কত অবশিষ্ট থাকবে?

গণিতে ৯ একটি বেশ রহস্যময় সংখ্যা। বরিস এ কোরডেস্কি তাঁর ‘দা মস্কো পাজলস’ বইয়ে এ বিষয়ে চমৎকারভাবে লিখেছেন। এর কিছু আমরা জানি স্কুলের গণিত বই থেকেই। কিন্তু ৯ নিয়ে মজার কিছু তথ্য অনেকেই জানি না। তাঁরা কোরডেস্কির বইটি পড়তে পারেন। আমরা তো জানি কোনো সংখ্যা ৯ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য কি না, তা বের করার সহজ উপায় হলো প্রথমে সংখ্যার অঙ্কগুলোর যোগফল বের করি। এই যোগফল যদি ৯ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হয়, তাহলে পুরো সংখ্যাটি ৯ দিয়ে বিভাজ্য। ভাগফল যদি এক অঙ্কের বেশি হয় তাহলে তার অঙ্কগুলো আবার যোগ করতে হবে। এভাবে শেষ পর্যন্ত যোগফল ৯ হলে বুঝব পুরো সংখ্যাটি ৯ দিয়ে বিভাজ্য। যেমন ৯ × ৭৯৩৪ = ৭১৪০৬। এই সংখ্যাটি ৯ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য, কারণ সংখ্যাটি ৯-এর গুণিতক। এখন সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর যোগফল পরীক্ষা করে দেখি ৯ দিয়ে বিভাজ্যতার নিয়মটি খাটে কি না। অঙ্কগুলোর যোগফল = (৭+ ১ + ৪ + ০ + ৬) = ১৮। এর অঙ্কগুলোর যোগফল = (১ + ৮) = ৯। সুতরাং আমরা বলতে পারি ৭১৪০৬ সংখ্যাটি ৯ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য।

আরেকটি মজার ব্যাপার দেখুন। আমরা স্কুলে নামতা মুখস্থ করতাম। কিন্তু মুখস্থ না করেও শুধু হাতের আঙুল ব্যবহার করে আমরা ৯–এর নামতার হিসাব বলে দিতে পারি। প্রথমে দুই হাতের ১০টি আঙুল টেবিল মেলে ধরি। এর বাঁ পাশ থেকে শুরু করে ডান দিকে আঙুলগুলো যথাক্রমে ১, ২, ৩, ... ১০ হিসাবে চিহ্নিত করি। এখন ধরা যাক (৯ × ৮) = কত জানতে চাই। নামতার ভাষায় আমরা বলি ‘আট নং কত?’ চট করে এর উত্তর বের করার জন্য আমরা প্রথমে টেবিলে ছড়িয়ে রাখা আঙুলগুলোর মধ্যে ৮ নম্বর আঙুল অর্থাৎ ডান হাতের মাঝের আঙুলটি একটু উঁচুতে তুলে ধরব। এখন লক্ষ্য করব, এই আঙুলের বাঁ পাশে ৭ ও ডান পাশে ২টি আঙুল রয়েছে। এটাই উত্তর। ৭ ও ২-এ মিলে ৭২। মানে, প্রচলিত নামতার ভাষায় বলি আট নং ৭২।

৯-এর আরও মজার কিছু ব্যাপার দেখুন। মনে করি, দুটি সংখ্যার যোগফল বা বিয়োগফলকে ৯ দিয়ে ভাগ করলাম। তাহলে যে অবশিষ্ট থাকবে তা সংখ্যা দুটির প্রতিটিকে ৯ দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত অবশিষ্টগুলোর যোগফল বা বিয়োগফলকে ৯ দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত অবশিষ্টের সমান হবে। যেমন, (২৪ + ২৩) = ৪৭। একে ৯ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকবে ২। আবার (২৪ - ২৩) = ১। একে ৯ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকবে ১। অন্যদিকে, ২৪ ও ২৩–কে আলাদাভাবে ৯ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকবে যথাক্রমে ৬ ও ৫। এদের যোগফল ১১ ও বিয়োগফল ১। এই দুটি সংখ্যাকে ৯ দিয়ে ভাগ করলে যথাক্রমে সেই ২ এবং ১-ই থাকবে।

দুইটি সংখ্যার গুণফলকে ৯ দিয়ে ভাগ করলে যে অবশিষ্ট থাকবে, তা সংখ্যা দুটিকে আলাদাভাবে ৯ দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত ফল দুটির গুণফলকে ৯ দিয়ে ভাগ করলেও একই অবশিষ্ট পাওয়া যাবে। যেমন ৭ ও ২৩–এর গুণফল ১৬১। একে ৯ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকবে ৮। আবার ৭ ও ২৩–কে আলাদাভাবে ৯ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকবে যথাক্রমে ৭ ও ৫। এদের গুণফল ৩৫। একে ৯ দিয়ে ভাগ করলেও সেই একই সংখ্যা ৮ অবশিষ্ট থাকবে।

ভাগের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার
আবার দেখুন, একটি সংখ্যা ও তার অঙ্কগুলোর যোগফলের পার্থক্য সব সময় ৯ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। যেমন, ৩৭৬৯ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর যোগফল = (৩ + ৭ + ৬ + ৯) = ২৫। এখন (৩৭৬৯ - ২৫) = ৩৭৪৪। এটি ৯ দিয়ে বিভাজ্য, কারণ এর অঙ্কগুলোর যোগফল = (৩ + ৭ + ৪ + ৪) = ১৮। এর অঙ্কগুলোর যোগফল = (১ + ৮) = ৯।

এ সপ্তাহের ধাঁধা
শুধু কয়েক মিনিট চিন্তা করে বলুন তো, পাঁচ অঙ্কের দুটি ভিন্ন সংখ্যার অঙ্কগুলো যদি অভিন্ন হয়, তাহলে বড় সংখ্যাটি থেকে ছোট সংখ্যাটি বিয়োগ করে ৯ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট কত থাকবে?
খুব সহজ। অনলাইনে মন্তব্য আকারে অথবা [email protected] ই-মেইলে আপনাদের উত্তর পাঠিয়ে দিন। সঠিক উত্তর দেখুন আগামী রোববার অনলাইনে।

গত সপ্তাহের ধাঁধার উত্তর
ধাঁধাটি ছিল এ রকম: এক নজর দেখেই বলুন তো ০ থেকে ৮ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো, অর্থাৎ ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ এই নয়টি সংখ্যার মধ্যে কোন সংখ্যাটির আগের সংখ্যাগুলোর যোগফল এবং পরের সংখ্যাগুলোর যোগফল সমান?

উত্তর
সংখ্যাটি ৬। এর আগের ০, ১, ২, ৩, ৪ ও ৫–এর যোগফল = ১৫ এবং ৬-এর পরের ৭ ও ৮ এর যোগফলও ১৫। তাই প্রদত্ত শর্ত অনুযায়ী নির্ণেয় সংখ্যাটি ৬।

কীভাবে উত্তর বের করলাম
যেহেতু ০ থেকে ৮ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল = (০ + ৮) × ৯ ÷ ২ = ৩৬, তাই এমন একটি সংখ্যা বের করতে হবে যার আগের ও পরের সংখ্যাগুলোর যোগফল ৩৬–এর অর্ধেক ১৮–এর বেশি হবে না। কারণ, তাহলে দুই অংশের যোগফল ৩৬–এর বেশি হয়ে যাবে এবং সে ক্ষেত্রে অংশ দুটির প্রতিটির যোগফল সমান হতে পারবে না। এখন ৫ পর্যন্ত যোগ করলে যেহেতু ১৫ হয় এবং এরপর ৬ যোগ করলে ১৮-এর বেশি হয়ে যায়, তাই ৬–এর আগে ও পরের সংখ্যাগুলো হিসাব করে দেখা যেতে পারে। দেখা গেল উভয় অংশের যোগফল সমান। তাই এটাই উত্তর।

বীজগণিতের নিয়ম অনুযায়ীও এই সমস্যার সমাধান বের করা যায়। ধরে নিই মোট পদসংখ্যা ‘ক’। এই ধারার মধ্যে ‘খ’ এমন একটি সংখ্যা যার আগের ও পরের সংখ্যাগুলোর যোগফল সমান। তাহলে আমরা প্রথমে ০, ১, ২, ... ক পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল বের করব। এরপর ০ থেকে (খ - ১) পর্যন্ত এবং (খ + ১) থেকে অবশিষ্ট সংখ্যাগুলোর যোগফল বের করব। এ দুটি সমান হবে। এই সমীকরণ থেকে আমরা খ-এর মান বের করতে পারি।

এই পদ্ধতিতে আমরা বের করতে পারি, ১ থেকে ৪৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর মধ্যে ৩৫ হলো সেই সংখ্যা যার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংখ্যাগুলোর যোগফল সমান। অর্থাৎ (১ + ২ + ৩ + ....+ ৩৪) = ৫৯৫ = ( ৩৬ + ৩৭ + ৩৮ + ... + ৪৯)।

আব্দুল কাইয়ুম, সম্পাদক, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা