গাড়ির বাড়তি বাম্পার কেন?

বাড়তি সতর্কতার জন্য অনেক গাড়িতেই দেখা যায় বাড়তি বাম্পার। ছবি: সংগৃহীত
বাড়তি সতর্কতার জন্য অনেক গাড়িতেই দেখা যায় বাড়তি বাম্পার। ছবি: সংগৃহীত

নতুন গাড়ি কেনার পর যে চিন্তা আসে, সেটা গাড়ির নিরাপত্তা। গাড়িটি চলতে গিয়ে যদি কোথাও লেগে যায়, তাহলে কী হবে? অথবা অন্য কোনো বাহনের সঙ্গে লেগে আঁচড় যদি পড়ে? কীভাবে গাড়ি চকচকে ও ঝকঝকে রাখা যায়, এ নিয়ে গাড়ির মালিকের চিন্তার অন্ত নেই। গাড়ি কেনার পরের ব্যস্ততম শহরগুলোতে ছোটখাটো ধাক্কা বা রিকশার ঘর্ষণ থেকে মুক্তি পেতে সবার আগে যা লাগানো হয়, তা হলো বাড়তি বাম্পার। বাম্পারের সঙ্গে বাড়তি বা অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে, কারণ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিটি গাড়িতেই সামনে ও পেছনে বাম্পার দিয়ে থাকে।

গাড়িতে বাম্পারের কাজ কী?
বাম্পার মূলত গাড়িকে সুরক্ষা দেয়। বেশির ভাগ ব্যক্তিগত গাড়িতে সামনে ও পেছনে বাম্পার দেওয়া থাকে। এই বাম্পারগুলো প্লাস্টিকের তৈরি। গাড়ি কোথাও ধাক্কা খেলে অথবা চালানোর সময় অন্য কোনো গাড়ি বা বস্তুর সঙ্গে ঘর্ষণ হলে গাড়ির এই অংশটি তা মোকাবিলা করে। ফলে ইঞ্জিন আঘাতপ্রাপ্ত হয় না। গাড়ির বাম্পারে সামনের (ফ্রন্ট) গ্রিল থাকে। ফ্রন্ট গ্রিলের মাধ্যমে ইঞ্জিনে বাতাস পৌঁছায়। ইঞ্জিনকে শীতল রাখতে এবং গাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে এই গ্রিলগুলো ব্যবহৃত হয়। কিছু কিছু গাড়িতে আগে থেকেই বাড়তি বাম্পার লাগানো থাকে। অতিরিক্ত বাম্পার সাধারণত এসএস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম বা লোহার তৈরি। গাড়িতে বড় ধরনের আঘাত লাগলেও এই বাম্পার থাকার ফলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কমে যায়।

যেসব ব্যক্তিগত গাড়িতে অতিরিক্ত বাম্পার সংযুক্ত করা হয়, এই বাম্পারগুলো গাড়ির জন্য কতটা প্রয়োজনীয়? অটোমোবাইল প্রকৌশলী আশরাফুল হাসান বলেন, প্রথমে বুঝতে হবে বাম্পার মূলত গাড়ির কোথায় যুক্ত করা হয়। গাড়ির সামনে ও পেছনে চেসিস ঝালাই করে এসএস স্টিল বা রড গাড়ির বাম্পারের আকৃতির সমান করে বেষ্টনী তৈরি করা হয়। এতে কিন্তু গাড়ির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সও কমে যায়। রাস্তায় ঝালাই করা অতিরিক্ত কলামটি লেগে যেতে পারে। ধরে নিলাম অতিরিক্ত বাম্পার গাড়িকে রক্ষা করবে। কিন্তু যদি গাড়িকে পাশ থেকে ধাক্কা দেওয়া হয় বা অন্য কোনো বাহন আঁচড় কাটে তাহলে বাম্পার কীভাবে নিরাপত্তা দেবে? আধুনিক গাড়িগুলোতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে যে বাম্পার গাড়ির সঙ্গে আসে, তা এমনভাবে বানানো হয় যেন ধাক্কা খেলেও সহজে ভেঙে না যায়। অতিরিক্ত বাম্পারে যদি আঘাত লাগে, তখন এই আঘাত গাড়ির বাম্পারেও আঘাত করে। এতে দ্বিগুণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অতিরিক্ত বাম্পারের আলাদা ওজন রয়েছে। চেসিসে বাম্পার যুক্ত করলে এই অতিরিক্ত ওজন গাড়িকে বহন করতে হয়। এতে জ্বালানি খরচ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত বাম্পার ও গাড়ির বাম্পারের মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে, সে দূরত্বে সাইকেল, রিকশা বা মোটরসাইকেলের চাকা আটকে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে হিসেবে অতিরিক্ত বাম্পার উপকারের চেয়ে অপকার করে বেশি। গাড়ির সঙ্গে আসা বাম্পারকে প্লাস্টিক বাম্পার বলা হয়।

প্লাস্টিক বাম্পার শুধু গাড়ির নিরাপত্তা দেয় না বরং কোনো মানুষ যদি গাড়ির সামনে পড়ে যায়, তাহলে গাড়ির ধাক্কা লাগার পরে যেন শারীরিকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ চিন্তাতেও এ ধরনের বাম্পার ব্যবহৃত হয়। অতিরিক্ত বাম্পারের ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে গাড়ি আঘাত করলে পথচারীর গুরুতর আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মারাত্মক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বাম্পার চালকের মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ার কারণও হতে পারে।

তবে রাজধানী অথবা প্রধান প্রধান শহরে ছোটখাটো আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাড়তি বাম্পার দারুণ কাজ করে। এ ছাড়া যানজটে বা পার্ক করার সময় সংশয়হীনভাবে গাড়ি চালানো যায়। লেগে গেলে অতিরিক্ত বাম্পারে লাগবে তাতে কী? গাড়ি তো নিরাপদ।

বাম্পারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে টয়োটা এলিয়েন ব্যবহারকারী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি গাড়ি কিনেই অতিরিক্ত বাম্পার সংযুক্ত করেছি। বাম্পার মূলত কয়েকভাবে আমার গাড়িটিকে সুরক্ষা দেয়। সামনে ও পেছনের আঘাত থেকে গাড়িকে রক্ষা করে। রিকশার চাকা লেগে গেলেও দাগ পড়ার ভয় থাকে না। গাড়ি পার্ক করার সময় ছোট পার্কিংগুলোয় পেছনে দেয়ালে লেগে গেলেও গাড়ির ক্ষতি হওয়ার ভয় নেই।’

ফেডারেল অটোসের চেয়ারম্যান মো. আশফাকুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত বাম্পার গাড়ির উপকারের চেয়ে ক্ষতি করে বেশি। অতিরিক্ত বাম্পারের ব্যবহারের শুধু এই সাব-কন্টিনেন্টেই দেখা যায়। উন্নত দেশে এই অতিরিক্ত বেষ্টনীর কথা মানুষ চিন্তাও করে না। গাড়িতে বিল্টইন যে বাম্পার থাকে, সে বাম্পারের ভেতরে কুশন থাকে। ফলে গাড়ি ধাক্কা খেলেও আঘাতের গতি রহিত হয়। অতিরিক্ত বাম্পার থাকলে এই কুশন কাজ করে না। ফলে আরোহীর শরীরের ঘাড় বা কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, গুলশান, মালিবাগ, বারিধারাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে অতিরিক্ত বাম্পার সংযুক্ত করার ওয়ার্কশপ রয়েছে। দেশে বেশির ভাগ অতিরিক্ত বাম্পার তৈরি হলেও চীন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকেও আমদানি করা হয়। ৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে অতিরিক্ত বাম্পারের মূল্য হয়ে থাকে। সাধারণত যেখান থেকে অতিরিক্ত বাম্পার কেনা হয়, সেখানেই বাম্পার সংযোজন করা হয়।

গাড়িতে অতিরিক্ত বাম্পার
সুবিধা
● সামনে ও পেছনে আঘাতের হাত থেকে গাড়িকে রক্ষা করা যায়
● অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
● সংকীর্ণ স্থানে গাড়ি পার্ক করা সহজ হয়
● ডেন্টিং ও পেন্টিংয়ের খরচ কমানো যায়
● যানজটে নিরাপদ চালনার সহায়ক হয়

অসুবিধা
● গাড়ির দুই পাশে আঘাত বা দাগ লেগে যাওয়ার সংশয় থেকে যায়
● অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির মূল সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় না
● বড় দুর্ঘটনায় ঘাড় বা কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে
● গাড়ির ওজন বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি খরচ বেড়ে যায়
● আইনি ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে