হুয়াওয়ের কিছু আসে-যায় না: হুয়াওয়েপ্রধান

হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই। ছবি: রয়টার্স
হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র যতই নিষেধাজ্ঞা দিক না কেন, তাতে হুয়াওয়ের কিছু–আসে যায় না বলে মনে করেন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়ের শক্তি খাটো করে দেখছে।

চীনের সরকারি গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রেন ঝেংফেই বলেন, হুয়াওয়ের ওপর এই নিষেধাজ্ঞার তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নিকট ভবিষ্যতে কেউ হুয়াওয়ের ফাইভজি প্রযুক্তির ধারেকাছে আসতে পারবে না। বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়েকে নানাভাবে থামানোর চেষ্টা করছে। এমনকি তার প্রধান অর্থ কর্মকর্তাকে কানাডায় গ্রেপ্তারও করিয়েছে তারা। অনেক দেশকেই নিরাপত্তাঝুঁকির কথা বলে ফাইভজি অবকাঠামোয় হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার না করতে চাপ দিচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে হুয়াওয়েকে এনটিটি লিস্টে ঢুকিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে হুয়াওয়ের কাছে যন্ত্রাংশ বিক্রি করতে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। বিবিসি, সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ান সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়েকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে চীনের টুঁটি চেপে ধরতে চায়। সর্বোচ্চ ছাড় আদায় করাই তার লক্ষ্য। আর ফাইভজি প্রযুক্তির নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা তো আছেই। যদিও এতে হুয়াওয়েই এগিয়ে আছে। তবে হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান রেন ঝেংফেই এ–ও বলেছেন, ফাইভজিতে সফল হতে গেলে বিবাদ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে হবে। চীনের সরকারি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আদর্শের জন্য আমরা পরিবারসহ নিজেদের কোরবানি দিই। আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করি। কিন্তু শেষমেশ মানবতার জন্য অবদান রাখতে আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে।’

তবে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত মোক্ষম সময়ে এই আঘাত করেছে বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যে হুয়াওয়ের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরেমি থম্পসন। তিনি এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের নৈরাশ্যবাদী আচরণ আখ্যা দিয়েছেন। বিবিসির রেডিও ৪-এর ওয়ার্ল্ড অ্যাট ওয়ান অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে আছি। এই সময়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মানে হলো আমাদের ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানা।’ তিনি আরও বলেন, সমস্যাটা বাণিজ্য নিয়ে, নিরাপত্তা নিয়ে নয়।

এদিকে চীন অ্যাপল পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে। উল্লেখ্য, চীন অ্যাপলের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার। শেষমেশ বয়কট না করলেও অ্যাপলের পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণবিধি আরও কঠোর করতে পারে চীন। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে সাইবার চুরির অভিযোগ করলে চীনের মাইক্রোসফট কার্যালয় তল্লাশি করা হয়েছিল।

ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় সোমবার পৃথিবীর অনেক শেয়ারবাজারেই দরপতন হয়েছে। ইউরোপ ও ওয়াল স্ট্রিটে চিপ নির্মাতাদের শেয়ারের দাম পড়ে যায়। অ্যাপলের শেয়ারের দাম কমেছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ, লুমেনটাম হোল্ডিংসের দাম কমেছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ, ইনফিনিয়নের কমেছে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ আর ইতালীয় চিপ নির্মাতা এসটিএমআইক্রোইলেকট্রনিকসের কমেছে ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রের পিএইচএলএক্স সেমিকন্ডাক্টর সূচক পড়েছে ৪ দশমিক ০২ শতাংশ।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেছে। বিদ্যমান নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও সফটওয়্যার হালনাগাদ দিতে হুয়াওয়ে মার্কিন কোম্পানির কাছ থেকে যন্ত্রাংশ কিনতে পারবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফল কতটা সুদূরপ্রসারী হতে পারে।