১০ বছরেই গ্রিনহাউস গ্যাস অর্ধেক কমানো সম্ভব, উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অর্ধেক করার পরিকল্পনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। রয়টার্সের ফাইল ছবি
২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অর্ধেক করার পরিকল্পনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। রয়টার্সের ফাইল ছবি

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আচরণগত প্রবণতা সামান্য পরিবর্তন করলে আগামী দশকের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ অর্ধেক করা যেতে পারে। নাগরিক সমাজের জোরদার আন্দোলনের মাধ্যমে এ পরিবর্তন আনা যেতে পারে বলে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের একটি আন্তর্জাতিক গ্রুপের ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌর ও বায়ুশক্তি এখন অনেক অঞ্চলে জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় সস্তা। কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপরীতে সৌরশক্তি তা করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অর্ধেক হয়ে যাবে।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন এবং বেসরকারি খাতের বিভিন্ন সংস্থা এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, যানবাহনে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির ব্যবহার টিকিয়ে রেখে এক দশকের মধ্যে এ ধরনের গাড়ির সংখ্যা ৯০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এতে যানবাহনকেন্দ্রিক গ্যাসের পরিমাণ বিপুল হারে কমে যাবে। একই সঙ্গে বন উজাড় বন্ধ করে ভূমি ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে পারলে কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করা যেতে পারে।

প্রতিবেদন লেখকেরা বলছেন, যেকোনো পরিবর্তনের মূল কথা ক্রমবর্ধমান সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। এ আন্দোলনের মাধ্যমে জলবায়ু বিপর্যয়ের বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে। জনসাধারণের আচরণগত পরিবর্তন, যেমন: অতিরিক্ত মাংস গ্রহণ, বর্জন এবং সরকার ও অন্যান্য সংস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে নাগরিক আন্দোলন পরবর্তী দশকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারে।

জাতিসংঘের সাবেক শীর্ষ জলবায়ু কর্মকর্তা ক্রিস্টিয়ানা ফিগুয়েরেস বলেছেন, ‘সমস্ত প্রমাণ দেখে মনে হচ্ছে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন একই সঙ্গে চলছে। আমরা এখন বলতে পারি, আগামী দশকে ইতিহাসের দ্রুততম অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখার সম্ভাবনা রয়েছে।’

বিশেষজ্ঞরা ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্প শনাক্ত করেছেন, যা প্রয়োজনীয় হারে গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করতে পারে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে শুরু করে খাদ্য উৎপাদন, শহরের নকশা এবং শিপিংয়ের মতো আন্তর্জাতিক পরিবহনব্যবস্থায় পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ২০৩০ সালের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

পসডাম জলবায়ু প্রভাব গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক জোহান রকস্ট্রোম বলেছেন, পরিবর্তনের মাত্রা নজিরবিহীন হলেও গতির মাত্রা তা নয়। একে এখন সময়ের দাবি বলা যেতে পারে। তবে ব্যবসা এবং পুরো শিল্পক্ষেত্রে ১০ বছরেরও কম সময়ে অনেক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে।

গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর ক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলন অগ্রাধিকার পাবে। কারণ, গ্রাহকেরা যাদের পণ্য কেনেন, সে সংস্থাগুলোর ওপর তাঁরা চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। তা ছাড়া জনগণের সমর্থন পেলে রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষে সাহসী নীতি গ্রহণ করা সহজ হয়ে যায়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়েসহ বিভিন্ন দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে।

শীর্ষস্থানীয় জলবায়ুবিজ্ঞানীরা গত বছরের প্রতিবেদনে জানিয়েছিলেন, তাপমাত্রা প্রাক্‌–শিল্পযুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে সারা পৃথিবীতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। চলতি শতাব্দীর মধ্যভাগে কার্বন নিঃসরণকে শূন্যের কাছাকাছি হ্রাস করতে পারলে এ পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।