যতটুকু সময়, ততটুকু বিনোদন

অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটগুলোর মাধ্যমে নাটক হোক বা চলচ্চিত্র, এখন চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। বিদেশি সেবাগুলোর পাশাপাশি জনপ্রিয় হচ্ছে দেশি স্ট্রিমিং সাইট
অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটগুলোর মাধ্যমে নাটক হোক বা চলচ্চিত্র, এখন চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। বিদেশি সেবাগুলোর পাশাপাশি জনপ্রিয় হচ্ছে দেশি স্ট্রিমিং সাইট

ড্রয়িংরুমের সোফায় আয়েশ করে মুড়ি মাখানোর বাটি নিয়ে একটা সিনেমা শেষ কবে দেখেছেন? কিংবা প্রতিদিন নিয়ম করে সন্ধ্যা সাতটায় প্রিয় টিভি সিরিজের নতুন পর্ব কয়জনই-বা দেখতে পারেন? ব্যস্ত নাগরিক জীবনে বিনোদনের সময়ের সঙ্গে নিজের সময় মেলানো যায় না। এখন নিয়মটা উল্টে গেছে, এখন নিজের সময়ের সঙ্গে মানিয়ে খুঁজে নিতে হয় কাঙ্ক্ষিত বিনোদনের বিরতি। সময়ে-অসময়ে পকেট থেকে বের করে একটুখানি বিনোদন নিতে হয়, তারপর আবার হুট করে ঢুকে যেতে হয় কাজে। অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটগুলো না থাকলে এই বিনোদনের বিরতি পাওয়া হয়তো নাগরিক জীবনকে করে তুলত ক্লান্তিকর। তবে এখন নেটফ্লিক্স, হইচই, জি-ফাইভের মতো অ্যাপগুলোর কারণে বদলে যাচ্ছে বিনোদনের সংজ্ঞা ও মাধ্যম।

চুলায় রান্না চাপিয়ে দিয়ে আয়েশা জাহানের করার কিছু থাকে না। তাই হাতে ফোন নিয়ে খুলে বসেন একটা অনলাইন স্ট্রিমিং সাইট। সেখানে দেখে নেন পুরোনো দিনের একটা বাংলা সিনেমা। যখন প্রেশারকুকারে হুইসেল বেজে ওঠে, তখন ছবিতে ‘পজ’ দিয়ে উঠে যান রান্নার তদারকি করতে। এরপর কাজ গুছিয়ে আবার সিনেমা শুরু করেন। তাঁর মেয়ে অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটের সাবস্ক্রিপশন নিয়েছেন। মেয়েই মাকে শিখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে মনমতো সিনেমা খুঁজে নিয়ে অবসরে দেখতে পারেন।

এখন একটা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড থাকলেই বিশ্বমানের বিনোদন পৌঁছে যাবে আপনার ঘরে, ব্যাগে, পকেটে। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ডে ডলার পেমেন্টের সুবিধা চালু থাকলেই আপনি নিয়ে নিতে পারেন নেটফ্লিক্সের মতো গ্লোবাল স্ট্রিমিং সাইটের গ্রাহক হওয়ার সুবিধা। এরপর নেটফ্লিক্সের বিশাল বিনোদনের ভান্ডার থেকে পছন্দমতো সিনেমা, রিয়েলিটি শো, নাটক, তথ্যচিত্র বেছে নিতে পারবেন আপনি। সিনেমা হলে গিয়ে নতুন ছবির প্রদর্শনীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। ঘরের সোফায় আসন পেতে বসেই বিশ্বের নামকরা নির্মাতাদের সিনেমা-নাটক-টিভি অনুষ্ঠান আপনি দেখতে পারবেন।

তবে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড এখনো বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতটা সহজলভ্য নয়। তাই বলে কি এগিয়ে যাওয়া থেমে থাকবে? অনেক গ্লোবাল স্ট্রিমিং সাইট এখন ভিন্ন পথ অবলম্বন করে ঢুকে পড়ছে সবার ঘরে। ফোনের ব্যালেন্স রিচার্জ করলেই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নাটক-সিনেমা দেখার সুবিধা পেয়ে যাচ্ছেন গ্রাহকেরা। এই যেমন কয়েক দিন আগে স্ট্রিমিং সাইট ‘জি-ফাইভ’ এই পদ্ধতিতেই বাংলাদেশের দর্শকদের সঙ্গে জুড়ে গেল। তারা রবি ও এয়ারটেল গ্রাহকদের মুঠোফোন রিচার্জের মাধ্যমে জি-ফাইভ দেখার সুযোগ করে দিল। একই পদ্ধতি বাংলাদেশে হইচই নামেরও একটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু করেছে ।

বাংলাদেশের দর্শকেরা স্ট্রিমিং সার্ভিসকে দারুণভাবে গ্রহণ করছেন। এটা কোনো গড়পড়তা কথার কথা নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে সেবা চালু করা ‘জি-ফাইভ গ্লোবাল’-এর চিফ বিজনেস অফিসার অর্চনা আনন্দ আমাদের জানালেন তথ্যটি। বাংলাদেশের বাজারে নিজেদের ব্যবসা শুরুর আগে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছিলেন তাঁরা। বাজার বোঝার জন্য স্বল্পপরিসরে একই সঙ্গে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে কার্যক্রম শুরু করেন তাঁরা। মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে জি-ফাইভ পর্যবেক্ষণ করে যে গ্রাহক নিবন্ধনের দিক থেকে বাংলাদেশ বাকি দুই দেশকে অনেক ব্যবধানে ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশের গ্রাহকেরা এখন দিন, সপ্তাহ আর মাসের ভিত্তিতে কিনে নিচ্ছেন স্ট্রিম করে নাটক-সিনেমা-সিরিজ দেখার সুবিধা। নেটফ্লিক্স, জি-ফাইভ, হইচই, আইফ্লিক্স, বায়োস্কোপ থেকে চাল-ডালের মতো করেই মেপে মেপে প্রয়োজন অনুযায়ী বিনোদন কিনে নিচ্ছে। আর এটাই এখন হয়ে উঠছে সময়ের চাহিদা।