ব্ল্যাক হোল দেখতে কেমন?

টেলিস্কোপে ধারণকৃত প্রথম ব্ল্যাক হোলের ছবি। ছবি: রয়টার্স
টেলিস্কোপে ধারণকৃত প্রথম ব্ল্যাক হোলের ছবি। ছবি: রয়টার্স

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাক হোল) ছবি প্রকাশিত হলো আজ বুধবার। এতে করে প্রথমবারের মতো কৃষ্ণগহ্বর দেখতে কেমন, তা জানতে পারল বিশ্ববাসী। কৃষ্ণগহ্বরের ছবি ধারণ করার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের (ইএইচটি) ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কৃষ্ণগহ্বরের ছবি প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে আজ এই কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। কৃষ্ণগহ্বরটির আকার প্রায় ৪০ বিলিয়ন কিলোমিটার। সহজ করে বললে, কৃষ্ণগহ্বরটি পৃথিবীর প্রায় ৩০ লাখ গুণ বড়! আকারে এটি এতটাই বিশাল যে বিজ্ঞানীরা একে ‘দৈত্যাকৃতি’র বলে উল্লেখ করেছেন।

কৃষ্ণগহ্বরটি পৃথিবী থেকে ৫০০ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। পৃথিবীজুড়ে স্থাপন করা আটটি টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই কৃষ্ণগহ্বরের ছবি ধারণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

>

ব্ল্যাক হোল কী?

  •  ব্ল্যাক হোল হলো এমন একটি জায়গা, যেখানে কোনো কিছু প্রবেশ করলে আর ফিরে আসে না। এমনকি আলোও এই গহ্বরকে অতিক্রম করতে পারে না।
  • নাম গহ্বর হলেও ব্ল্যাক হোলের মধ্যে কিন্তু পুরোটা ফাঁকা জায়গা নয়। বরং এর মধ্যে খুব অল্প জায়গায় এত ভারী সব বস্তু আছে যে এসবের কারণে তীব্র মহাকর্ষীয় শক্তি উৎপন্ন হয়।
  •  ব্ল্যাক হোলের পেছনে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ নামের একটি স্থান আছে, যাকে বলা হয় ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’। এই জায়গায় মহাকর্ষীয় শক্তি এতটাই তীব্র যে এখান থেকে কোনো কিছুই আর ফেরত আসতে পারে না।

প্রথম এই গবেষণার প্রস্তাব তোলা অধ্যাপক হেইনো ফালকে বিবিসিকে বলেছেন, এম৮৭ নামের একটি ছায়াপথে এই বিশাল কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গহ্বরটির আকৃতি সম্পর্কে বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যা দেখতে পেয়েছি, তার ভিত্তিতে বলতে হয়, আকৃতিতে কৃষ্ণগহ্বরটি আমাদের সমগ্র সৌরজগতের চেয়েও বড়। এর ভর সূর্যের ভরের চেয়ে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন গুণ বেশি। আমাদের ধারণা, যতগুলো কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে, সব কটির মধ্যে এটি ভরের দিক থেকে অন্যতম। এটি স্রেফ দৈত্যাকৃতির একটি কৃষ্ণগহ্বর।’

প্রকাশিত ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, কৃষ্ণগহ্বর থেকে ‘আগুনের চক্র’ নির্গত হচ্ছে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ফালকে বলেছেন, একটি সম্পূর্ণ গোলাকৃতি ও অন্ধকার গহ্বরকে ঘিরে রয়েছে এই আগুনের চক্র। গহ্বরের ভেতরে আটকে পড়া উচ্চ তাপমাত্রার গ্যাসের কারণে এই আগুনের উৎপত্তি বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ফালকে। চক্রাকার এই আগুনের কারণে উৎপন্ন হচ্ছে তীব্র এক আলোকরশ্মি। এই আলোর তীব্রতা এতটাই বেশি যে ওই ছায়াপথে অবস্থিত শত শত কোটি তারার মোট ঔজ্জ্বল্যের চেয়েও উজ্জ্বল এই গহ্বর! এ কারণেই এত দূরে থাকা পৃথিবী থেকেও কৃষ্ণগহ্বরটিকে দেখা গেছে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত দিন বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বরের আকৃতি সম্পর্কে যে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ও অনুমান করেছিলেন, বাস্তবের কৃষ্ণগহ্বরের সঙ্গে তার অধিকাংশই মিলে গেছে। গবেষক দলের সদস্য ড. যিরি ইউনুসি তো এমনটাও বলছেন যে কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে বহু বছর আগে আইনস্টাইন যে ধারণা রেখে গিয়েছিলেন, সেটিই সত্যি প্রমাণিত হতে চলেছে। তিনি বলেছেন, ‘কৃষ্ণগহ্বরের উপস্থিতি সময়, মহাকাশ, এমনকি আমাদের অস্তিত্বের বিষয়গুলোকে অনেক জটিল প্রশ্নের সামনে ফেলে দিচ্ছে। এটা আশ্চর্যজনক যে আমরা যেই ছবি পেয়েছি, সেটি আমাদের তাত্ত্বিক গবেষণার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, আইনস্টাইন আরও একবার সঠিক প্রমাণিত হতে চলেছেন।’

গহ্বরের চারপাশে এই উজ্জ্বল আলো কীভাবে সৃষ্টি হচ্ছে—সেটি সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত নন কেউ। তবে প্রথমবারের মতো এই ছবি প্রকাশিত হওয়ায় কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার সুযোগ ও সম্ভাবনা—দুটোই আরও বেড়ে গেল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।