বিলাসবহুল গাড়ির বাজারে

বেশ কিছু মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি ঢাকা ও চট্টগ্রামের শোরুমগুলোতে পাওয়া যায়। আবার ফরমাশ জানিয়ে নির্দিষ্ট মডেলের গাড়ি আনানোর ব্যবস্থাও আছে। ছবি: সংগৃহীত
বেশ কিছু মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি ঢাকা ও চট্টগ্রামের শোরুমগুলোতে পাওয়া যায়। আবার ফরমাশ জানিয়ে নির্দিষ্ট মডেলের গাড়ি আনানোর ব্যবস্থাও আছে। ছবি: সংগৃহীত

গাড়ি নিত্যদিনের চলার সঙ্গী তো বটেই, আবার নিজের রুচি ও পছন্দের প্রকাশও ঘটায়। রাস্তায় সাধারণ গাড়ি অনেক দেখা যায়। তবে বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম। উচ্চমূল্যের গাড়িগুলোতে মেলে আরামদায়ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। সঙ্গে থাকে আধুনিক প্রযুক্তি। অনেকের জন্য অবশ্য আভিজাত্যের প্রতীক। হাজারো গাড়ির মধ্যে আলাদা করে চেনানোর জন্যও অনেকে দামি এই গাড়িগুলো ব্যবহার করেন। গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে জার্মানির প্রতিষ্ঠানগুলো সচরাচর বিলাসবহুল গাড়ি তৈরি করে থাকে।

৫০ লাখ টাকার নিচে বিলাসবহুল গাড়ির মালিকানা মেলা কঠিন। এমন গাড়ির বাজারে দেশে রয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবেশক। বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, অডি, ভলভো, ল্যান্ড রোভার ও জাগুয়ারের ব্র্যান্ড নিউ বিলাসবহুল গাড়ি দেশের বাজারে পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিলাসবহুল গাড়ির বাজারের হালহকিকত।

বিএমডব্লিউ

অভিজাত গাড়ি কেনার চিন্তা করলে প্রথম সারির যে গাড়িগুলোর কথা মাথায় আসে, তার মধ্যে বিএমডব্লিউ অন্যতম। গত বছর বিলাসবহুল গাড়িতে প্লাগ ইন হাইব্রিড (পিএইচইভি) সমৃদ্ধ সেডান এবং স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি ভেহিকল (এসএভি) দেশের বাজারে প্রথম নিয়ে আসে বিএমডব্লিউর পরিবেশক এক্সিকিউটিভ মোটরস লিমিটেড। চলতি বছরেও সেডান গাড়িতে সেভেন সিরিজের নতুন একটি হাইব্রিড গাড়ি নিয়ে আসতে যাচ্ছে বিএমডব্লিউ। গাড়িটির মডেল ৭৪৫এলই। ইতিমধ্যে গাড়িটির ফরমাশ নেওয়া শুরু হয়েছে। তিন হাজার সিসির গাড়িটির দাম ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা থেকে শুরু। সেভেন সিরিজে রয়েছে আরও একটি পেট্রলচালিত গাড়ি। সমমূল্যের এই গাড়ির মডেল ৭৩০ এলআই। এ ছাড়া বিএমডব্লিউ ফাইভ সিরিজে মিলবে তিনটি সেডান কার। এক্সিকিউটিভ মোটরসের বিএমডব্লিউ ৫২০আই, ৫২০ডি এবং ৫৩০ই-এর রয়েছে রেডি স্টক, মানে চাইলে এখনই কেনে যাবে।

এসএভি ধরনের বিএমডব্লিউর ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার সিসি পর্যন্ত গাড়ি রয়েছে। বিএমডব্লিউ এক্স১, এক্স২, এক্স৩ এবং এক্স৫ গাড়িগুলো দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। নতুন একটি এসএভি বিএমডব্লিউ এক্স৭-এর জন্য আগাম ফরমাশ নেওয়া হচ্ছে। ৭৮ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মধ্যে বিলাসবহুল এই গাড়িগুলো কেনা যাবে। উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের কাছে এই গাড়িগুলোর চাহিদাও বেশ। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ১৫টির বেশি বিএমডব্লিউ গাড়ি বিক্রি হয়েছে।

আগামী বছর এক্সিকিউটিভ মোটরস চট্টগ্রামে নতুন শাখা চালু করতে চায়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন বিভাগের পরিচালক দেওয়ান মুহাম্মদ সাজিদ আফজাল বলেন, ‘বিএমডব্লিউ শুধু মানে এবং গুণে নয়, গ্রাহকসেবা দিতেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলাদেশে একমাত্র আমরাই বিএমডব্লিউর প্রতিটি গাড়িতে ৫ বছর বা ৬০ হাজার কিলোমিটার (যেটা আগে আসে) পর্যন্ত বাম্পার টু বাম্পার বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করছি। আমাদের এই সেবায় গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, যন্ত্রাংশ এবং মেরামত অন্তর্ভুক্ত। মোটকথা, গাড়ি কেনার পরের পাঁচ বছর গাড়ি নিয়ে বাড়তি কোনো চিন্তা নেই। নেই কোনো খরচ। নিশ্চিন্তে বিএমডব্লিউ গাড়ির সেবা প্রদানের জন্য আমাদের রয়েছে প্রশিক্ষিত কর্মী, মোবাইল টিম এবং যেখানে গাড়ির সমস্যা হবে সেখানে সেবা দেওয়ার জন্য বিএমডব্লিউ সার্ভিস কার।’

দেশে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির নীতিমালা প্রণয়ন হলে বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে আসার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন এক্সিকিউটিভ মোটরসের বিক্রয় পরিচালক এম এ মুত্তাহিদ।

মার্সিডিজ বেঞ্জ

গাড়ির পরিচয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের লোগো বেশ ভূমিকা রাখে। গাড়িতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম থাকুক বা না থাকুক, লোগো অবশ্যই থাকবে। একটি গোলাকার বৃত্তের মধ্যে তিন প্রান্তবিশিষ্ট একটি তারকা। ডেইমলারের নকশা করা লোগোটি মার্সিডিজ বেঞ্জের। বলা হয়ে থাকে, একই সঙ্গে স্থল, জল ও আকাশপথের বাহনের কর্তৃত্ব নির্দেশের জন্য তিনি এই লোগো বিশেষভাবে নকশা করেন। অটোমোবাইল প্রকৌশলী কার্ল বেঞ্জের হাত ধরে জার্মানির প্রথম সারির বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্সিডিজ বেঞ্জের দেশে একমাত্র পরিবেশক র‌্যাংকন মোটরস লিমিটেড।

দেশের বাজারে সেডান কারের মধ্যে বি, সি, ই, এস এবং সিএলএ ক্লাস ও এসইউভি শ্রেণির জিএলসি, জিএলই আর জিএলএস মডেলের গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। বিলাসবহুল এই গাড়িগুলো ১ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার সিসি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ হচ্ছে ই-ক্লাস। এই ক্লাসে নতুন একটি গাড়ি আসতে যাচ্ছে, যাতে থাকবে ই-১৮০ ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন দেড় লিটারের হবে। এ ছাড়া চলতি বছরে মার্সিডিজ বেঞ্জের অন্যতম এস ক্লাসের হাইব্রিড গাড়ি ৫৬০ইএল আসবে। শতভাগ বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি করার ব্যাপারেও মার্সিডিজ বেঞ্জ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকার মধ্যে মার্সিডিজ বেঞ্জের গাড়িগুলো পাওয়া যায়।

র‌্যাংকন মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সুলতানুজ্জামান বলেন, ‘গাড়ির জগতে মার্সিডিজ বেঞ্জ ১৩৩ বছর ধরে নির্ভরতার এক বিশ্বস্ত নাম। দেশে র‌্যাংকন মোটরস মার্সিডিজ বেঞ্জের যেকোনো গাড়িতে দুই বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে থাকে। বিলাসবহুল গাড়ির ক্রেতারা পছন্দের ক্ষেত্রে এই গাড়িগুলোকে প্রাধান্য দেন। গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে র‌্যাংকন মোটরস ফরমাশ অনুযায়ী গাড়ি বিক্রি করে থাকে। গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ঢাকা ও চট্টগ্রামে র‌্যাংকন মোটরসের সার্ভিস সেন্টার রয়েছে।’

অডি

মাত্র ১ হাজার সিসি গাড়ি। কিন্তু গাড়িটি এসইউভি। গাড়িটির সামনে অলিম্পিকের লোগোর মতো চারটি গোলাকার বৃত্ত, যা পরস্পর পরস্পরের অভ্যন্তরে জায়গা করে নিয়েছে। দৃষ্টিনন্দন লোগোটি জার্মানির অন্যতম আরেকটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অডির। ১ হাজার সিসির এই গাড়ির মডেল অডি কিউ টু। প্রোগ্রেস মোটরস ইমপোর্ট লিমিটেড দেশের বাজারে অডির একমাত্র পরিবেশক। প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে ১৯ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া গাড়িটির দাম ৬৭ লাখ টাকা। ছোটখাটো ক্রস ওভার গাড়িটি আপনার নজর কাড়বেই।

সেডান, ক্রস ওভার এবং এসইউভি এই তিন শ্রেণির অডির গাড়ি মিলবে দেশে। সেডান গাড়ির মধ্যে রয়েছে এ-থ্রি, এ-ফোর, এ-ফাইভ, এ-সিক্স এবং এ-এইটএল। এর মধ্যে এ-ফাইভ এবং এ-সেভেন মডেলের গাড়িটি স্পোর্টস সংস্করণের। এ-সিক্স এবং এ-সেভেন গাড়িগুলো ক্রেতাদের ফরমাশের ভিত্তিতে আমদানি করা হয়। ৫০ লাখ থেকে শুরু করে ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকার মধ্যে এই গাড়িগুলো পাওয়া যাবে। ১.২ থেকে ৩ লিটার ইঞ্জিনের গাড়িগুলো অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন।

ক্রস ওভারে কিউটু একটি মডেল থাকলেও এসইউভি বিভাগে অডির বেশ কয়েকটি গাড়ি দেশের বাজারে পাওয়া যায়। কিউথ্রি, কিউফাইভ, কিউসেভেন এবং কিউএইট মডেলের এসইউভিগুলো ১ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার সিসি পর্যন্ত টার্বোচার্জড ইঞ্জিনের। এই গাড়িগুলোর দাম ৭০ লাখ থেকে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিলাসবহুল এই গাড়িগুলোতে ডিআরএল, এলইডি হেডলাইট, প্যানারোমিক সানরুফ, লেদার সিট, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা, অডি এবং বিএনওর প্রিমিয়াম সাউন্ড সিস্টেম, দুই বা তিন জোনবিশিষ্ট শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রসহ সিট হিটার রয়েছে।

অডি সম্পর্কে প্রোগ্রেস মোটরসের বিক্রয় উপদেষ্টা সাফায়েত বিন তায়েব বলেন, ‘অডির রয়েছে নিজস্ব গ্রাহক সেবাকেন্দ্র। প্রতিটি অডি গাড়িতে আমরা দুই বছর পর্যন্ত সীমাহীন মাইলের বাম্পার টু বাম্পার বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করছি। অডি শুধু বিলাসবহুল গাড়ি নয়, আভিজাত্যের প্রতীকও বটে। উচ্চ মধ্যবিত্তদের ক্রয়সীমার মধ্যে গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে আমরা সেরা গাড়িগুলো দেশের বাজারে নিয়ে এসেছি। টেকসই এই গাড়িগুলো বছরের পর বছর ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।’

রাজধানীর তেজগাঁও লিংক রোডে বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী কেন্দ্র রয়েছে। সপ্তাহের সাত দিন ক্রেতাদের জন্য এই কেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত। প্রতিটি গাড়ি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার জন্য রয়েছে অভিজ্ঞ বিক্রয়কর্মী। পছন্দের গাড়িটিতে টেস্ট ড্রাইভ নেওয়ার সুবিধাও রয়েছে। বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে এই প্রদর্শনী কেন্দ্রগুলোতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন।

* গাড়ির বিক্রয়োত্তর সেবার বেলায় ‘বাম্পার টু বাম্পার’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়। এর অর্থ এক বাম্পার থেকে আরেক বাম্পার, মানে দাঁড়ায় পুরো গাড়ি। অর্থাৎ গাড়ির সবকিছু বিক্রয়োত্তর সেবার আওতায় পড়ে।