আইফোনের নকশাকার কমোডেরও নকশাকার

স্যার জনি আইভ
স্যার জনি আইভ

আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাকবুক আর অ্যাপল ওয়াচের মতো যন্ত্রের নকশা করেছেন স্যার জনি আইভ। তবে চিরুনি, বেসিন, আংটি এমনকি কমোডের নকশাও করতে হয়েছে তাঁকে! কেন? বিস্তারিত জানাচ্ছেন মাহফুজ রহমান

বিখ্যাত শিল্পী, ভাস্করদের দলে তাঁর নামটি নেই। কিন্তু জনি আইভ নিঃসন্দেহে বড় শিল্পী। তাঁর শিল্পকর্মগুলো হলো—আইফোন, আইপ্যাড, আইম্যাক, ম্যাকবুক এয়ার, আইপড, অ্যাপল ওয়াচ। অ্যাপলের এই যন্ত্রগুলো মানুষের কাছে বড় আকাঙ্ক্ষার বস্তু। একেকটি যন্ত্র যেন রূপকথার চরিত্রের মতো—রূপেগুণে অনন্য। সেই যে ১৯৯৮ সাল থেকে আইম্যাক কম্পিউটার দিয়ে শুরু, তারপর থেকে একের পর এক মনোমুগ্ধকর নকশার যন্ত্রগুলো বাজারে এনেছে অ্যাপল। আর এসবের নকশা এসেছে জনি আইভের মাথা থেকেই। 

অথচ সেই জনি আইভ অ্যাপল ছেড়ে যাচ্ছেন! কেন? বাতাসে অনেক খবর আর গুজব উড়ে বেড়াচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের মতে, বন্ধু স্টিভ জবসের অভাব বোধ করছিলেন জনি। টিম কুক অ্যাপলের হাল ধরার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নকশাকার জনির কাজের জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছিল। এমনকি কুক নাকি জবসের মতো শিল্পের সমঝদারও নন। ফলে আর দশজন বড় শিল্পীর মতো জনির মনেও হয়তো অভিমান দানা বেঁধেছে। এ কারণেই হয়তো নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাইছেন। তবে তাঁর অ্যাপল ছেড়ে যাওয়া আমাদের বিষয় নয়। আমাদের আলোচনার বিষয় তাঁর করা বিচিত্র সব বস্তুর নকশা। 

আংটি
দাতব্য কাজের জন্য আংটিটি বানিয়েছিলেন জনি। বেশ কবছর ধরেই আফ্রিকা থেকে এইডস নির্মূলের জন্য কাজ করছে অ্যাপল। সে উদ্যোগের জন্য প্রচুর টাকাপয়সা দরকার। টাকা তুলতেই আংটির ধারণার জন্ম। গত বছরের শেষ দিকে দীর্ঘদিনের বন্ধু, আরেক বিখ্যাত নকশাকার মার্ক নিউসনকে নিয়ে জনি এই আংটি বানানোর কাজে হাত দেন। ঠিক করেন, আংটি বানাবেন আস্ত একটি হীরা দিয়ে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হীরার খণ্ড কেটে আংটি তৈরি করে ফেলেন জনি ও মার্ক। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আর্ট ডিলার কোম্পানি সথবি’স–এ আংটিটি বিক্রি হয় ২৫ লাখ ডলারে! 

ক্যামেরা
ক্যামেরা

ক্যামেরা
অ্যাপলের অনেক পণ্যের জন্যই ক্যামেরার নকশা করেছেন জনি। তবে এই ক্যামেরাটি পুরোদস্তুর ক্যামেরা। এটিও বানিয়েছিলেন দাতব্য কাজের জন্য টাকা তুলতে। ২০১৩ সালের কথা, সেবারও জনির সঙ্গী ছিলেন মার্ক নিউসন। ক্যামেরাটির নাম ছিল লাইকা ডিজিটাল রেঞ্জফাইন্ডার। অ্যালুমিনিয়ামের বডি, দেখতে খুবই মামুলি, তবে কম মাথা ঘামাতে হয়নি এর জন্য। একটি মাত্র ক্যামেরার জন্য পাঁচ শর বেশি মডেল আর ১ হাজারের মতো নমুনা (প্রোটোটাইপ) যন্ত্রাংশ বানাতে হয়েছিল জনি ও মার্ককে। এইডস, টিউবারকিউলোসিস ও ম্যালেরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে বৈশ্বিক তহবিল গঠনের জন্য তৈরি করা এই ক্যামেরা বিক্রি হয়েছিল ১৮ লাখ ডলারে!

কলম
মনে আছে নিশ্চয়ই, ২০১৭ সালে ফিজেট স্পিনার নামের ছোট্ট এক খেলনায় মেতেছিল দুনিয়ার কিশোর–তরুণেরা। মানসিক চাপ কমাতে ফিজেট স্পিনার বেশ কাজে দেয় বলে প্রমাণ পেয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। একই ধরনের একটি কলমের নকশা করেছিলেন জনি আইভ। ইন্টার্ন করার সময় টিএক্স২ নামের ওই কলমটি নকশা করার আগে জনি খেয়াল করেছিলেন, মানুষ মানসিক চাপে থাকলে কলম দিয়ে ‘কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং’ আঁকে। চাপ কমানোর এই কাজটি আরও সহজ করতেই কলমের আগায় একটি বল আর ক্লিপ রেখেছিলেন জনি। 

টেলিফোন
আইফোনের নকশাকার ল্যান্ডলাইন টেলিফোনেরও নকশা করেছিলেন। আশির দশকে ওই নকশা করে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন জনি। টেলিফোনটির নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘ওর​্যাটর’। ব্রিটিশ সরকার আয়োজিত প্রতিযোগিতাটির বিষয় ছিল ‘ভবিষ্যতের টেলিফোন’। অদ্ভুত এক নকশাই করেছিলেন জনি। ভবিষ্যতে যে সবচেয়ে আধুনিক মুঠোফোনের নকশা তাঁর হাত দিয়েই বেরোবে, এটা কি বুঝতে পেরেছিলেন?

কমোড ও বেসিন
যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল পলিটেকনিক থেকে পাস করে বের হওয়ার পর জনি যোগ দিয়েছিলেন লন্ডনের ডিজাইন এজেন্সি ট্যানজারিনে। নানা ধরনের জিনিসপত্রের নকশা করতে হয়েছিল সে সময়। ব্রায়ান ড্রাম ফ্ল্যাটলাইনার নামের এক চিরুনির নকশা করেছিলেন জনি, এমনকি কমোড ও বেসিনের নকশাও করতে হয়েছিল। ক্লায়েন্ট ছিল আইডিয়াল স্ট্যান্ডার্ড নামের এক প্রতিষ্ঠান। তবে জনির করা কমোড ও বেসিনের সেই নকশা মনে ধরেনি তাদের। ২০১৪ সালে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জনি আইভ রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘আমার কাজগুলো বোধ হয় একটু বেশিই আধুনিক আর ব্যয়বহুল ছিল! সে কারণেই হয়তো ক্লায়েন্ট আমার কাজ পছন্দ করেনি।’

সূত্র: বিবিসি, বিজনেস ইনসাইডার ও দ্য ভার্জ