হুয়াওয়ের বিধিনিষেধ ৩ মাসের জন্য শিথিল

হুয়াওয়ের ওপর আরোপিত কিছু বিধিনিষেধ সাময়িক শিথিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে হুয়াওয়ের ওপর আরোপিত ওই বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কিছু অংশ গতকাল সোমবার শিথিলের কথা বলা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে হুয়াওয়ের গ্রাহকের কথা বিবেচনা করে এ শিথিলতা দেওয়া হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ থেকে হুয়াওয়ে টেকনোলজিসকে বর্তমান হুয়াওয়ে হ্যান্ডসেটগুলোর জন্য বিদ্যমান নেটওয়ার্ক ও সফটওয়্যার আপডেটের সুবিধার্থে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের তৈরি পণ্য কেনার সুযোগ দেবে। তবে নতুন স্মার্টফোন তৈরিতে লাইসেন্স অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত মার্কিন প্রতিষ্ঠানের তৈরি যন্ত্রাংশ কেনার অনুমতি দেবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস এক বিবৃতিতে বলেন, হুয়াওয়ের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল্প ব্যবস্থা করতে সময় দেওয়ার জন্য নতুন এ অনুমোদন দেওয়া হলো।

নতুন এ অনুমোদনপ্রক্রিয়া তিন মাসের জন্য শিথিল থাকবে। এর অর্থ, হুয়াওয়ের সাপ্লাই চেনকে তাদের গ্রাহক নিয়ে দ্রুত ও সুদূরপ্রসারী অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আইনজীবী ও বাণিজ্য বিভাগের সাবেক সাবেক কেভিন ওলফ বলেন, ‘এর লক্ষ্য হচ্ছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার সিস্টেম ও মোবাইল ফোনকে সম্ভাব্য নষ্টের হাত থেকে রক্ষা করা। এটা আত্মসমর্পণ নয়। এটি ঘর গোছানো।’

গত রোববার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে। এতে সরকারি অনুমোদন ছাড়া মার্কিন সংস্থা থেকে হুয়াওয়ের জন্য প্রযুক্তিসেবা নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয়। হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান চীনের এ বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে।

সম্প্রতি হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্র এমন কোম্পানিতে তালিকাভুক্ত করেছে, যার সঙ্গে বাণিজ্য করতে হলে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স নিতে হবে। এরপরই গুগল এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল।

এক বিবৃতিতে গুগল জানায়, তারা আদেশ মেনেই কাজ করছে এবং এর প্রভাব পর্যালোচনা করছে। গুগলের নতুন এই সিদ্ধান্তের কারণে হুয়াওয়ে গুগলের নিরাপত্তাবিষয়ক আপডেট ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আর পাবে না। তবে ‘ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম’-এ থাকা সফটওয়্যারগুলোই শুধু সচল থাকবে হুয়াওয়ের স্মার্টফোনগুলোয়।

নতুন অনুমোদন বিষয়ে গুগলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গুগলের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেছেন, হুয়াওয়েকে অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাকসেস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে আসবে গুগল।

সিএনবিসির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা।

তিন মাস পর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের মেয়াদ বাড়ানোর হবে কি না, তা বিবেচনা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

গত বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকা’ ভুক্ত করে। এর ফলে সরকারি অনুমোদন ছাড়া মার্কিন সংস্থা থেকে প্রযুক্তিসেবা নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয় হুয়াওয়ের জন্য।

আসলে চীনা বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্বে বরাবরই হুয়াওয়েকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে আসছেন ট্রাম্প। গত বছর থেকে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে ফাইভজি সেবার কাজে হুয়াওয়েকে ‘নিষিদ্ধ’ও ঘোষণা করা হয়। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে টেলিকম নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা দেশগুলো।

সরকারি মুখপাত্রের বরাতে গত শুক্রবার রয়টার্স জানায়, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি শিথিল করার কথা বিবেচনা করছে সরকার।

সোমবারের ঘোষণার পর সাময়িক জেনারেল লাইসেন্স সৃষ্টি হয়েছে, যার মেয়াদ ১৯ আগস্ট পর্যন্ত। এ লাইসেন্সের অধীনে নিরাপত্তাত্রুটি শনাক্তকরণ ও ফাইভজি নেটওয়ার্কের মান উন্নয়নে কাজ করতে পারবে হুয়াওয়ে।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের যন্ত্রাংশ কিনেছে হুয়াওয়ে। এর মধ্য কোয়ালকম, ইনটেল ও মাইক্রন টেকনোলজিসের মতো বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আইনজীবী ডগলাস জ্যাকবসন বলেন, ‘এটা বাস্তবতার পরীক্ষা। এটা থেকে বোঝা যায় হুয়াওয়ে পণ্য ও প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে রয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ আরোপ করে, তবে তার প্রভাব পড়বেই।’

কী প্রভাব পড়েছে
হুয়াওয়ের পণ্যে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। চীনা গুগল খ্যাত বাইদু তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লোকসানে পড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় চীনারা বাইদুর সার্চ রেজাল্টে বিজ্ঞাপন পোস্ট বন্ধ করে দিয়েছে। শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এক দিনে সাড়ে ১৬ শতাংশ শেয়ারের দর পড়েছে। গুগল যদি তাদের অপারেটিং সিস্টেম হুয়াওয়েকে না দেয়, তবে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমে যেতে হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে।

হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, হুয়াওয়ে এবং অনার ব্র্যান্ডের যেসব স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য পণ্য এখন বিশ্ববাজারে আছে বা ইতিমধ্যে বিক্রি হয়েছে, সেগুলোর নিয়মিত সিকিউরিটি আপডেট এবং বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করবে হুয়াওয়ে। বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে সব সময় একটি নিরাপদ ও টেকসই সফটওয়্যার ইকোসিস্টেম তৈরি অব্যাহত থাকবে।