টয়োটার নতুন গাড়ি

বাংলাদেশের যেকোনো রাস্তায় যে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি অবশ্যই দেখা যাবে তা হলো টয়োটা। ১৯৩৪ সালে অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান হিসেবে কিচিরো টয়োডার হাত ধরে টয়োটার যাত্রা শুরু হয়। জাপানের গাড়ি বাজারকে মাতিয়ে এশিয়া অঞ্চলেও টয়োটা গাড়ি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভক্সওয়াগন, জেনারেল মোটরস এবং ফোর্ডকে পেছনে ফেলে এ অঞ্চলে টয়োটা ‘করোনা’ গাড়ি ক্রেতাদের নজর কাড়ে। সেই যে শুরু, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি টয়োটাকে।

ব্র্যান্ড নিউ ও রিকন্ডিশনড দুইভাবেই দেশে টয়োটার গাড়ি প্রবেশ করে। দেশের মোটরগাড়ির বাজারে প্রায় ৭৫ শতাংশ রিকন্ডিশনড গাড়ি। নতুন গাড়ির বাজারেও টয়োটার চাহিদা তুঙ্গে। দেশে টয়োটা গাড়ি আমদানি করে নাভানা লিমিটেড। চলতি বছরও নাভানা লিমিটেডের রয়েছে বেশ কয়েকটি চমক। ২০১৯ মডেলের ব্র্যান্ড নিউ টয়োটা গাড়ি নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

টয়োটা রাশ

১৯৯৭ সালে টয়োটার এই মডেলটি ইন্দোনেশিয়ার গাড়িবাজারে নতুনত্বের ছোঁয়া দেয়। ২০১৯ সালে এসে দেশের বাজারে এটি এমন এক গাড়ি যা বৈশিষ্ট্য বা ফিচারের দিক থেকে এই মূল্যে ব্র্যান্ড নিউ বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৫০০ সিসি সেগমেন্টে এই গাড়িটিতে ৭টি আসন রয়েছে। ডুয়েল ভিভিটিআই ইঞ্জিনসমৃদ্ধ এই গাড়ি ফুয়েলসাশ্রয়ীও বটে। ২২০ মিলিমিটার (মিমি) গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সসমৃদ্ধ এই গাড়িটি যেকোনো রাস্তা অনায়াসে পাড়ি দিতে পারবে। স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল (এসইউভি) হিসেবে এই গাড়িটিকে প্রিমিয়াম বলা যেতে পারে। পুশ স্টার্ট, ক্লাইমেট কন্ট্রোল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, পেছনের যাত্রীদের জন্য আলাদা এসি ভেন্ট, প্রতিটি আসনের সারিতে চার্জিং পোর্ট, রুফ টেইলসহ আকর্ষণীয় ফিচারগুলোর জন্য টয়োটা রাশ ক্রেতাদের মন জুগিয়েছে। পেছনে দুই সারি সিট ফোল্ড করে পুরো গাড়িকে লাগেজ স্পেস হিসেবে ব্যবহার করার অপশনও রয়েছে। গাড়িটির টার্নিং রেডিয়াস মাত্র ৫.২ মিটার। নিরাপত্তার জন্য গাড়িটিতে ছয়টি এয়ারব্যাগ রয়েছে। হিল স্টার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, ভিএসসি, ব্যাকআপ সোনার এবং এলইডি হেডলাইটসমৃদ্ধ এই গাড়িটির মূল্য ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

করোলা আলটিস

পৃথিবীতে যত টয়োটা গাড়ি বিক্রি হয়েছে, তার মধ্যে টয়োটা করোলা উল্লেখযোগ্য। নাভানা লিমিটেড দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে করোলার প্রিমিয়াম সেডান কার টয়োটা করোলা আলটিস। ১৬০০ সিসির এই গাড়িটিতেও ডুয়েল ভিভিটিআই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। গাড়িটির চার চাকায় ডিস্ক ব্রেক রয়েছে। ডে লাইট ল্যাম্প (ডিএলআর), আরামদায়ক কেবিন, প্রশস্ত লেগ স্পেসে গাড়িটিতে ভ্রমণ অতুলনীয়। গাড়িটির মূল্য ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অ্যাভাঞ্জা

মাল্টিপারপাস ভেহিক্যাল (এমপিভি) ঘরানায় অ্যাভাঞ্জা গাড়িটিতে রয়েছে ১৫০০ সিসির ভিভিটিআই ইঞ্জিন। ৭ আসনবিশিষ্ট এই গাড়িটিতে ১৫ ইঞ্চি অ্যালয় হুইল রয়েছে। ৪ গিয়ার অটোমেটিক গিয়ারের এই গাড়িটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৮০ মিমি। বড় পরিবারের জন্য এই গাড়িটি উত্তম। অ্যাভাঞ্জার টার্নিং রেডিয়াস মাত্র ৪.৭ মিটার। তাই সহজেই যেকোনো জায়গায় গাড়িটিকে ঘোরানো সম্ভব। এ গাড়িটির পেছনের সারিতেও এসি ভেন্ট রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য এই গাড়িটিতেও দুটি এয়ারব্যাগ রয়েছে। রিমোট লক দিয়ে গাড়ি লক এবং আনলকের সুবিধাও মিলবে অ্যাভাঞ্জাতে। তৃতীয় সারি ভাঁজ করে গাড়িটির পরিসর বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অ্যাভাঞ্জার মূল্য ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

ইয়ারিস

সেডান গাড়ির মধ্যে ১৫০০ সিসি ইঞ্জিনের গাড়ির ব্যবহার বেশি। নাভানা লিমিটেড এই সেগমেন্টে যে নতুন গাড়িটি দেশের বাজারে বিক্রি করে, তার নাম ইয়ারিস। ৪ সিলিন্ডারের ডুয়েল ভিভিটিআই ইঞ্জিনের ইয়ারিসে ইলেকট্রনিক পাওয়ার স্টিয়ারিং রয়েছে। মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে, পুশ স্টার্ট, সিভিটি টিপট্রনিক ট্রান্সমিশন, প্রশস্ত বুট স্পেসসহ গাড়ির বডির ধরন বেশ পাকাপোক্ত। গতির সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির দরজা লক হয়ে যাওয়াটাও এই গাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ৩৩ লাখ টাকায় গাড়িটি দেশের বাজারে পাওয়া যাবে।

কেমরি হাইব্রিড

বিলাসবহুল সেডান গাড়ির মধ্যে জনপ্রিয় গাড়ির নাম কেমরি। এ গাড়িটি রিকন্ডিশনড এবং ব্র্যান্ড নিউ দুই ক্যাটাগরিতেই দেশে আসে। ২৫০০ সিসির এই গাড়িটি দেখতেও যেমন নজরকাড়া, গতিতেও তেমন দুর্দান্ত। হাইব্রিড গাড়ি হিসেবে জ্বালানিসাশ্রয়ী। প্যানারোমিক রুফ, লেদার সিট, ডুয়েল অটো এসি/হিটার, ক্রুইস কন্ট্রোল, পুশ স্টার্ট, এবিএস, ভিএসসি এবং এইচএসিসমৃদ্ধ এই গাড়িগুলো বেশ আরামদায়ক। মানেও যেমন অতুলনীয়, দামেও গাড়িগুলো বেশ চড়া। ব্র্যান্ড নিউ কেমরি হাইব্রিডের মূল্য ৯০ লাখ টাকা।

র‌্যাভ ফোর হাইব্রিড

এসইউভি ক্যাটাগরিতে ২৫০০ সিসি সেগমেন্টে আরেকটি ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির দেখা মেলে। গাড়িটির মডেল র‌্যাভ ফোর। প্রি–অর্ডারে এই গাড়িগুলো ডেলিভারি করা হয়। ৫ আসনের এই গাড়িটিতে অত্যাধুনিক সব সুযোগ–সুবিধা রয়েছে। রয়েছে সুপরিসর কেবিন স্পেস। তারবিহীন মোবাইল ফোন চার্জার, জেবিএল সাউন্ড সিস্টেম, অ্যাকসেসরিজ পাওয়ার আউটলেটসমৃদ্ধ এই গাড়িটি যেকোনো রাস্তা নির্বিঘ্নে পাড়ি দিতে পারবে। ব্লাইন্ড স্পট মনিটর থাকায় সহজে অন্য গাড়িকে অতিক্রম করা যায় র‌্যাভ ফোর দিয়ে। এসইউভি ক্যাটাগরিতে বিলাসবহুল এই গাড়িটির মূল্য ৮৫ লাখ টাকা। ফরমায়েশের ভিত্তিতে এই গাড়িগুলো সরবরাহ করা হয়।

হাইএস ১৫/১৬

কোনো প্রতিষ্ঠানে অথবা ভাড়া দেওয়ার জন্য দরকার বেশি আসনের গাড়ি। এই গাড়িগুলোতে ১৫ থেকে ১৬ জন যাত্রী অনায়াসে বহন করা যায়। তবে টয়োটার ১৫ আসনের গাড়ির চেয়ে ১৬ সিটের গাড়ির মূল্য কম। ১৬ আসনের গাড়িকে বাণিজ্যিক গাড়ি হিসেবে ধরা হয়। তাই এই গাড়িতে শুল্ক কমে যায়। ১৬ আসনের হাইয়েস গাড়ির মূল্য ৩৯ লাখ টাকা। ১৫ সিটে এই গাড়ির মূল্য ৪২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

টয়োটার নতুন গাড়ি সম্পর্কে নাভানা লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক শাহ খালেদ বলেন, জাপানের রাস্তার সঙ্গে এ দেশের রাস্তার পার্থক্য রয়েছে। জাপানের অভ্যন্তরীণ বাজারে যে গাড়িগুলো বিক্রি হয়, সে গাড়িগুলোর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম থাকে। অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্য থাকলেও দেশের রাস্তায় অনেক সুবিধা ব্যবহারের উপযোগী নয়। আমরা যে গাড়িগুলো আমদানি করি, তা এই দেশের রাস্তার উপযোগী করে বানানো হয়। এই গাড়িগুলোর বডি কোয়ালিটি জাপানি ডমেস্টিক গাড়িগুলো থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। মানুষের গাড়ির স্বাদ ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। মানুষ এখন রিকন্ডিশনড ছেড়ে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির প্রতি ঝুঁকছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে এই বাজার আরও বড় হবে।

নাভানা লিমিটেড গাড়িগুলোতে ১ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা দিচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রদর্শনী, বিক্রয় ও সার্ভিস সেন্টার রয়েছে।