দেশের ফুটবলে প্রযুক্তির ছোঁয়া

ফুটবলারদের জার্সির নিচে থাকে জিপিএস যন্ত্র। যা থেকে পাওয়া যায় তার গতি, স্টেমিনা ইত্যাদি তথ্য। ছবি: স্মার্ট সময়
ফুটবলারদের জার্সির নিচে থাকে জিপিএস যন্ত্র। যা থেকে পাওয়া যায় তার গতি, স্টেমিনা ইত্যাদি তথ্য। ছবি: স্মার্ট সময়

অনুশীলনের পর সেরা একাদশ বেছে নিতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই দ্বিধায় পড়তেন কোচ মারুফুল হক। অনেক সময় অনুশীলনে একই পজিশনের দুই ফুটবলার এতটাই ভালো খেলতেন যে পরের ম্যাচের জন্য মারুফুলের অবস্থা ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’! কিন্তু মারুফুল হকের সেই দ্বিধা, সংশয় সব দূর করে দিয়েছে প্রযুক্তি। মাঠে ফুটবলারদের খেলা বা পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করার জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) বাংলাদেশে প্রথম এনেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ মারুফুল।

গত বছর স্বাধীনতা কাপে আবাহনী, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, সাইফ স্পোর্টিংকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আরামবাগ। এই দলটিকে চ্যাম্পিয়ন করার পেছনে কোচ মারুফুল হক জিপিএসের অনেক ভূমিকা দেখেছিলেন।

আরামবাগের এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই এরপর প্রিমিয়ার লিগের আরেক ক্লাব সাইফ স্পোর্টিং ফুটবলারদের অনুশীলনে ব্যবহার করছে জিপিএস। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে সম্প্রতি ৪০টি জিপিএসভিত্তিক যন্ত্র পাঠিয়েছে এএফসি (এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন)। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়া তাই ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জিপিএস ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে জাতীয় দলেও। গত ফেব্রুয়ারি থেকে মেয়েদের ফুটবল দলেও এই যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, আঁখি খাতুনেরা অনুশীলনে আদৌ কোনো সময় ফাঁকি দিচ্ছেন কি না, সেটা এই যন্ত্র নির্ভুলভাবে বলে দেবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ফুটবলে জিপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে। তা বেশ আগে থেকে। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলে এই প্রযুক্তি একেবারে নতুন। ছোট যন্ত্রটি (আসলে মাইক্রোচিপ) ফুটবলারদের জার্সির নিচে পিঠে লাগানো হয়। এটা অনুশীলনে বা খেলার সময় দুভাবেই ব্যবহার করা যায়। সিস্টেমটি মুঠোফোন বা ল্যাপটপের মাধ্যমে সংযুক্ত করে অনুশীলনে ওই ফুটবলারের দৌড়ের গতি, দম, স্টেমিনা সহজেই জানা যায়।

মারুফুলের ভাষায়, ‘একজন ফুটবলারের ওয়ার্ক লোড জানতে এর বিকল্প নেই। মাঠে খেলোয়াড়েরা কতটুকু দৌড়াচ্ছে, কেউ ফাঁকি দিচ্ছে কি না—সেসব জানা যায় এ যন্ত্রে। এই প্রযুক্তি থেকে ফুটবলারদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে পারেন একজন কোচ। জিপিএসের মাধ্যমে ফুটবলারের সামর্থ্য জানা যায়। এটা ব্যবহার করলে ফুটবলারদের মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এর ফলে তাদের খেলাও হয় গতিময়। এটা ব্যবহার করলে বোঝা যায়, কে কতটুকু পরিশ্রম করছে।’

সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব শুধু জিপিএস নিয়েই বসে থাকেনি। ক্লাবটি এর সঙ্গে এনেছে ভিডিও বিশ্লেষণ করার সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে দুই দলের খেলার ধরনের তুলনামূলক অবস্থা, ফুটবলারদের দুর্বলতা-সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়। ম্যাচের ভিডিওর ওপর নির্ভর করতে হয় এই প্রযুক্তিকে। এর বাইরে অনুশীলনে ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহারও করে থাকে সাইফ।

ফুটবলে এমন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ভীষণ খুশি নারী দলের কোচ গোলাম রব্বানী, ‘আসলে আধুনিক ফুটবলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হলে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারের অনুশীলনের মানদণ্ড খালি চোখে আমরা বুঝতে পারি না। ওই ফুটবলার মাঠে ৬০ ভাগ দিচ্ছে, না শতভাগ দিচ্ছে, সেটা সাধারণভাবে বোঝা কঠিন। কিন্তু জিপিএস ব্যবহার করলে সহজেই এটা বোঝা যায়। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে সারা পৃথিবী। আমাদেরও সময় এসেছে এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার।’

প্রতিদিনিই হাত বাড়ালে মিলছে প্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিষ্কার। ফুটবলাররা মাঠের বাইরে ব্যবহার করছে উন্নত মানের মুঠোফোন, হেডফোন। মাঠেই–বা কেন প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকবেন জামাল ভূঁইয়া, মারিয়া মান্দারা!