ক্রিকেট মাঠের প্রযুক্তি

ক্রিকেট বিশ্বকাপের উন্মাদনা এখন ঘরে ঘরে। সবচেয়ে বেশি দেখা হয়, এমন টেলিভিশন সম্প্রচারের তালিকায় রয়েছে এই ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ প্রায় ২০০ দেশের ২০০ কোটির বেশি দর্শক উপভোগ করেন। তবে মাঠে আর ঘরে দেখা খেলার মধ্যে যেমন একটা পার্থক্য রয়েছে, অমিল রয়েছে তেমনি মানুষের চোখ ও প্রযুক্তিতেও। ক্রিকেট খেলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে এখন ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি। এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের উল্লেখযোগ্য অত্যাধুনিক কয়েকটি প্রযুক্তির কথা লিখেছেন শাওন খান।

ডিআরএস
আম্পায়ারকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে ব্যবহৃত হয় ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস)। যখন আম্পায়ার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ভুলে যান বা ভুল করেন, তখন সেটি বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহারে পুনরায় যাচাই করে দেখা হয়। এবারের বিশ্বকাপেও থাকছে এই ডিআরএস।

হট স্পট
আলট্রাএজ প্রযুক্তির মাধ্যমেও ব্যাট-বলের স্পর্শ নিশ্চিত করা না গেলে তখন আসে হট স্পট প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি মাঠে অবস্থিত তাপ সংবেদনশীল ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে। এটি মনোক্রোম্যাটিক দৃশ্যের মাধ্যমে বলের প্রথম কোনো কিছুকে স্পর্শ করা দেখায়। হট স্পট প্রযুক্তি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আলট্রাএজ প্রযুক্তির সঙ্গে ব্যবহৃত হয়।

হক-আই
ক্রিকেটে বোলারের ছোড়া বলের গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারও হয়ে যায়। এমন চোখের পলকে ছুটে চলা বলের গতিকে ধারণ করতে ব্যবহার করা হয় হক-আই প্রযুক্তি। হক-আই টেকনোলজির নির্মিত এই প্রযুক্তি এলবিডব্লিউ শনাক্ত করতে বলের গতিবিধি লক্ষ করে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বল একটি উইকেট নিতে পারত কি না, তা বলের গতি, ঘূর্ণন ও পিচের কোথায় পড়েছিল, এসব কিছু ধারণ করে। এ ছাড়া একটি বল বা ওভারের ছয়টি বলের দৃশ্য দেখাতেও ব্যবহৃত হয়। হক-আই প্রযুক্তিতে ব্যাটসম্যানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার নতুন সংস্করণও করা হয়েছে।

ট্র্যাকার
আজকাল ক্রিকেটারদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে ব্যক্তিগত ও কাস্টমাইজড গিয়ার্স হিসেবে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ট্র্যাকিং যন্ত্র। হক-আই প্রযুক্তিতেও এ ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।

স্পাইডারক্যাম
কমবেশি ক্রিকেট খেলা যাঁরা দেখেন, তাঁদের অনেকেরই চোখে পড়বে মাঠের ওপর একটা ক্যামেরা সব সময় ছোটাছুটি করছে। মূলত চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত এ ধরনের ক্যামেরাকে স্পাইডারক্যাম বলা হয়। এ ক্যামেরা দর্শককে মাঠের নিখুঁত ও মুক্ত দৃশ্য দেখাতে সক্ষম। ক্যামেরাটি মাঠের যেকোনো প্রান্তে ছুটতে পারে। দেখতে ড্রোন মনে হলেও স্পাইডারক্যাম মাঠের চার কোণের সঙ্গে যুক্ত চারটি তারের মাধ্যমে চলাফেরা করে।

আলট্রাএজ
উইকেটকিপার বল ধরে ফেলার আগে সেটি ব্যাট স্পর্শ করেছিল কি না, তা নির্ণয় করা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এমন অবস্থায় আম্পায়ার যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অনিশ্চিত থাকেন, তবে ব্যবহার করা হয় আলট্রাএজ প্রযুক্তি। এটি মূলত বল ব্যাটে লাগার শব্দকে ধারণ করার প্রযুক্তি। ব্যাটসম্যানের পেছনে একটি বিশেষ মাইক্রোফোন থাকে, যা খুব কম দূরত্বের শব্দ উচ্চ মাত্রায় রেকর্ড করতে পারে। ব্যাটসম্যানের আশপাশ ছাড়া আর কোনো শব্দই ধারণ করে না এই স্নিকোমিটার নামে পরিচিত আলট্রাএজ প্রযুক্তির মাইক্রোফোন।