ফের 'ফেসবুক ডিলিট' করার আহ্বান

হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাক্টন। ছবি: রয়টার্স
হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাক্টন। ছবি: রয়টার্স

ফেসবুক থেকে দ্রুত লগআউট করে তা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাক্টন। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এর আগে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেছেন এ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। সম্প্রতি ‘উইয়ার্ড’ ম্যাগাজিনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সম্মেলনে তিনি নতুন করে ফেসবুকের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের কথা জানালেন।

২০১৮ সালের মার্চ মাসে হ্যাশট্যাগ ডিলিট ফেসবুক নামে টুইটারে কর্মসূচি চালু করেছিলেন অ্যাক্টন। চলতি বছরের মার্চ মাসেও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি ফেসবুক মুছে ফেলার আহ্বান জানান।

স্ট্যানফোর্ডের অ্যালামনাই ব্রায়ান অ্যাক্টন ও ইউক্রেনের অভিবাসী কউম ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিষ্ঠা করে ২০১৪ সালে তা ১ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারে ফেসবুকের কাছে বিক্রি করেন।

২০১৭ সালে ব্রায়ান অ্যাক্টন ফেসবুক ছাড়েন। এরপর থেকে তিনি প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের সমালোচনা করে আসছেন। হোয়াটসঅ্যাপকে বাণিজ্যিকীকরণের বিপক্ষে ছিলেন কউম ও অ্যাক্টন।

গত মার্চে ব্রায়ান অ্যাক্টন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কম্পিউটার সায়েন্স ১৮১’ নামের একটি স্নাতক কোর্সের ক্লাসে বক্তা হিসেবে আসেন। তাঁর সঙ্গে সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক আরেক ফেসবুক কর্মী ইলোরা ইজরানি। যিনি শি++ নামের একটি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।

নিজ বক্তৃতায় ব্রায়ান অ্যাক্টন কেন ফেসবুকের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে কেন নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন, তা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি গ্রাহকের তথ্যের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ফেসবুকের তীব্র সমালোচনা করেন। ফেসবুক থেকে ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁসের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর তিনি ওই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওই কর্মসূচি শুরু করেন, যা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই সময় থেকেই ফেসবুক স্বীকার করে যে তাদের ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে, যা নির্বাচনী প্রচারে কাজে লাগানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।

‘ডিলিট ফেসবুক’ নিয়ে জনসম্মুখে এভাবে প্রচারের কারণ সম্পর্কে হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা বলেন, একটা সময় ফেসবুকের বিরুদ্ধে না বলার জন্য চাপ ছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি, ফেসবুকের মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপকে বড় লাভের আশায় ফেসবুকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ছিল। হোয়াটসঅ্যাপে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ৫ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ফেসবুক।

হোয়াটসঅ্যাপ থেকে অর্থ আয় করতে ব্যবহারকারীদের বছরে ১ মার্কিন ডলার সাবসক্রিপশন ফি নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি ও আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যান কউম। এতে প্রতি বছর ১ কোটি মার্কিন ডলার আয় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ফেসবুকের পক্ষ থেকে আরও দ্রুত বেশি অর্থ আয় করার তাড়া ছিল।

গত বছরের মে মাসে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, হোয়াটসঅ্যাপের পরিকল্পনা ফেসবুকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কউম তা মেনে নিতে পারছিলেন না। কউম অভিযোগ করেন, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকে নেওয়া হচ্ছে এবং হোয়াটসঅ্যাপের এনক্রিপশনের মান দুর্বল করে ফেলা হচ্ছে। এত দিন হোয়াটসঅ্যাপের হয়ে তথ্য সুরক্ষা ও কাজের স্বাধীনতা ফেসবুকের কাছ থেকে পাচ্ছিলেন তাঁরা। ফেসবুকের কাছে বিক্রি হওয়ার আগে তথ্য সুরক্ষার শর্তও জুড়ে দিয়েছিলেন।