ক্রিকেটারদের রোদচশমা এবং...

বিরাট কোহেলি, মাশরাফি বিন মর্তুজা, লাসিথ মালিঙ্গা। ছবি: শামসুল হক ও রয়টার্স
বিরাট কোহেলি, মাশরাফি বিন মর্তুজা, লাসিথ মালিঙ্গা। ছবি: শামসুল হক ও রয়টার্স

রোদচশমা ছাড়া যেন ক্রিকেটার ভাবাই যায় না। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অনেক তারকা ক্রিকেটারের আছে রোদচশমার বিচিত্র সংগ্রহ। তাঁদের পছন্দের অনুষঙ্গের তালিকায় আরও আছে হ্যাট, আইফোন, বিশেষ গেম ইত্যাদি। ক্রিকেটারদের পছন্দের অনুষঙ্গ নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন।

লাল-সবুজ রঙের জার্সি পরা
ঘামে ভেজা ক্যাপে বাতাসের ছোঁয়া
…সানগ্লাস ওপরে আছে তোলা
রাখো না ঢেকে কেন ওই দুটি চোখ, হে যুবক?

নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় সেই ‘রংচটা জিনসের প্যান্ট পরা...’গানটির ক্রিকেটীয় সংস্করণ। ওস্তাদি মাফ করবেন। তবে ক্রিকেটপাগল তরুণীদের আপত্তি থাকার কথা নয়। এমনকি একদিন লাল-সবুজ পরার নেশায় বুঁদ হয়ে রাতদিন ক্রিকেটের সাধনা করা তরুণটিও সায় দেবে—একজন ক্রিকেটারমাত্রই আলাদা ধাঁচের ফ্যাশন আইকন।
ধোপদুরস্ত জার্সির সঙ্গে মানানসই কেডস, মাথায় ক্যাপ অথবা হ্যাট আর চোখে রোদচশমা। যেন পরিপূর্ণ এক প্যাকেজ। আমরা ক্রিকেটপ্রেমীরা তাতে বুঁদ হয়ে কখনো প্ল্যাকার্ডে লিখে ‘ম্যারি মি সাকিব/আফ্রিদি’ কিংবা পছন্দের খেলোয়াড়কে অনুসরণ করে। না না, চোখে চোখে রাখা নয়। বরং তাঁর চোখে যে ক্যাপ, সানগ্লাস পছন্দ কিংবা আরেকটু এগোলে যে মডেলের স্মার্টফোন পছন্দ, তা নিজেরও পছন্দ হয়ে ওঠা।

রোদচশমা প্রিয় অনেকের

মাশরাফি বিন মুর্তজা
মাশরাফি বিন মুর্তজা

প্রথমেই আসে সানগ্লাস মানে রোদচশমার কথা। এ বস্তু ক্রিকেটারদের যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি পছন্দেরও। ব্যাটিং-ফিল্ডিং যা–ই করেন, সবার আগে বল দেখা গুরুত্বপূর্ণ। ধুলাবালু কিংবা যেকোনো কিছু থেকে চোখ সুরক্ষিত রাখতে রোদচশমা ক্রিকেটারদের কাছে এককথায়, বিজ্ঞাপনে সংলাপের মতো ‘…ওটা (পড়ুন সানগ্লাস) ছাড়া আমার চলেই না।’ ফ্যাশনের কথা উঠলে সেটি মাঠের বাইরেও। একটা প্রশ্ন, বিরাট কোহলিকে শেষ কবে সানগ্লাস ছাড়া নিজস্ব পোস্ট করতে দেখেছেন?
হতে পারে আজই। কিন্তু আর দশজন ক্রিকেটারের মতোই রোদচশমার প্রতি কোহলির আলাদা একটা ইয়ে আছে। খেলার সময় ছাড়াও বই পড়া কিংবা ভ্রমণে কোহলির রোদচশমা লাগেই। রে ব্যান, ওকলে, ডিওর পছন্দের ব্র্যান্ড বর্তমান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই তারকার।
রোদচশমার শখ বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কম নয়। পুলিস, রে ব্যান, ওকলি, আরমানি—এসব নামীদামি ব্র্যান্ড মিলিয়ে শ খানেক রোদচশমা আছে তাঁর সংগ্রহে। খেলার মাঠে পরেন ওকলে, অ্যালেন, সোলেই ব্র্যান্ডের রোদচশমা। কখনো পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে পান কিংবা দেশের বাইরে গেলে মাশরাফি নিজেই পছন্দের রোদচশমা সংগ্রহ করেন।
মহেন্দ্র সিং ধোনির পছন্দের রোদচশমার মধ্যে ওকলে, রিবক অন্যতম। বাইকের মডেলের সঙ্গে মিলিয়ে রোদচশমা পরতে পছন্দ করেন। মাঠের বাইরে চোখ ঢেকে রাখেন কেতাদুরস্ত রোদচশমায়।

ক্রিস গেইল
ক্রিস গেইল

কিন্তু ক্রিস গেইল কেতাদুরস্ত ধাঁচের মানুষ সামান্যই। সোনার প্রলেপ দেওয়া ফ্রেমের রোদচশমা পরার ঝোঁক আছে ‘ইউভার্স বস’-এর। এমনিতে ওকলে রোদচশমা তাঁর পছন্দের। খেলাধুলার সরঞ্জাম ও ফ্যাশন ডিজাইনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা এ প্রতিষ্ঠানের রোদচশমার প্রতি আলাদা আগ্রহ আছে ক্রিকেটারদের। ২০১৩ পিংক টেস্টে ডেভিড ওয়ার্নার যে গোলাপি রোদচশমা পরেছিলেন, সেটি ওকলে ব্র্যান্ডের।

ভিডিও গেমের ভক্ত
আর হ্যাঁ, ক্রিস গেইল হাতের কাছে প্লে স্টেশন ও এক্সবক্স রাখতে পছন্দ করেন। ‘কল অব ডিউটি’ তাঁর পছন্দের গেম। ভারতীয় ক্রিকেট দলও শুটিং গেমের ভক্ত। সম্ভবত সবাই! বিশ্বকাপ খেলতে ইংল্যান্ডে উড়াল দেওয়ার আগে দলের বেশির ভাগকে পিইউবিজি (পাবজি) গেম খেলতে দেখা গেছে মুম্বাই বিমানবন্দরে।

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান
কার্ল হুপার
কার্ল হুপার

হ্যাটও পরেন তাঁরা
ক্রিকেটে হ্যাটের ব্যবহার কমেছে। বেশির ভাগই ক্যাপ পরতে অভ্যস্ত। তবে ক্যারিবীয় ক্রিকেটার কার্ল হুপারকে দেখা গেছে হ্যাট পরতে। কিথ আথারটন, কার্টলি অ্যামব্রোসও পরেছেন হ্যাট। বাংলাদেশে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানকেও মাঝেমধ্যে হ্যাট পরতে দেখা যায়।

বিরাট কোহলি
বিরাট কোহলি

ক্রিকেটারের মুঠোফোন
এমন দিন হয়তো কাছেই, মাঠে রোদচশমার কাচে ক্রিকেটাররা তাঁদের খেলার (পারফরম্যান্স) নাড়িনক্ষত্র জেনে নেবেন। অবশ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির পরশ মেখেই ক্রিকেটারদের পথচলা। মুঠোফোন ব্যবহারে কোহলি যেমন আইফোনের রসিক। আইফোন এইট ও এক্স ছাড়াও ব্ল্যাকবেরি ক্ল্যাসিক আছে কোহলির। আর শাওমির দূত হওয়ায় এ ব্র্যান্ডের ফোনও দেখা যায় তাঁর হাতে। রোহিত শর্মার পছন্দ গ্যালাক্সি এস এইট, ধোনির আইফোন সেভেনপ্লাস।
গেইল ব্যাকপ্যাকে খুব ভালো হেডফোন রাখেন সব সময়। তাঁর ভাষায়, ওটা নাকি গেইল ব্র্যান্ডের! আইফোন ও স্যামসাংয়ের মুঠোফোন ব্যবহার করতে দেখা গেছে তাঁকে। এর আগে ভারতের হোয়াম মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের দূতের ভূমিকায় ছিলেন গেইল। হোয়াম ব্র্যান্ডের ফোন ব্যবহার করা তাঁর জন্য বিচিত্র নয়।

ক্রিকেটারের জীবন প্রযুক্তিময়
ক্রিকেটারদের এসব ফ্যাশনের সঙ্গে দৈনন্দিন অনুশীলনের প্রযুক্তিজীবনও জড়িত। যেমন ধরুন, কতটা অনুশীলন করলেন, জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) থেকে পাওয়া সেই তথ্যটুকু পৌঁছে যাচ্ছে ক্রিকেটারের মুঠোফোনে। প্রযুক্তি ক্রিকেটারদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি ফ্যাশনে এনেছে বৈচিত্র্যও। মুঠোফোনে ক্রিকেটের আলাদা সফটওয়্যার ব্যবহার তার প্রমাণ আর অনাদিকাল থেকে টিকে থাকা ক্যাপ-হ্যাট ঐতিহ্যের ধারক। এ দুয়ের উৎকৃষ্ট মিশেলে ক্রিকেটাররাও হয়ে উঠেছেন ফ্যাশনেবল, টেক স্যাভি—যা অনুসরণ করছে তাঁদের অসংখ্য ভক্তও।