া বাংলা ভাষার সব থেকে বড় বিশ্বকোষ। এটি এমন একটি বিশ্বকোষ, যেখানে সবাই অবদান রাখতে পারে। বর্তমানে এখানে ৬৫ হাজার ৫০০টির বেশি নিবন্ধ রয়েছে, যার একটি বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধ–সম্পর্কিত।
বাংলাদেশের ইতিহাস–সংক্রান্ত প্রায় সব বিষয়ে নিবন্ধ পাওয়া যাবে এখানে, বিশেষত বাংলা ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৭০–এর পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে সুদীর্ঘ নিবন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নিবন্ধগুলোতে গণহত্যা, ধর্ষণ, কালপঞ্জি, পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধিনতাযুদ্ধের সময়কার উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ নিয়ে লেখা রয়েছে।
কিন্তু উইকিপিডিয়ার সব নিবন্ধ সম্পূর্ণ নয়। বিনা মূল্যে নিবন্ধন করে যে কেউই এই বিশ্বকোষ সমৃদ্ধ করার কাজে যুক্ত হতে পারবেন। তবে নিবন্ধের মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যা তথ্যই সংযুক্ত করা হোক, তার নির্ভরযোগ্য উৎসের থেকে তথ্যসূত্র সংযুক্ত করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন আরও রয়েছে, আবার অনেকেই হয়তো নতুন সংগঠন তৈরির জন্য কাজ করছেন। নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ জরুরি। আবার বিপক্ষের কেউ কেউ যে ভুল কিছু ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে না, এমন বলা যায় না।
ইন্টারনেটে সব তথ্য সহজলভ্য হলে সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা সহজ হয়, দ্রুত অধিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।