এখন কী করবে হুয়াওয়ে?

বৈশ্বিক ব্যবসা বাড়ানোর জন্য গুগল ও মাইক্রোসফটের সঙ্গে পার্টনারশিপের ওপর নির্ভর করতে হয় চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে। কিন্তু এখন হয়তো মার্কিন ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ছাড়াই ভবিষ্যতে পথ চলতে হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে।

গত শুক্রবার মাইক্রোসফট তাদের অনলাইন স্টোর থেকে হুয়াওয়ে ল্যাপটপ সরিয়ে ফেলেছে। ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ থেকে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্তির পর এটা আরেকটি ধাক্কা। হুয়াওয়ের ওই নিষেধাজ্ঞার ফলে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেছে। অবশ্য মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে ফেলার ঘটনায় কেউ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মুর ইনসাইটস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজির প্রধান বিশ্লেষক প্যাট্রিক মুরহেড বলেন, মাইক্রোসফটের অনলাইন স্টোর থেকে হুয়াওয়ের পণ্য সরিয়ে ফেলার ঘটনাটি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা দেয়। হুয়াওয়কে তাদের বর্তমান ব্যবসার প্রয়োজনে স্বল্প ও মাঝারি মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানির ওপর নির্ভর করতে হয়।

মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম, ইনটেল, এনভিডিয়া, ল্যাটিস ছাড়াও যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিপ নির্মাতা এআরএমের মতো প্রতিষ্ঠানের ওপর হুয়াওয়ের নির্ভরশীলতা রয়েছে। তারা হুয়াওয়ের স্মার্টফোন ও পিসির জন্য যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। তাদের মধ্যে কয়েকটি চিপ নির্মাতা হুয়াওয়েকে চিপ সরবরাহ বন্ধ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য এখনো কেউ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।

বিশ্লেষক মুরহেড বলেন, এগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে চীনের এক দশক পার হয়ে যাবে।

গত রোববার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড লাইসেন্স সরিয়ে নেয় মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল। তবে গত মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করলে অ্যান্ড্রয়েড লাইসেন্স আবার ফিরিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

গুগলের ওই লাইসেন্স না পেলে হুয়াওয়ে গুগলের ম্যাপ, জিমেইল, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো সেবগুলো যুক্ত করে স্মার্টফোন বিক্রি করতে পারবে না। গুগলের সিদ্ধান্তে বাধ্য হয়ে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম তৈরির কথা জানায় হুয়াওয়ে। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ সফটওয়্যারে চলে হুয়াওয়ে ল্যাপটপ। ভবিষ্যতে ল্যাপটপ থেকে উইন্ডোজ সমর্থন সরিয়ে নেওয়া হবে কি না, সে প্রসঙ্গে মন্তব্য করেনি মাইক্রোসফট।

হুয়াওয়ে তাই কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমের জন্য চীনের ন্যাশনাল ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেডমার্ক অনুমোদন পেয়েছে তারা।

হুয়াওয়ের একজন মুখপাত্র ফরচুন অনলাইনকে বলেছেন, তাঁদের অপারেটিং সিস্টেম তৈরির বিষয়টি ‘প্ল্যান বি’ ও ‘সর্বশেষ প্রচেষ্টা’। তাঁর ভাষ্য, ‘আমাদের পছন্দ মাইক্রোসফট ও গুগল। কিন্তু তারপরেও আমাদের প্ল্যান বি ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিক বা দ্বিতীয় প্রান্তিকে উন্মুক্ত হবে।’

হুয়াওয়ের যে অপারেটিং সিস্টেম তৈরি হবে, তা চীনের হুয়াওয়ের গ্রাহকেরা এখন যে ধরনের সুবিধা পান, অনেকটাই সে রকম হবে। দেশটিতে গুগলের সেবা বন্ধ। নতুন অপারেটিং সিস্টেমে গুগল সার্ভিসেসের বিকল্প হিসেবে হুয়াওয়ের নিজস্ব অ্যাপ গ্যালারি স্টোর থাকবে।

অ্যান্ড্রয়েডের মতো বাজার দখল করা ও গ্রাহক–সন্তুষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় ধরে হুয়াওয়ের কার্যকর অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে। গুগলের ওপেন সোর্স–ভিত্তিক অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ৮০ শতাংশ বাজার দখল করে রয়েছে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৫ কোটি ৯১ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বাজারে এনেছে হুয়াওয়ে। বিশ্ব বাজারে এখন স্মার্টফোন বিক্রির দিক থেকে স্যামসাংয়ের পরের অবস্থান তাদের। স্মার্টফোনের বাজারে বছরের হিসাবে ৫০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এ মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনা পণ্যে আরেক দফা শুল্কারোপ করে। এর জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানায়।

ওয়াশিংটন ও বেইজিং দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে। তারা কেউই পিছু হটতে নারাজ।

হুয়াওয়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান কেন হু বলেছেন, হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করে গ্রাহক ও ব্যবসার জন্য ‘একটি বিপজ্জনক উদাহরণ’ তৈরি করা হলো। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নীতিমালার সঙ্গে যা কোনোভাবেই যায় না। বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতার সুযোগ নষ্ট করা হলো। যৌথভাবে এ সমস্যা সমাধান করা না গেলে অন্য খাত ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।