পেছনের ক্যামেরা সামনেও

গ্যালাক্সি এ৮০ ফোেনর লাইভ ফোকাস সুবিধা দিয়ে তোলা ছবি। এতে পটভূমি ঝাপসা হয়ে যায়
গ্যালাক্সি এ৮০ ফোেনর লাইভ ফোকাস সুবিধা দিয়ে তোলা ছবি। এতে পটভূমি ঝাপসা হয়ে যায়

যাঁরা সেলফি তুলতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য দুটি তথ্য দিয়ে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। প্রথমটি হলো স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৮০-এর সামনের দিকে কোনো ক্যামেরা নেই। শুনে ঘাবড়ে গেলেন? ভাবছেন, সামনের দিকে ক্যামেরা না থাকলে সেলফি তুলব কীভাবে! এবারে দ্বিতীয় তথ্যটি দিই—এই স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে ‘যাহা ব্যাক ক্যামেরা, তাহাই ফ্রন্ট ক্যামেরা’। ফোনের পেছনে একটি নয়, দুটি নয়, তিনটি ক্যামেরা আছে। সেলফি মোড চালু করলেই এই তিন ক্যামেরা ডিগবাজি খেয়ে সামনের দিকে চলে আসে! অতএব পেছনের ক্যামেরার তুলনায় সামনের ক্যামেরা দুর্বল বলে আফসোস করার প্রয়োজন নেই। ক্যামেরায় এই নতুনত্বই স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৮০-এর ইউএসপি (ইউনিক সেলিং প্রোপোজিশন)।

প্রশ্ন করতে পারেন, ‘ভাই, ক্যামেরা ডিগবাজি খায় বুঝলাম। কিন্তু ছবি কেমন তোলে?’ সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে ফোনটির অন্য বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া যাক। জানিয়ে রাখি, স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৮০-এর দাম ৭৭,৪৯০ টাকা। তবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৭৪,৪৯০ টাকায় পাওয়া যাবে।

আগে দর্শনদারি

স্যামসাং এ৮০ নেড়েচেড়ে দেখতে গিয়ে আমার এক বন্ধুর কথা মনে পড়ল। বেচারা খুব উঠে-পড়ে ওজন কমানোর মিশনে নেমেছে। নিয়ম করে জিমে যাচ্ছে, মেপে মেপে খাচ্ছে। দেখা হলে যদি বলি, ‘আরে! তুই তো বেশ শুকিয়ে গেছিস।’ সে মুখ গোমড়া করে বলে, ‘দেখতেই শুকনা লাগে। ওজন তো কমে না।’ স্যামসাং এ৮০-ও আমার সেই বন্ধুটির মতো। দেখতে ভীষণ স্মার্ট, স্লিম। সে তুলনায় ওজনে একটু ভারী মনে হলো।

.
.

ফোনটির নকশায় আভিজাত্যের যে ছাপ চোখে পড়ে, তা দামের সঙ্গে মানিয়েই যায়। সামনে, পেছনে দুদিকেই গরিলা গ্লাস। লম্বায় ৬.৭ ইঞ্চি হলেও, প্রস্থে খুব বেশি নয়। তাই ব্যবহার করে আরাম পাওয়া যায়। পেছনের দিকটা একটু পিচ্ছিল। সে হিসেবে নিরাপত্তার খাতিরে বাড়তি খাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে অবশ্য ফোনটির চমৎকার নকশা খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গোস্ট হোয়াইট, ফ্যান্টম ব্ল্যাক ও অ্যাঞ্জেল গোল্ড, সহজে বোঝার জন্য সাদা, কালো ও সোনালি—তিনটি রঙের গ্যালাক্সি এ৮০ বাজারে পাবেন।

২০: ৯ অনুপাতের সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লের পুরোটাজুড়ে আপনি ছবি-ভিডিও দেখতে পারবেন। বাড়তি কোনো বেজেল নেই বললেই চলে।

ভেতরে কী আছে

স্ন্যাপড্রাগন ৭৩০ জি, অক্টাকোর প্রসেসরের যথাযথ ব্যবহারের জন্য আছে ৮ জিবি র‌্যাম এবং ১২৮ জিবি জায়গা। বাড়তি কোনো মেমোরি কার্ড লাগানোর সুযোগ নেই, সম্ভবত প্রয়োজনও পড়বে না। দুটো সিম ব্যবহার করতে পারবেন। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ফোনটি জুতসই মনে হলো। কম্পিউটারের বদলে ফোনেই যাঁদেরকে অফিসের অধিকাংশ কাজ সারতে হয়, তাঁরা ভরসা রাখতে পারেন। নেটফ্লিক্স, ইউটিউব দেখার ক্ষেত্রে অপারেটিং সিস্টেম, র‌্যাম এবং ঝকঝকে ডিসপ্লে আপনাকে সাহায্য করবে। তবে জেনে রাখুন, স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৮০-তে হেডফোনের জন্য কোনো বাড়তি ৩.৫ এমএম স্লট নেই। সম্ভবত অ্যাপলের নতুন আইফোনের অনুকরণেই অন্যান্য স্মার্টফোন নির্মাতা আজকাল এই ‘দুঃসাহস’ দেখানোর ঝুঁকি নিচ্ছে। ৩৭০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি দৈনন্দিন কাজের জন্য মন্দ নয়। তবে গেমিংয়ের প্রতি যাঁদের ঝোঁক আছে, তাঁরা কতটুকু সন্তুষ্ট হবেন, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। দ্রুত চার্জের জন্য ইউএসবি সি টাইপ পোর্ট আছে।

ক্যামেরা কেমন

মূল ক্যামেরাটি ৪৮ মেগাপিক্সেলের। সঙ্গে ৮ মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা ছাড়াও আছে নতুন প্রযুক্তির টিওএফ (টাইম অব ফ্লাইট) ক্যামেরা। তিন ক্যামেরার সামঞ্জস্যে ছবির পরিধি বেশ বড় হয়ে যায়। দল বেঁধে ছবি তোলার জন্য কিংবা সুন্দর কোনো দৃশ্যের ‘ল্যান্ডস্কেপ’ ধারণের জন্য এই ক্যামেরা একদম জুতসই। তবে দিনের আলোয় ছবি যতটা ঝকঝকে, অল্প আলোতে পারফরম্যান্স ততটা ভালো নয়। নাইট মোড খুব একটা ভরসা করার মতো মনে হয়নি। ভিডিওর মান মন্দ নয়। যেহেতু সামনের দিকেও আপনি খুব ভালো ক্যামেরা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন, ভিডিও লগ (ভ্লগ) বা যেকোনো বেড়ানোর ভিডিও তৈরির ক্ষেত্রে সম্ভবত এ৮০ আপনাকে নিরাশ করবে না।