চাওয়ার আগে সাবধান

ফেসবুকের দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। এর প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকেও সামলাতে হচ্ছে সমালোচনার তির। ফেসবুক ঘিরে তাই ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন আসছে। জাকারবার্গকেও যেতে হচ্ছে নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে।

ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৩০ মার্চ ফেসবুকের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক মাসের মধ্যেই দ্বিতীয়বারের মতো পোস্ট লিখতে হলো। এর আগে ৬ মার্চ এক পোস্টে তিনি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামে নানা কারিগরি পরিবর্তন আনার কথা বলেছিলেন। তখন তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা এক নিবন্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের গুরুত্বের কথা বলেন। তিনি মূলত ব্যবহারকারীদের ক্ষতিকর কনটেন্ট থেকে সুরক্ষার কথা বলেন। যেমন নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে বন্দুকধারীর নৃশংসতার ভিডিও ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর মতো বিষয়গুলোয় জোর দেওয়ার কথা বলেন তিনি। এ ছাড়া নির্বাচনে সততা বজায় রাখা, বিভিন্ন সেবার মধ্যে ব্যবহারকারী তার তথ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়গুলো সুরক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবস্থার কথা বলেন তিনি।

জাকারবার্গ যতই আরজি জানান না কেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রতিটি দিক থেকেই ব্যবহারকারীকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৩ এপ্রিল জানা গেল, অনিরাপদ থার্ড পার্টি সার্ভারে ব্যবহারকারীর তথ্য সংরক্ষণ করে রেখেছে ফেসবুক। ফেসবুকের আরজি দেখে মনে হচ্ছে, কড়া নিয়ন্ত্রণ আসার আগে তার থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকার প্রচেষ্টা। এতে ফেসবুকের আয়ের ওপর বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। ফেসবুকের বিজ্ঞাপন মডেল থেকে আয়ের ক্ষেত্রটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে।

ইকোনমিস্ট লিখেছে, গত ২৮ মার্চ আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্টের (হুড) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতাদের ধর্ম, জাতিগত বৈষম্যসহ নানা তথ্য দিয়ে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। বোস্টনের নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলেছেন, ফেসবুকের অ্যালগরিদম অদ্ভুতভাবে বৈষম্য করতে সক্ষম।

গবেষকেরা বলছেন, সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পিত বিজ্ঞাপন থেকে ব্যাপক আয় করতে পারে ফেসবুক। ন্যাশনাল ফেয়ার হাউজিং অ্যালায়েন্স ও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সঙ্গে একটি মামলায় সমঝোতা করার পর হুডের পক্ষ থেকে একই ধরনের আরেকটি অভিযোগ আনা হয়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, হুডের অভিযোগ শুনে তারা আশ্চর্য হয়েছে। ফেসবুক বৈষম্য কমানোর জন্য কাজ করেছে।

ফেসবুক এখন জাকারবার্গের নিজস্ব প্রচেষ্টাগুলোর কথা জোর দিয়ে প্রচার করছে। গত বছর জাকারবার্গ কনটেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাধীন সালিস কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলেন। নয় মাস ধরে এ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ফেসবুক এখন এর বাইরেও নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ইউরোপের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশনের (জিডিপিআর) কথা উল্লেখ করে জাকারবার্গ লিখেছেন, জিডিপিআরের মতো পরিচিত ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে যদি আরও দেশ এগিয়ে আসে, তবে তা ইন্টারনেটের জন্য ভালো হবে।

জাকারবার্গ চাইছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন ফেসবুকসহ অন্য ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে। যদি ভুল করে, তবে যেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। নতুন নিয়মকানুন নিয়ে বিশ্বের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে তিনি আলোচনায় আগ্রহী।

তবে এখন পর্যন্ত জাকারবার্গ অনেক ক্ষেত্রে আলোচনার জন্য প্রস্তুত নন বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের এমপিদের অনুরোধ কয়েকবার প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।

ফেসবুক ও জাকারবার্গের ওপর বিভিন্ন দেশের সরকারের আস্থা অর্জন করতে হলে শুধু পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ করে কাজ হবে না বলেই মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাজনীতিবিদেরা ফেসবুকের ওপর কঠোর হওয়ার আভাস দিয়েছেন। তবে ফেসবুকের আশার কথা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস তাদের প্রতি দৃঢ় হয়েছে। ফেসবুকের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ থাকলেও শেয়ারের দামে প্রভাব পড়েনি।