ছাত্র থাকতেই সফটওয়্যার উদ্যোক্তা

কর্মীদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন মো. শাহজালাল। ছবি: স্মার্ট সময়
কর্মীদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন মো. শাহজালাল। ছবি: স্মার্ট সময়

লেখাপড়ার পাট চুকানোর আগেই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন যশোরের মো. শাহজালাল। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসসি) বিষয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন। এর মধ্যেই তিনি যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ১ হাজার ১৪০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ নিয়ে ‘টেকনোসফট বাংলাদেশ’ নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে ১৬ জন তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

‘চাকরি করব না, দেব’—বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে এ ভাবনা মাথায় আসে। ২০১৫ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) বিষয়ে স্নাতক হয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে পেশা গড়ার সিদ্ধান্ত নেন শাহজালাল। এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ‘নতুনহাট ডট কম’ নামে একটি ই-কমার্স সাইট খুলে ঢাকায় অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করেন। এরপর তাঁর স্বপ্ন ডানা মেলতে থাকে। টেকনোসফট বাংলাদেশ ঢাকায় শুরু হলেও এখন এটি যশোরে।

শাহজালাল বলেন, ‘ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইইই–তে স্নাতক শেষ করি। এরপর সফটওয়্যার তৈরির কাজ শিখে নিই। স্বপ্ন দেখলাম, চাকরি করব না; চাকরি দিব। সেই স্বপ্ন থেকেই প্রথমে নতুনহাট ডট কমের সৃষ্টি।’

অনলাইনে ব্যবসা ভালোই জমে উঠেছিল। এ সময় আরও দুজন সফটওয়্যার নির্মাতাকে নিয়ে তিনজন মিলে ‘স্কুল ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার’ তৈরি করেন শাহজালাল। তখনই টেকনোসফট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ‘পরে জানতে পারলাম, যশোরে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। তখন আমার এক প্রকৌশলী মামার সহযোগিতায় ওই পার্কের সপ্তম তলায় ১ হাজার ১৪০ বর্গফুটের একটি জায়গা বরাদ্দ নিই।’ বললেন শাহজালাল। জানালেন, এই প্রতিষ্ঠানে ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।

শাহজালালের বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোলে। তাঁর বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। প্রথম দিকে পরিবার চায়নি যে ছেলে ব্যবসা করুক। কিন্তু পরে অবশ্য সবাই সমর্থন দিয়েছেন।

গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে টেকনোসফট বাংলাদেশের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, আট–দশজন কর্মী কম্পিটারে কাজ করছেন। শাহজালাল তাঁদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রোগ্রামার আজাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছি। আমি এই খাতে পেশা গড়তে চাই। সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টাও করছি না। আমি সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।’

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাজমুস সাকিব বলেন, ‘নেটওয়ার্কি সিস্টেম নিয়ে কাজ করছি। এখানকার বেতনের টাকা দিয়ে আমি অতিরিক্ত কোর্স শেষ করছি।’

সফটওয়্যার তৈরি, নেটওয়ার্কিং ও ডেটা সায়েন্স নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। তবে উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। পরিবার থেকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা এখনো সৃষ্টি হয়নি। শাহজালাল বলেন, ‘আমাকে তো প্রথম দুই বছর বলতে হয়েছে যে ছোটখাটো একটি চাকরি করি। সরকারিভাবে তরুণ উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে না। তরুণেরা কোনো প্রতিষ্ঠান গড়তে চাইলে পদে পদে বাধা রয়েছে। তারা জানে না যে কোথা থেকে শুরু করতে হয়, নিবন্ধন কোথা থেকে নিতে হয়। উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকারিভাবে প্রতিবছর সফল উদ্যোক্তাদের তালিকা প্রকাশ করা যেতে পারে।’